প্লাস্টিকে আমরা হাঁটতে শিখেছি এখন দৌড়াতে দেয়া উচিত

দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত প্লাস্টিক শিল্প। অনেক সীমাবদ্ধতায় সম্ভাবনার পুরোটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আসন্ন বাজেটে প্লাস্টিক খাতসংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা এবং এ শিল্পের বিকাশে করণীয় নানা দিক নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আল ফাতাহ মামুন

বাংলাদেশে প্লাস্টিক খাতের সম্ভাবনা কেমন?

দীর্ঘদিন প্লাস্টিক খাতের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাংলাদেশে প্লাস্টিক খাতের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। কিছু সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠলে আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্লাস্টিক রফতানিও করতে পারব। এখন হয়তো আমরা ১৫০ মিলিয়ন ডলার রফতানি করছি। তা আরো বহুগুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। পৃথিবীর যেখানে যেখানে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি আছে, তাদেরও আমরা প্লাস্টিক এক্সপোর্ট করতে পারব। সবসময় যে ফুল ফিনিশড পণ্য এক্সপোর্ট করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যেমন গার্মেন্টে আমরা হ্যাঙারটা উৎপাদন করি। একসময় আমাদের ইমপোর্ট হতো। এভাবে সব সেক্টরেই কিন্তু অপার সম্ভাবনা আছে প্লাস্টিক নিয়ে। বাংলাদেশে এ সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই।

এক্ষেত্রে বড় সংকট বা চ্যালেঞ্জ কী? 

অর্থনীতিতে তো এখন সংকট যাচ্ছে। বিশেষ করে ডলারের কারণে এলসি খোলা যাচ্ছে না। প্লাস্টিকের কাঁচামাল আমরা ইমপোর্ট করি। এটা তো সামগ্রিক সংকট। কিন্তু শুধু প্লাস্টিক খাত নিয়ে যদি বলি, আমরা বড় একটি সংকট মোকাবেলা করছি। আর তা হলো মানুষের ভুল ধারণা। অনেকের ধারণা, প্লাস্টিক মানেই হলো শপিং ব্যাগ বা প্যাকেজিং। অথচ এগুলো প্লাস্টিকের ১০ শতাংশের বেশি না। ৯০ শতাংশই অন্যান্য পণ্য। সেগুলো পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। প্লাস্টিকের সৌন্দর্য হলো এটা রিসাইকেলযোগ্য। প্লাস্টিক সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক মনোভাবের ফলে প্লাস্টিকের এ মূল ফিচারটিকেও মানুষ পজিটিভভাবে নিতে পারছে না। এ নেতিবাচক মাইন্ডসেট যদি বদলানো যায় এবং প্লাস্টিক নিয়ে যদি আমরা ড্রাইভ দিতে পারি, তাহলে আশা করা যায় আমরা সহজেই অনেক দূর যেতে পারব। শপিং ব্যাগ একটা সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তবে প্লাস্টিক বলতে আমি কিন্তু শপিং ব্যাগ বোঝাই না। প্লাস্টিক বলতে ব্যাগ বাদ দিয়ে বাকি সবকিছু বোঝায়। আমি প্লাস্টিক খাতের লোক বলে বলছি না, আমি প্লাস্টিক বুঝি বলে বলছি। এ খাতে আমি গত ২০ বছর আছি। সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং পরিবেশবান্ধব। প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রির একটি পজিটিভ দিক হলো এটা কিন্তু জিরো ডিসচার্জ। মানে এখানের কোনো কিছু কিন্তু ফেলতে হয় না। সব রিসাইকেল করা যায়। এ ইন্ডাস্ট্রির মেশিনারিগুলো এমন যে, এখান থেকে এক ফোঁটা পানিও নদীতে যাবে না, একবিন্দু বায়ুদূষণও করবে না এবং জিরো ডিসচার্জ অব কার্বন। পুরো ইন্ডাস্ট্রিটাই পরিবেশবান্ধব। জেনে খুশি হবেন আমরা প্রচুর রিসাইকেল করি। আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রিসাইকেলার। বছরে আমরা ৪০ হাজার টন প্লাস্টিক রিসাইকেল করি। শুধু আমাদের প্লাস্টিকই নয়, আমরা মার্কেট থেকেও প্লাস্টিক সংগ্রহ করি, তারপর আমরা রিসাইকেল করি। রিইউজ পর্যন্ত করি। এই মাইন্ডসেটটা যদি দূর করা যায় এবং এ খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যদি সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়া যায়, তখন আমাদের অগ্রযাত্রা সাবলীল হবে। প্লাস্টিক নিয়ে সরকার অনেক সময় দ্বিধায় পড়ে যায়। ওয়ান টাইম ও মাল্টিপল ইউজ দুটোকে মিলিয়ে ফেলে। এ কারণে যে গতিতে প্লাস্টিক খাত এগিয়ে যাওয়া উচিত সে গতিতে এগোতে পারছে না। 

প্লাস্টিক খাত এগিয়ে নিতে বাজেটে কিছু করণীয় আছে কি?

অবশ্যই করণীয় আছে। দেশের পাঁচটি রফতানি পণ্যের মধ্যে প্লাস্টিক কিন্তু একটা। গার্মেন্টস খাতকে সরকার যেমন হাতে ধরে এগিয়ে নিয়েছে, প্লাস্টিকের বেলায় কিন্তু সেটা করেনি। আমরা অনেক ফ্যাসিলিটি পেয়েছি, কিন্তু গার্মেন্টের মতো পাইনি। মাঝে কিছুদিন ভ্যাট মওকুফ ছিল। এখন ভ্যাটটাও অন্তর্ভুক্ত করা হলো। প্লাস্টিক তো আসলে একদম গরিব মানুষের পণ্য, আমজনতার প্রডাক্ট। ভ্যাটটা পরে এলেও পারত। যাই হোক ভ্যাট দেয়া কোনো সমস্যা না। এখন আমরা যারা এক্সপোর্ট করছি, তাদের বন্ডের পাশাপাশি আরো কিছু সুবিধা দিলে আমরা এগোতে পারতাম। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের। চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য এগিয়ে থাকা দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে গার্মেন্টের মতো আমাদের সব ধরনের সুবিধা দিতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে। পরিবেশবান্ধব রিসাইকেলের কথা বলি আমরা, যারা রিসাইকেল করে তাদের জন্য বেনিফিট নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমি জানি রিসাইকেলের ক্ষেত্রে ব্যাংকের স্পেশাল ফান্ড আছে, সেটা দেয়া হয়। কিন্তু সেটা বড় কিছু না। আমরা যে কাঁচামাল ইমপোর্ট করি, আমরা যে লোনটা এনজয় করি—এটাও বোধ হয় সরকারের বাজেটে নেই। আমাদের এ সেক্টরকে আরো বড় আকারে দেখা উচিত।

সুনির্দিষ্টভাবে এবারের বাজেটে প্লাস্টিক খাতের প্রত্যাশা কী?

এক্সপোর্টকে এগিয়ে নিতে হবে। রিসাইকেলের ওপর কিছু বেনিফিট দিতে হবে। বেনিফিট নামকাওয়াস্তে যেগুলো আছে সেগুলোকে আরো বড় আকারে দিতে হবে। তাহলেই প্লাস্টিক খাত এগিয়ে যাবে। 

প্লাস্টিক খাতের বিনিয়োগ, উৎপাদন, চাহিদা সম্পর্কে বলুন।

এক বছর ধরে উৎপাদনে কোনো অগ্রগতি নেই। কারণ মেশিন আনা যাচ্ছে না, কাঁচামাল আনা যাচ্ছে না। ইনভেস্টমেন্টও হচ্ছে না। আমার মনে হয় এটা সাময়িক। যখন আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে তখন এ খাতে উৎপাদন বাড়বে। কারণ আমাদের চাহিদা আছে। প্লাস্টিকে আমরা হাঁটতে শিখেছি, আমাদের দৌড়াতে দেয়া উচিত। যেখানে আমাদের এখনো হাঁটাই শুরু হয়নি, সেখানেও নজর দেয়া উচিত। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন