মফিজুর রহমান , ব্যবস্থাপনা
পরিচালক (এমডি), নভোএয়ার
আসন্ন বাজেটে সরকারের কাছে
উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর প্রত্যাশা কী?
বরাবরের মতো
এবারো আমরা
সুনির্দিষ্ট কিছু
প্রস্তাব উত্থাপন
করেছি। এ
খাতটিকে আরো
বিকশিত করার
লক্ষ্যে প্রস্তাবগুলো
দেয়া হয়েছে।
আমাদের পার্শ্ববর্তী
দেশগুলো এক্ষেত্রে
যে ধরনের
পদক্ষেপ গ্রহণ
করে, সে
নিরিখেও আমরা
বেশকিছু প্রস্তাব
তুলে ধরেছি।
বিভিন্ন আঙ্গিকে
আমাদের দাবি-দাওয়া
আছে। একটা
সময় ছিল,
যখন আমাদের
এয়ারক্রাফট ও
এয়ারক্রাফটের যন্ত্রাংশের
ওপর কোনো
ট্যাক্স ধার্য
ছিল না।
কিন্তু গত
কয়েক বছরে
আমরা দেখেছি,
এক্ষেত্রে বিভিন্ন
ধাপে ট্যাক্স
ধার্য করা
হয়েছে। যেমন
এয়ারক্রাফট আমদানির
ওপর বর্তমানে
৫ শতাংশ
এটি (অ্যাডভান্স
ট্যাক্স) ধরা
হয়েছে। আমরা
সেটিকে সম্পূর্ণ
প্রত্যাহারের জন্য
বলেছি। আর
এয়ারক্রাফটের আট
ক্যাটাগরির যন্ত্রাংশের
ওপর কোনো
ট্যাক্স ছিল
না। এ
আট ক্যাটাগরির
বাইরের যন্ত্রাংশগুলোতে
বিভিন্ন ধাপে
ট্যাক্স ধার্য
ছিল। আমাদের
সার্বিক দাবি
হলো, সব
ক্যাটাগরির যন্ত্রাংশের
ক্ষেত্রেই শূন্য
ট্যাক্স ধার্য
করা। বর্তমানে
৫ শতাংশ
‘এটি’
ও ৫
শতাংশ ‘এআইটি’
আছে। তার
মানে ১০
শতাংশ। আর
আট ক্যাটাগরির
বাইরে থাকলে
তার সঙ্গে
আরো কিছু
যুক্ত হয়।
সেক্ষেত্রে আলাদা
ট্যাক্স কোড
আছে। সে
কোড অনুযায়ী
দেখা যায়,
কোনোটা ৩৬
শতাংশ, কোনোটা
৪৬ শতাংশ,
কোনোটা ৫০
শতাংশ, কোনোটা
৭৫ শতাংশ।
এত উচ্চ
কর দিয়ে
পৃথিবীর কোথাও
এয়ারলাইনস ব্যবসা
হয় না।
এমনকি আমাদের
পাশের দেশে
সবকিছু শূন্য
শুল্কে আমদানি
হয়। এ
কারণে আমাদের
দাবি ছিল,
এয়ারক্রাফট ও
এয়ারক্রাফটের যন্ত্রাংশের
ক্ষেত্রে শূন্য
ট্যাক্স নির্ধারণ
করা।
অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখনো আমাদের বেশকিছু সমস্যা রয়ে গেছে।
গ্রাহকদের সেবার
বিষয়টি সরকারি বা বেসরকারি কোনো দিক
দিয়েই এখনো
তেমন মসৃণ
হয়নি। সুতরাং এটিকে আরো
জনপ্রিয় ও
গ্রাহকবান্ধব করার
জন্য এবারের বাজেটে কী
ধরনের পদক্ষেপ নিলে আপনাদের জন্য সুবিধা হবে? কিংবা
এ জায়গাটিতে আপনারা কী
ধরনের কাজ
করতে চান,
যেটিতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন?
এক্ষেত্রে মূল
ব্যাপারটি হলো
অ্যাভিয়েশনের খরচ
আমরা যত
কমিয়ে আনতে
পারব, মানুষের
জন্য ভ্রমণ
তত বেশি
সাশ্রয়ী হবে।
মানুষ কিন্তু
প্রথমত সেটিই
চায়। আমরা
যদি ভ্রমণ
সাশ্রয়ী করতে
চাই, তাহলে
বিভিন্ন ক্ষেত্রে
যে উচ্চ
কর ও
উচ্চ সার্ভিস
চার্জ ধার্য
করা আছে,
সেগুলো কমাতে
হবে। যেমন,
এয়ারপোর্টে যে
বিভিন্ন চার্জ
আমরা দিয়ে
থাকি, সেখানেও
তো ৬
শতাংশের একটি
সারচার্জ আছে
বকেয়ার ক্ষেত্রে।
এগুলো কমানোর
জন্য আমরা
প্রতি বছরই
দাবি করে
যাচ্ছি। প্রথম
কথা হলো,
আমাদের যাত্রীদের
জন্য সাশ্রয়ী
মূল্যে টিকিটের
ব্যবস্থা করা।
দ্বিতীয়ত, আমাদের
এয়ারপোর্টের ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলো
যেন যাত্রীবান্ধব
হয়। সেটি
কিন্তু আমাদের
এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের
দায়িত্ব। যাত্রী
যেন আরামে
ভ্রমণ করতে
পারে। আমাদের
পক্ষ থেকে
আমরা কিন্তু
যাত্রীদের প্রতিযোগিতামূলকভাবে
সেবা দিচ্ছি।
কিন্তু এয়ারপোর্টের
ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলো যাত্রীবান্ধব
হলে এ
সেবাটা আমরা
আরো বেশি
করে দিতে
পারব।
উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে কী ধরনের
সমস্যা হচ্ছে?
যন্ত্রাংশ আমদানিতে
আমাদের অনেক
ঝক্কি পোহাতে
হয়। যন্ত্রাংশ
আমদানির ক্ষেত্রে
এনবিআর ও
কাস্টম হাউজের
মধ্যে সবসময়
একটি দ্বন্দ্ব
লেগেই আছে।
একদিকে এনবিআর
থেকে আমাদের
বলা হচ্ছে,
আমদানির ক্ষেত্রে
পূর্বানুমতির প্রয়োজন
নেই। কিন্তু
কাস্টম হাউজ
সেটা মানছে
না। সরকারি
দুটি সংস্থার
বিপরীত অবস্থান।
সুতরাং আমদানির
ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত
এ ধরনের
ঝামেলা আমাদের
পোহাতে হচ্ছে।
শুরুতেই বলেছি,
ট্যাক্সের ব্যাপারে
আমাদের অনেক
দাবি-দাওয়া
ছিল। তার
মধ্যে ইঞ্জিনের
যন্ত্রাংশ, হেলিকপ্টারের
যন্ত্রাংশ, তেলের
ওপর আমাদের
ট্যাক্স আছে।
এ দাবি-দাওয়াগুলো
কিন্তু তুলে
ধরেছি। সাধারণত
বিদেশে অ্যাভিয়েশনের
ইমপোর্ট ২৪/৭
চালু থাকে
এবং সেটি
২৪ ঘণ্টার
মধ্যেই ছাড়িয়ে
নেয়া যায়।
কিন্তু আমাদের
দেশে ছুটির
দিনগুলোতে আমরা
যন্ত্রাংশ ছাড়াতে
পারি না।
এর পাশাপাশি
বিভিন্ন জটিলতা
আছে। অনেক
সময় দেখা
যায়, কাস্টম
হাউজের সার্ভার
কাজ করছে
না। যেখানে
দায়িত্বশীল যে
লোকের থাকার
কথা, সে
সেখানে নেই।
তিনদিন হয়তো
আমরা বসে
আছি। কিন্তু
সেই তিনদিন
কিন্তু আমাদের
এয়ারক্রাফটও বসে
আছে। এর
ফলে আমাদের
প্রচুর ক্ষতি
পোহাতে হয়।
আমদানির ক্ষেত্রে
যেন ২৪/৭
সেবা পাওয়া
যায়, সেই
দাবিটিও আমরা
রেখেছি।
বর্তমানে জ্বালানির দাম বেড়ে
যাওয়ার কারণে
বা জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে কী ধরনের
সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানির দাম বেড়ে গিয়েছিল। তবে তা এখন কমে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী দামের চেয়েও নিচে নেমে গেছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই যে জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে, তা কিন্তু আর সমন্বয় করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, আমাদের ইন্টারন্যাশনাল সেক্টরে জ্বালানি তেলের ওপর ট্যাক্স ও ভ্যাট ধার্য করা নেই। কিন্তু ডোমেস্টিক সেক্টরে জ্বালানি তেলের ওপর ৩৫ শতাংশ ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে হয়। এমনিতেই অতি উচ্চমূল্যে আমরা জ্বালানি কিনি। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম এখন প্রতি লিটার ৭৭ সেন্টে আছে। অথচ সেটি আমাদের ১১০ সেন্টে কিনতে হয়। প্রায় ৩০-৪০ সেন্টের মতো বেশি দিয়ে আমাদের জ্বালানি কিনতে হয়। একটি সুষ্ঠু ও ভালো অ্যাভিয়েশন সেক্টরের জন্য এটি সহায়ক নয়। এ কারণে আমরা বারবার দাবি করছি, এ দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে ৩-৪ সেন্ট বেশি হতে পারে। ৪০ সেন্ট বেশি হতে পারে না। ভারতে কিন্তু এয়ারলাইনসগুলো নিজেরাই জ্বালানি তেল ইমপোর্ট করতে পারে। কিন্তু তারা তা করে না। কারণ সেখানে তারা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে জ্বালানি কিনতে পারে। আমাদের দেশে তো প্রতিযোগিতা নেই। যার ফলে যে দাম ধার্য করা হয়, সেই দামেই কিনতে হয়। কিন্তু অন্যান্য দেশের মতো প্রতিযোগিতামূলকভাবে জ্বালানি তেল কেনার ব্যবস্থা থাকলে কিন্তু আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল কিনতে পারব।