উৎপাদিত চায়ের ৫০ শতাংশই জোগান দেয় মৌলভীবাজার

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশে চা উৎপাদনে সিলেট অঞ্চলের অবদান সবচেয়ে বেশি। চায়ের দেশ হিসেবে সিলেট জেলা সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলেও বিভাগের মৌলভীবাজার জেলাই দেশের চা উৎপাদনে ৫০ শতাংশ অবদান রাখছে। যেখানে সিলেট জেলার মোট উৎপাদন মাত্র ৬ শতাংশ।

চা বোর্ডের তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০২২ সালে দেশে চা উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ১৬২ কেজি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৪৮ লাখ ১ হাজার ১০৩ কেজি উৎপাদন হয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়, যা মোট বার্ষিক উৎপাদনের ৪৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অন্যদিকে সিলেট জেলায় চা উৎপাদন হয়েছে ৫৪ লাখ ১০ হাজার ৭২৪ কেজি বা ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

সিলেট, চট্টগ্রাম কিংবা হবিগঞ্জকে ছাড়িয়ে চা উৎপাদনে জেলাভিত্তিক দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে পঞ্চগড়। ২০২২ সালে পঞ্চগড়ে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার ৯৩৮ কেজি বা ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ চা উৎপাদন হয়েছে।

পরিসংখ্যানে তৃতীয় অবস্থানে থাকা হবিগঞ্জ জেলার উৎপাদন ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৭২ কেজি (১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ), চতুর্থ চট্টগ্রাম জেলা ১ কোটি ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৪ কেজি (১১ দশমিক ৮০ শতাংশ)।

দেশে বর্তমানে চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭। মৌলভীবাজার জেলায় ৭৫টি টিএস্টেট (উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত, বাজারজাত ও নিজস্ব শ্রমিক-কর্মচারী সংবলিত বাগান) ও ১৫টি চা বাগান (২৫ একরের বেশি চা বাগান কিন্তু টিএস্টেটের মতো সুবিধা নেই) রয়েছে। এসব বাগানের মোট আয়তন ১ লাখ ৫৬ হাজার ১৯২ একর। অন্যদিকে হবিগঞ্জ জেলায় ২২টি টিএস্টেট ও তিনটি বাগানের মোট আয়তন ৫৪ হাজার ১৬৬ একর। সিলেট জেলায় ১২টি টিএস্টেট ও সাতটি বাগানের মোট আয়তন ২৮ হাজার ৯৩৬ একর, চট্টগ্রাম জেলায় ১৮টি টিএস্টেট ছাড়াও চার চা বাগানের মোট আয়তন ৩৫ হাজার ১২১ একর। রাঙ্গামাটি জেলার একটি টিএস্টেট ও একটি চা বাগানের মোট আয়তন ৭৯৫ একর, পঞ্চগড় জেলার আটটি চা বাগানের আয়তন ৮ হাজার ৮১৮ একর এবং নতুন করে শুরু হওয়া ঠাকুরগাঁও জেলার একটি চা বাগানের আয়তন ৪১ একর।

বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি মো. শাহ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌ˆমৗলভীবাজার জেলা দেশের চা উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। পরিবেশগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে এখানকার বাগানমালিকরা প্রতি বছর সর্বোচ্চ পরিমাণ চা উৎপাদন করেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও সামাজিক জাগরণের কারণে এ জেলার চা সংস্কৃতি স্থানীয় মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করেছে। চায়ের নিলামসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটাতে পারছে।’ দেশের সার্বিক চা উৎপাদনে মৌলভীবাজার আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন তিনি।

চা খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাহাড়ি উঁচু ভূমি, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও অনুকূল আবহাওয়া ভালো মানের চা উৎপাদনে সহায়ক। সিলেট অঞ্চলের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বছরব্যাপী পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় চায়ের উৎপাদনও বেশি। যার কারণে প্রতি বছরই এ জেলায় চা বাগানের পরিধি বাড়াচ্ছেন উদ্যোক্তারা। অন্যান্য জেলায় চা বাগানগুলোর হার তুলনামূলক কম হওয়ায় উৎপাদন কম হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় এখানকার চা উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

জানা গেছে, সম্প্রতি দেশে চাহিদার প্রায় সমপরিমাণ চা উৎপাদন হচ্ছে। আমদানিতে কড়াকড়ি ও দেশী বাগানমালিকরা ভালো দাম পাওয়ায় চা উৎপাদন ক্রমেই বাড়ছে। সর্বশেষ বছর ১০ কোটি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে কিছুটা কম। তবে এ বছর দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে চা উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন চা বোর্ড ও বাগানমালিকরা। এক্ষেত্রে মৌলভীবাজার জেলাই চায়ের রেকর্ড উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন