ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন। নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেসরকারি খাতের বড় দুটি সংগঠনের। তিনি একই সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি) ও বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি। আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ও সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে
নতুন অর্থবছরের বাজেট আসন্ন। শুরুতেই জানতে
চাই কেমন
বাজেট প্রত্যাশা করছেন?
এক কথায়
বলতে গেলে
আমরা জনবান্ধব
বাজেট চাই,
উন্নয়নের বাজেট।
উন্নয়নের ক্ষেত্রে
বাংলাদেশ এরই
মধ্যে বিশ্বের
কাছে রোল
মডেল পরিচিতি
পেয়েছে। মেট্রোরেল,
টানেল, স্যাটেলাইট
ও পদ্মা
সেতুর মতো
অবকাঠামো গড়ে
তোলার মাধ্যমে
দেশের অনেক
উন্নয়নই এখন
দৃশ্যমান। তবে
এ উন্নয়নের
ধারা অব্যাহত
রাখতে সুপরিকল্পিতভাবে
বাজেট প্রণয়ন
করতে হবে।
পাশাপাশি বাজেট
বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে
সুশাসন নিশ্চিত
করতে হবে।
শিক্ষাবিদ-গবেষকদের মতে, শিক্ষা খাতে প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ অনেক কম।
শিক্ষায় অপ্রতুল বরাদ্দ দিয়ে
টেকসই উন্নয়ন কতটুকু সম্ভব?
বঙ্গবন্ধু স্বদেশ
প্রত্যাবর্তনের পর
প্রথম যে
বাজেট করলেন,
সেখানে সবচেয়ে
বেশি বরাদ্দ
দেয়া হয়েছিল
শিক্ষা খাতে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো
জাতীয়করণ করলেন।
এখানে আমাদের
জন্য বার্তা
রয়েছে। শিক্ষাটা
হলো সবার
আগে জাতিকে
শিক্ষিত করে
গড়ে তুলতে
হবে। তবে
শিক্ষিত মানে
শুধু ডিগ্রি
বা সনদধারী
নয়। শিক্ষিত
মানে মানুষ
হিসেবে গড়ে
তোলা। শিক্ষা
খাত এত
বেশি প্রসার
হয়েছে যে
এর চাহিদার
আকারও এখন
অনেক বড়।
সরকারকে শিক্ষা
খাত বিষয়ে
আন্তরিক মনে
হয়েছে। তবে
আমরা মনে
করছি, দক্ষ
মানবসম্পদ গড়ে
তোলার ক্ষেত্রে
শিক্ষা খাতকে
আরো বেশি
গুরুত্ব ও
অগ্রাধিকার দিয়ে
দেখার সুযোগ
রয়েছে। এ
অগ্রাধিকারের বিষয়টি
শুরু করতে
হবে প্রাথমিক
শিক্ষা থেকে।
শিক্ষার মূল
ভিত্তি শক্তিশালীভাবে
গড়ে না
তুলে যতই
বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে
তোলা হোক
না কেন,
তা কার্যকর
ফল দেবে
না। এজন্য
আমাদের বাল্যশিক্ষা
থেকে শিক্ষার্থীদের
ভিত মজবুত
করে তুলতে
হবে। একই
প্রক্রিয়ায় পরবর্তী
ধাপগুলোতে ক্রমান্বয়ে
এগিয়ে নিতে
হবে।
আবার শিক্ষা
খাতে শুধু
বাজেট বাড়িয়ে
মানে পরিবর্তন
আনা সম্ভব
নয়। শিক্ষায়
পরিবর্তন আনতে
মনিটরিং ব্যবস্থা
জোরদার করা
প্রয়োজন। মাঠ
পর্যায়ের কর্মকর্তারা
শুধু প্রশাসনিক
কাজে সীমাবদ্ধ
না থেকে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
পরিদর্শনে যাওয়া
উচিত। আমি
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী
কাউকেই পাইনি।
পরে দেখা
গেছে পাবলিক
পরীক্ষায় ভালো
ফলাফল করেছে।
এ বিষয়গুলো
চিহ্নিত করে
শক্তিশালী মনিটরিং
পদ্ধতি গড়ে
তুলতে হবে।
আপনি দীর্ঘদিন ধরে উচ্চশিক্ষা খাতের সঙ্গে
কাজ করছেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণা খাতে
বরাদ্দের বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি। যদিও উচ্চশিক্ষার বাজেটে গবেষণার হিস্যা খুবই
নগণ্য। এক্ষেত্রে আপনার পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ কী?
আমি নিজে
একটি বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
করেছি। বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির
নেতৃত্বে থাকার
কারণে অন্য
প্রতিষ্ঠানগুলোর খোঁজখবর
পেয়ে থাকি।
পাশাপাশি বিভিন্ন
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
সিন্ডিকেট, রিজেন্ট
ও বোর্ড
অব গভর্ন্যান্সে
রয়েছি। সব
মিলিয়ে আমার
পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী
দেশের উচ্চশিক্ষায়
নানা ধরনের
সংকট বিদ্যমান।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে
বিভিন্ন ধরনের
গণ্ডগোল লেগে
থাকছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী
ও শিক্ষক-শিক্ষক
সম্পর্কে বেশ
অবনতি দেখা
যাচ্ছেন। আবার
বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে
থাকা শীর্ষস্থানীয়
ব্যক্তিরাও প্রতিষ্ঠানগুলো
সুচারুভাবে পরিচালনা
করতে ব্যর্থ
হচ্ছেন। বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ে এ
ধরনের সমস্যা
না থাকলেও
অন্যান্য নানা
সংকট রয়েছে।
সার্বিকভাবে এসব
সংকটের প্রভাব
পড়ছে শিক্ষা
ও গবেষণার
মানে। গবেষণা
বরাদ্দ দেয়ার
প্রসঙ্গে বলতে
গেলে আমি
বলব, বরাদ্দের
বিষয়টি শুধু
পাবলিকের মধ্যে
সীমাবদ্ধ না
রেখে বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত
করা হোক।
কারণ বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও
তো এ
দেশেরই সন্তান।
আর গবেষণা
খাতে ব্যয়
করে সরকারের
ক্ষতি নেই।
কারণ গবেষণা
খাতের ব্যয়
এক ধরনের
বিনিয়োগ। আমার
অভিজ্ঞতার কথা
বলি। যশোর
বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
একটি পর্ষদের
সদস্য ছিলাম।
সেখানে উপাচার্য
বেশকিছু ল্যাবে
যন্ত্রপাতি কেনার
কথা জানান।
পরবর্তী সময়ে
দেখা গেছে,
করোনার সময়
ওই অঞ্চলে
করোনা পরীক্ষা
ও মোকাবেলায়
বিশ্ববিদ্যালয়টি খুবই
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে।
এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের
নেতৃত্বে যারা
থাকেন, তাদের
দূরদর্শী হতে
হয়।
গবেষণা বরাদ্দের
ক্ষেত্রেও আমি
বলব, মনিটরিংয়ে
জোর দিতে
হবে। শিক্ষকদের
গবেষণার জন্য
যে অর্থ
দেয়া হচ্ছে,
তা কী
উপায়ে ব্যয়
হয়েছে, আউটকাম
কী এসেছে,
এগুলো জানতে
হবে। গবেষণার
টাকা গবেষণা
কাজে ব্যয়
হয়েছে না
আত্মসাৎ হয়েছে,
সেদিকেও আমাদের
নজর দিতে
হবে।
সম্প্রতি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নিয়ে
বেশ আলোচনা হচ্ছে। এ
লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষাব্যবস্থায় কী
ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন?
স্মার্ট বাংলাদেশ
গড়ে তুলতে
হলে সবার
আগে স্মার্ট
শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে
তুলতে হবে।
এক্ষেত্রে দেশের
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন
ধরনের উদ্ভাবনীমূলক
উদ্যোগ সামনে
নিয়ে আসতে
হবে। বিশেষ
করে বিজ্ঞান,
প্রকৌশল ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ও বিভাগগুলোকে
সক্রিয়ভাবে কাজ
করতে হবে।
সরকারের পক্ষ
থেকে হয়
তো বরাদ্দ
ও নির্দেশনা
দেয়া হবে,
তবে এর
সফল বাস্তবায়ন
করতে হবে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেই।
এক্ষেত্রেও গবেষণার
বিষয়টি চলে
আসে। কেননা
গবেষণার মাধ্যমেই
নতুন নতুন
উদ্ভাবন সম্ভব।
আরেকটি বিষয়
হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
গুণগত মানের
শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে
নিশ্চিত করতে
হবে। কেননা
স্মার্ট বাংলাদেশের
লক্ষ্য পূরণ
করতে হলে
সর্বাগ্রে নাগরিকদের
স্মার্ট সিটিজেন
হিসেবে গড়ে
তুলতে হবে।
শিক্ষার মানের
কথা বলছিলেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে
প্রায়সময়ই মানসম্মত শিক্ষক না
পাওয়ার কথা
বলা হয়ে
থাকে। এ
বিষয়ে আপনার
মতামত কী?
মানসম্মত শিক্ষক
একেবারেই নেই,
বিষয়টি তেমন
নয়। তবে
এক্ষেত্রে কিছু
সংকট রয়েছে।
আমাদের যারা
মানের শিক্ষক
রয়েছেন, তাদের
মাধ্যমে অন্যদের
প্রশিক্ষণের আওতায়
আনতে হবে।
আসলে মান
তো কেনার
বিষয় নয়
যে, এটা
অর্জন করতে
হবে। অনেক
শিক্ষক-শিক্ষার্থী
বিদেশে গিয়ে
আর ফিরে
আসছে না,
এটাও একটি
চ্যালেঞ্জ। তাদের
কীভাবে নিয়ে
আসা যায়
সে বিষয়ে
সরকারের কাজ
করতে হবে।
বিশ্বের অনেত
দেশেই তাদের
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের
উন্নত বিশ্বে
পাঠিয়ে প্রশিক্ষিত
করে এনে
তাদের প্রশিক্ষণলব্ধ
জ্ঞান দেশের
উন্নয়নে কাজে
লাগায়। এক্ষেত্রে
আমাদেরও কিছু
উদ্যোগ নেয়া
প্রয়োজন। সরকারের
পক্ষ থেকে
কিছু বৃত্তি
দেয়া হচ্ছে।
তবে এর
পরিধি আরো
বাড়ানোর সুযোগ
রয়েছে। আমি
আবারো বলছি,
আমাদের দক্ষ
জনবল তৈরি
করার বিষয়টিকে
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার
দিয়ে দেখতে
হবে। কেননা
দক্ষতাসম্পন্ন জনবল
তৈরি করতে
না পারলে
যে উন্নয়ন
কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন
হয়েছে এবং
যেগুলো চলমান
রয়েছে তা
ধরে রাখা
বা অব্যাহত
রাখা সম্ভব
হবে না।
আপনি বীমা
খাতের সঙ্গেও সম্পৃক্ত রয়েছেন। বীমা খাত
নিয়ে কিছু
বলুন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বীমা খাতের যে প্রসার ও বিকাশ হওয়ার কথা ছিল দুঃখজনকভাবে তা করা সম্ভব হয়নি। অনেকগুলো খাত, প্রতিষ্ঠান ও সেবা এখনো বীমা খাতের আওতায় আসেনি। এক্ষেত্রে নীতিগত কিছু সমস্যা রয়েছে। যার সমাধানের চেষ্টা চলছে। সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শৈথিল্য রয়েছে। আস্থার সংকটও কম নয়। এসব সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বীমা খাতে কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে বেশকিছু ঘাটতি রয়েছে। কিছু আইন ও নীতিমালা হয়েছে ঠিকই তবে সেগুলোর বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না।