মাসরুর আরেফিন , ভাইস
চেয়ারম্যান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড
এরই মধ্যে
আমরা আগামী
অর্থবছরের বাজেটের রূপরেখা জেনেছি। বিশাল অংকের
যে বাজেট
প্রণয়ন করা
হচ্ছে, সেটি
বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ কী দেখছেন?
২০২৩-২৪
অর্থবছরে
৬
দশমিক
৫
শতাংশ
জিডিপি
প্রবৃদ্ধির
লক্ষ্যমাত্রা
নিয়ে
প্রস্তাবিত
বাজেটের
প্রাথমিক
আকার
ধরা
হচ্ছে
প্রায়
৭
লাখ
৬০
হাজার
কোটি
টাকা।
এ
বাজেটের
প্রধান
চ্যালেঞ্জ
হলো
বিদ্যুৎ-সার-কৃষি
ইত্যাদি
খাতে
ভর্তুকি
দিয়ে
যাওয়া।
সরকারের
নেয়া
বিদেশী
ও
দেশী
ঋণ
এবং
সঞ্চয়পত্রের
সুদ
বাবদ
বিরাট
ব্যয়
অব্যাহত
রাখার
পাশাপাশি
কর
আদায়
বাড়ানো।
রাজস্ব
বা
কর-ভ্যাট
ইত্যাদি
আয়ের
লক্ষ্যমাত্রা
হচ্ছে
৫
লাখ
কোটি
টাকা।
ঘাটতি
বাজেট
দাঁড়াবে
২
লাখ
৬০
হাজার
কোটি
টাকা,
যা
জিডিপির
৫
দশমিক
৩
শতাংশ।
সরকার
এ
ঘাটতি
অর্থায়নের
জোগান
দেবে
তিন
জায়গা
থেকে।
এর
মধ্যে
বিদেশ
থেকে
১
লাখ
কোটি
টাকা,
ব্যাংক
খাত
থেকে
১
লাখ
৩৬
হাজার
কোটি
টাকা,
আর
সঞ্চয়পত্র
বিক্রি
থেকে
২৪
হাজার
কোটি
টাকা
নেয়া
হবে
বলে
জেনেছি।
বাজেটে
এডিপির
আকার
ধরা
হচ্ছে
২
লাখ
৬৩
হাজার
কোটি
টাকা।
আগামী
অর্থবছরে
সবচেয়ে
বেশি
ব্যয়
হবে
ভর্তুকি
ও
সুদ
বাবদ।
গত
বছরের
তুলনায়
ভর্তুকি
ও
সুদ
খাতে
কমপক্ষে
১৩-১৪
শতাংশ
ব্যয়
বাড়বে।
এই
মানি
সাপ্লাই
বাড়ার
প্রসঙ্গেই
মূল্যস্ফীতির
কথা
আসে।
এ মুহূর্তে
দেশের
অর্থনীতির
বড়
সংকট
হলো
ডলারের
জোগান
বৃদ্ধি
করতে
পারা
বা
না
পারা
এবং
মূল্যস্ফীতির
লাগাম
টানতে
পারা
বা
না
পারা।
দেশের
সামষ্টিক
অর্থনীতিতে
এক
ধরনের
অস্থিরতা
বিরাজ
করছে।
এ
পরিস্থিতিতে
নতুন
অর্থবছরের
বাজেটে
মূল্যস্ফীতির
ওপর
সবচেয়ে
বেশি
গুরুত্ব
দেয়া
উচিত।
কিন্তু
বাজেট
তো
আপাত
চোখে
দেখছি
অন্য
দিকে
যাচ্ছে।
একদিকে
আমরা
সুদহার
সে
রকম
বাড়াচ্ছি
না,
অন্যদিকে
টাকা
ছাপানো
হচ্ছে
বা
মানি
সাপ্লাই
বাড়ানো
হচ্ছে,
অথচ
ক্ল্যাসিক্যাল
অর্থনীতির
সংজ্ঞা
মতে
সেটা
কমানোর
কথা।
অবশ্য এটা
নির্বাচনী
বছরের
প্রভাব
কিনা,
আমি
জানি
না।
আবার
এমনও
হতে
পারে,
বর্তমান
বৈদেশিক
মুদ্রা
সংকটের
কারণে
আমরা
কেন্দ্রীয়
ব্যাংক
থেকে
ডলার
কিনতে
বাধ্য
হচ্ছি,
আমাদের
টাকা
চলে
যাচ্ছে
ডলার
কেনায়;
এখন
সে
টাকা
বাজারে
ফেরত
না
এলে
কেন্দ্রীয়
ব্যাংক
বাজারে
আরেক
ধরনের
ভয়াবহ
তারল্য
সংকট
তৈরি
হওয়ার
ভয়
পাচ্ছে।
হয়তো
এ
চিন্তা
থেকেই
মানি
সাপ্লাই
বাড়ানো
হচ্ছে।
মানুষের
হাতে
পণ্য
ও
সেবা
কেনার
টাকা
যেন
থাকে,
সরকার
ও
কেন্দ্রীয়
ব্যাংক
হয়তো
সেদিকটা
নিয়ে
বেশি
ভাবছেন।
নতুন বাজেটে ব্যাংক খাতের
জন্য সুনির্দিষ্ট কোন কোন
প্রস্তাব আশা
করছেন?
বাংলাদেশে ব্যাংকের
করপোরেট
করহার
প্রতিবেশী
দেশের
তুলনায়
বেশি।
যেমন
ভারতে
৩০
শতাংশ,
পাকিস্তানে
২৯,
নেপালে
৩৫
ও
চীনে
১৫
শতাংশ।
অথচ
আমাদের
এখানে
সেটা
৩৭
দশমিক
৫
শতাংশ।
আমি
মনে
করি,
করপোরেট
করহার
কমানো
উচিত।
পরিচালন
মুনাফা
থেকে
ট্যাক্স
দেয়ার
পরে
ব্যাংক
মন্দঋণের
বিপরীতে
প্রভিশন
রাখে,
যা
ব্যাংকের
জন্য
একটা
খরচ।
সেই
মন্দঋণ
অবলোপন
করার
পর
কর
অফিসে
আগে
দেয়া
কর
সমন্বয়
করা
হয়।
ক্ষেত্র
বিশেষে
সেটা
একটা
ঝামেলা।
মন্দঋণের
বিপরীতে
রাখা
প্রভিশনকে
শুরুতেই
ব্যয়
হিসেবে
বিবেচনা
করা
উচিত।
বাজেটে
সে
ঘোষণা
থাকা
দরকার।
বৈদেশিক বাণিজ্যের
১৪
বিলিয়ন
ডলারের
ঘাটতি
কমাতে
রফতানি
বাড়ানোর
পাশাপাশি
রফতানি
খাত
বহুমুখীকরণের
জন্য
বাজেটে
বরাদ্দ
থাকা
আবশ্যক।
ঋণখেলাপিদের
সম্পদ
ও
সেবা
ক্রয়-বিক্রয়
ও
জীবনযাপন
নিয়ে
এবারের
বাজেটে
কিছুটা
হলেও
ঘোষণা
থাকা
দরকার।
না
হলে
তো
ঋণখেলাপি
হওয়ার
ব্যাপারে
কারও
মধ্যেই
কোনো
উদ্বেগ
থাকছে
না।
দীর্ঘদিন থেকেই
আপনারা সেবার
বিপরীতে সীমাতিরিক্ত ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করা
হচ্ছে বলে
অভিযোগ করে
আসছেন। আগামী
বাজেটে এ
বিষয়ে আপনাদের প্রত্যাশা কী?
ব্যাংকে টাকা
জমা
রাখলে
গ্রাহককে
ভ্যাট
দিতে
হয়।
ভ্যাট
ও
ট্যাক্সের
কারণে
অনেক
গ্রাহক
টাকা
জমা
রাখতে
আগ্রহ
হারিয়ে
ফেলেন।
ভ্যাট,
ট্যাক্স
ও
আবগারি
শুল্কের
চাপে
গ্রাহকরা
যেন
বিরক্ত
না
হন,
সেজন্য
বাজেটে
বিষয়টা
সহজ
করা
উচিত।
এতে
অর্থনৈতিক
কর্মকাণ্ড
বেগবান
হবে,
অন্তর্ভুক্তিমূলক
ব্যাংকিং
কার্যক্রম
বাড়বে,
দীর্ঘমেয়াদে
আরো
বেশি
মানুষকে
ব্যাংকিং
চ্যানেলে
আনা
যাবে।
সঞ্চয়কারীদের
সুদের
আয়ের
ওপর
অনেক
দেশেই
কর
দিতে
হয়
না।
যেমন
ভিয়েতনাম।
তারা
ব্যাংক
আমানত,
জীবনবীমা
এবং
সরকারি
বন্ড
থেকে
সুদ
আয়ের
ওপর
কোনো
ট্যাক্স
নেয়
না।
ভারতে
সঞ্চয়
থেকে
১২
হাজার
টাকা
পর্যন্ত
সুদ
আয়ের
ওপর
কর
ছাড়
দেয়।
যুক্তরাজ্যে
সঞ্চয়
থেকে
আয়
হওয়া
সুদ
৫
হাজার
পাউন্ড
পর্যন্ত
করমুক্ত।
কিন্তু
আমাদের
দেশে
সব
আয়ের
ওপরই
কর
পরিশোধ
করতে
হচ্ছে।
তারল্য নিয়ে
ব্যাংক খাত
চাপে আছে।
অন্যদিকে সরকারের ঘাটতি বাজেটও স্ফীত হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে
ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ালে কী
প্রভাব পড়বে?
সামগ্রিকভাবে দেশের
ব্যাংক
খাতে
এ
মুহূর্তে
তারল্য
সংকট
নেই।
তবে
দু-একটা
ব্যাংকে
থাকতে
পারে
বা
আছে।
খাত
হিসেবে
ব্যাংকে
এখন
১
লাখ
৩৬
হাজার
কোটি
টাকার
অতিরিক্ত
তারল্য
রয়েছে।
আবার
এটাও
সত্যি,
ব্যাংক
খাতে
তারল্য
সংকট
না
থাকলেও
উদ্বৃত্ত
তারল্য
কমে
আসছে।
ব্যাংকার হিসেবে আমারও চিন্তা হয়, এ-যাবত কালের সর্বোচ্চ টাকা আমাদের খাত থেকে ঋণ করে নেয়া হবে, সেটা বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ ও প্রবৃদ্ধিকে বাধা দেবে কিনা। সরকারি খাত টাকা নিয়ে অবকাঠামো বানায়। সে অবকাঠামো বেসরকারি খাত বা ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করেন। ধরেন সরকার ১০টা ইপিজেড বানাল, কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করার প্রয়োজনীয় ঋণ আমরা কোনো ব্যবসায়ীকে দিতে পারলাম না, কারণ আমাদের হাতে টাকা নেই। তাহলে সরকারি অবকাঠামো দিয়ে কী হবে? সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া বাড়ালে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার যদি ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক উৎস থেকে কম মূল্যে অর্থের জোগান বাড়াতে পারে, তাহলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।
দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা এখনো কমেনি। এ সংকট
কাটাতে বাজেটে প্রত্যাশা কী?
২০০০ সালের
পর
মার্কিন
ডলার
এখন
সবচেয়ে
শক্তিশালী।
গ্লোবাল
স্টাডি
বলে,
ডলারের
বিপরীতে
কোনো
দেশের
মুদ্রা
১০
শতাংশ
দাম
হারালে
মূল্যস্ফীতি
বাড়ে
১
শতাংশ।
আমাদের
এখানে
ডলারের
দাম
৮৬
থেকে
বেড়ে
হয়েছে
১০৮
টাকা।
মানে
টাকার
২৫
শতাংশ
অবমূল্যায়ন
হয়েছে।
এপ্রিলে
দেশের
মূল্যস্ফীতি
বেড়ে
দাঁড়িয়েছে
৯
দশমিক
২৪
শতাংশ।
ডলারের এ
সংকট
কাটাতে
রফতানি
ও
রেমিট্যান্স
আয়
বাড়াতেই
হবে।
এপ্রিলে
মোট
রেমিট্যান্স
ছিল
১
দশমিক
৬৮
বিলিয়ন
ডলার,
যা
আগের
মাসের
তুলনায়
প্রায়
৩৫০
মিলিয়ন
ডলার
কম।
পুরো
রফতানি
ও
রেমিট্যান্স
আয়
দেশে
আনার
ব্যবস্থা
করতে
হবে।
একটা
স্টাডিতে
পড়েছি,
বাংলাদেশে
যে
রেমিট্যান্স
আসে
তার
মাত্র
৫১
শতাংশ
আসে
বৈধ
উপায়ে,
বাকি
৪৯
শতাংশ
রেমিট্যান্স
নাকি
হুন্ডির
মাধ্যমে
আসে।
বৈধ
চ্যানেলের
মাধ্যমে
রেমিট্যান্সের
প্রবাহ
বাড়াানোর
দিকে
মনোযোগ
দেয়া
উচিত।
রিজার্ভ থেকে
ডলার
বিক্রির
চাপ
কমাতে
এবং
ন্যায্য
বিনিময়
হার
প্রতিষ্ঠা
করতে
বাংলাদেশ
ব্যাংকের
উচিত
আমাদের
তৈরি
পোশাক
শিল্পের
প্রধান
প্রতিযোগী
দেশ
ভারত
ও
ভিয়েতনামের
মতো
ধীরে
ধীরে
টাকার
অবমূল্যায়ন
করা।
আমি
খুশি
যে
সেটা
তারা
করছেন
এবং
দারুণ
স্মার্টলিই
করছেন।
কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের
বিশেষ
করে
আমাদের
গভর্নর
মহোদয়ের
এ
ব্যাপারে
প্রশংসা
করতেই
হয়।
ব্যাংক খাতে
সুশাসন বাড়াতে বাজেটে কী
ধরনের পদক্ষেপ আশা করছেন?
ক’দিন
আগে
মাত্র
দুদিনের
ব্যবধানে
যুক্তরাষ্ট্রের
দুটি
বড়
ব্যাংকে
ধস
নামে।
এর
ধাক্কা
লাগে
ইউরোপের
ব্যাংকগুলোয়ও।
ব্যাংক
চলে
মানুষের
আস্থার
ওপরে।
কোনো
কারণে
যদি
সাধারণ
মানুষ
ব্যাংকের
ওপর
থেকে
আস্থা
হারিয়ে
ফেলে,
তাহলে
সেই
ব্যাংক
দেউলিয়া
হতে
বাধ্য।
আস্থা বজায় রাখতে যে কয়টা কাজ অবশ্যই করা উচিত, তা হলো ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়া নীতিমালায় সুস্পষ্ট রাখা; ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সে বিষয়ে যথাযথ কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া; নিরপেক্ষ ও ন্যায্য সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে আরো স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া; ঋণ শ্রেণীকরণের প্রচলিত নীতিমালাগুলো আন্তর্জাতিক মানের করা; প্রয়োজনে আইএমএফ প্রস্তাবিত ব্যাংক সংস্কার কমিটি গঠন করা; আর্থিক অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা এবং এ ধরনের অপরাধের শাস্তির জন্য আইনি ব্যবস্থাকে কঠোর করা। বিদ্যমান আইনগুলোর পর্যালোচনা ও প্রয়োজনে সংস্কার দরকার।