সম্পূরক কর মওকুফ করলে আমাদের জন্য উপকার হবে

কে এম জিয়াউল ইসলাম , চীফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মেঘনা সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড

কিছুদিন আগেও গ্যাস সংকটের কারণে সিরামিক কারখানাগুলোয় উৎপাদন ব্যাহত হয়। কোনো কোনো কারখানায় উৎপাদন বন্ধও ছিল। বর্তমানে গ্যাসের সংকট অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। এখন গ্যাসের চাপ কেমন আর উৎপাদন কতটা নির্বিঘ্নে সম্ভব হচ্ছে?

মুহূর্তে গ্যাসের সংকট কাটিয়ে উঠেছে। সংকটের সময় ইন্ডাস্ট্রি প্রচণ্ডভাবে ভোগান্তির শিকার হয়েছে। সে সময় আমরা সরকারকে বলেছিলাম গ্যাসের যেকোনো মূল্যই আমরা মেনে নেব। তবে আমাদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস লাগবে। সাপোর্টটা হয়তো ততটা আসেনি। তার পরও যেটা এসেছে, আলহামদুলিল্লাহ। বাজেটে যদি সরকার বর্তমান বাজারের সঙ্গে গ্যাসের দাম সমন্বয় করে, তাহলে সেটা আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে। গ্যাসের চাপ কিছু কিছু জায়গায় হয়তো কম আছে, তবে বেশির ভাগই ঠিক আছে।

এবারের বাজেটে সরকারের কাছে আপনাদের দাবি কী?

আমরা দুই জায়গায় কর দিয়ে থাকি। একটা হচ্ছে ভ্যাট, আরেকটা হচ্ছে সম্পূরক কর। বিলাসবহুল পণ্যের ক্ষেত্রে সম্পূরক কর দিতে হয়। কিন্তু টাইলস এখন আর বিলাসপণ্য নয়, এটি এখন প্রয়োজন। সেই বিবেচনায় সরকার আমাদের সম্পূরক করটা মওকুফ করতে পারে। তাহলে আমাদের জন্য উপকার হবে। তবে ট্যাক্সটা অন্য কোথায় রিকভার করবে সেটিও সরকারকে চিন্তা করতে হবে। আমরা যখন কাঁচামাল আমদানি করি, তখন আমাদের ট্যাক্স বা ডিউটি দিতে হয়। সেখানেও যদি সরকার আমাদের কিছুটা সহায়তা দেয়, তাহলে আমাদের প্রবৃদ্ধিটা আরো ভালো হতো।

একটা সময় দেশের মোট চাহিদার ৯৯ শতাংশই বিদেশী সিরামিকের দখলে ছিল। বর্তমানে এটি আড়াআড়িভাবে বদলে গেছে। এখন অভ্যন্তরীণ বাজারের ৯০ শতাংশের বেশি সিরামিক পণ্য দেশেই তৈরি হচ্ছে। তার পরও সিরামিক পণ্য আমদানি কীভাবে দেখছেন?

দেশে যে উৎপাদন সেটি গত তিন বছরে ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার আগেও যে এই মার্কেটটা কম ছিল সেটি আমি বিশ্বাস করি না। ফলে নতুন কোনো উৎপাদন এলে, বিনিয়োগ এলে মার্কেটে কোনো প্রভাব পড়বে না। এটা হচ্ছে স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে। চাহিদার ১০-১১ শতাংশ এখন আমদানি হচ্ছে। এটা সাধারণত ২০-২৫ শতাংশ থাকে। বর্তমানে এলসি করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে ডলারের সংকটের কারণে। গত ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইন্ডাস্ট্রিতে কখনো প্রবৃদ্ধি কমে যায়নি। সবসময় বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি না যে আমদানি হলে এখানে স্থানীয় উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে ডিজাইনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমি বলব দেশে প্রতিটি কোম্পানি আন্তর্জাতিক মানের টাইলস তৈরি করে। যেকোনো কোম্পানি আন্তর্জাতিক বাজারে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। ডিজাইনের বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে বাংলাদেশ কোনো অংশে পিছিয়ে নেই।

সম্প্রতি দেশের সিরামিক খাতের রফতানি অনেক কমেছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

সিরামিক খাতে সবচেয়ে বেশি রফতানি হচ্ছে টেবিলওয়্যার। টেবিলওয়্যার আমরা একচেটিয়া রফতানি করি। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের টেবিলওয়্যারের সুনাম রয়েছে। কভিডের পরে দেশে টেবিলওয়্যারের অকল্পনীয় ক্রয়াদেশ এসেছে। প্রবৃদ্ধি কমেছে সেটি বলব না। কারণ আমরা যেহেতু মূলত রফতানি করি ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে, সেখানে কিছুটা মন্দা ভাব চলছে। সেখানে বাংলাদেশের টেবিলওয়্যার কিন্তু বিলাসপণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয় রফতানি প্রবৃদ্ধি কম হওয়াটা সাময়িক। এটা দ্রুতই কেটে যাবে।

দেশে উৎপাদিত সিরামিক পণ্য দেশের মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে? ভোক্তারা কতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে দেশীয় সিরামিক পণ্যে?

আমার ভোক্তারা অনেকেই পুনরায় ক্রয়াদেশ দিয়েছে টাইলসের জন্য। তারা বলছে ফ্রেশের টাইলস মানসম্পন্ন। এর মানে বোঝা যাচ্ছে অন্য কোম্পানির পণ্যও মানের দিক থেকে ভোক্তাদের পছন্দের। ফলে দেশীয় পণ্যের ওপর তাদের আস্থা এসেছে। মানুষের আস্থা তৈরি করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

সিরামিক খাতে বাংলাদেশ কতটা পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরি করতে পেরেছে?

বাংলাদেশের মডার্ন সিরামিক কারখানা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। আগে আমরা যে গ্যাস ব্যবহার করতাম, সেখানে কিছু অপচয় হতো। মডার্ন সিরামিক কারখানায় সেটি হয় না। শতভাগ রিসাইকেল হয়, পরিবেশে যায় না। এছাড়া যখন টাইলস তৈরি করা হয় তখন পাউডার করা হয়। ফলে পাউডারটা বাতাসে উড়তে থাকে। বর্তমানে মডার্ন কারখানাগুলোতে সেটি ৯০ ভাগ রিসাইকেল করা হয়। এতে দুইটা সুবিধা, আমার পরিবেশ সুরক্ষা পাচ্ছে এবং কোনো অপচয় হচ্ছে না। অন্যদিকে যে পানি ব্যবহার করা হয়, সেটিতে কেমিক্যাল থাকে না। এছাড়া ফ্রেশ সিরামিক কোনো রকম ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে না। ভূ-উপরিভাগ থেকে পানি নিয়ে সবকিছু করে। তারপর সেটি আবার ভূ-উপরিভাগেই ছেড়ে দিই। এতে কোনো কেমিক্যালও থাকে না। ফলে মডার্ন সিরামিক কারখানা অবশ্যই পরিবেশবান্ধব।

বর্তমানে ডলার সংকট এবং এলসি জটিলতার ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানিতে কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কিনা?

কিছু সমস্যায় তো পড়তে হচ্ছে। তবে ম্যানেজ করছি। ডলার পাওয়াটা আসলেই কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। একটা কথাই বলব, দেশ যখন সংকটে থাকে, তখন সবাইকেই কিছু না কিছু ধৈর্য ধরতে হয়।

দাম কম দেখিয়ে অনেক সময় আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করা হয়। কর ফাঁকি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে বিদেশী পণ্যের সঙ্গে দেশীয় উৎপাদকদের কোনো রকম অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হয় কিনা?

মুহূর্তে না। কারণ সরকার বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। তবে আগামী তিন বছর পর বাজার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। তখন সমস্যা থাকবে না। তার পরও আমি বলব আমদানি থাকতে হবে। আমদানি কিছু না কিছু না থাকলে স্থানীয় বাজার বড় হয় না। তবে স্থানীয় উৎপাদকরা অনেক বেশি কর দেয় সরকারকে। সেজন্যই স্থানীয় উৎপাদকদের সহায়তা দেয়া উচিত। দেশের স্বার্থেই সহায়তা দিতে হবে।

সিরামিক খাতকে টেকসই করতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন?

আমরা যদি সহজভাবে চিন্তা করি, সরকার কতটুকু খাত থেকে কর পায়? কতটা বিনিয়োগ আছে? কতটা কর্মসংস্থান হচ্ছে? এসব বিবেচনায় নিয়ে সরকার খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়তা করে, সেই নীতিটাই আমার ভালো মনে হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট করে আমার জন্য বলা মুশকিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন