সাইক্লিং ক্লাব

সাইকেল এখন ক্যাম্পাস জীবনের অনুষঙ্গ

শফিকুল ইসলাম

শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ এখন সাইকেল। একাডেমিক পড়াশোনা, হলজীবন, আড্ডা, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হওয়া কিংবা টিউশনি—সাইকেল ছাড়া যেন ক্যাম্পাসজীবন অনেকের কাছেই পানসে। আর স্বাস্থ্যসচেতন শিক্ষার্থীরাও অনেকে সাইকেল চালান। কেউবা একাডেমিক প্রয়োজনে, কেউ শরীরচর্চার অংশ হিসেবে কেউ সামাজিক সচেতনতায় ক্যাম্পেইনের জন্যও সাইকেল ব্যবহার করেন। ছেলেমেয়ে সবাই এখন সাইক্লিং করেন। আর সাইক্লিংয়ের এমন প্রয়োজনীয়তা থেকেই ক্যাম্পাসে গড়ে উঠেছে সাইক্লিং ক্লাব। ক্যাম্পাসের সব সাইক্লিস্টই যে এসব ক্লাবের সদস্য এমন নয়, অধিকাংশ শিক্ষার্থীই একাডেমিক প্রয়োজনেই ব্যক্তিগতভাবে কিনে নিয়েছেন এ দ্বিচক্রযান। পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর এবং গ্রিন এ যাতায়াত ব্যবস্থা চীন, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের দেশগুলোয় বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আবাসিক হল থেকে একাডেমিক ভবনে হেঁটে যেতে প্রায় ১০-১২ মিনিট সময় লাগে। রিকশা ভাড়া ২০ টাকা। আবার এসব হল থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু কেনাকাটা করতে হলেও যেতে হয় স্টেশন বাজার ও বিনোদপুর। সেখানেও ১০ মিনিটের দূরত্ব। অনেক শিক্ষার্থীই সাইকেল কিনে নিয়েছেন একাডেমিক প্রয়োজনে। যারা টিউশনি পড়ান দূরত্বের কারণে তাদের কাছেও সাইকেল অপিরাহার্য হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে আলাপ হলো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সালমান সাকিলের সঙ্গে। জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম বর্ষেই একটি সাইকেল কিনেছিলেন সালমান। তখন ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় সাইকেলে চেপেই চলত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ। আবাসিক হলে ওঠার পরও সাইকেলই তার ক্যাম্পাসজীবনের সঙ্গী। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইক্লিস্ট সংগঠনের সদস্য ইব্রাহীম বলেন, ‘‌শুক্রবার মানেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়া যেখানে নিজেকে নতুনভাবে খুঁজে পাই। দূষণপূর্ণ এ নগরীকে দূষণ থেকে বাঁচাতে হলে সাইকেলের ব্যবহার অপরিহার্য। আমাদের শারীরিক ও মানিসক শান্তি দেয় সাইক্লিং। প্রায়ই দলবেঁধে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের ঐতিহ্যবাহী স্থানও দর্শন করার সুযোগ হয়েছে সাইক্লিংয়ের জন্যই। আমাদের গবেষণার কাজেও সাইক্লিং সহায়তা করে।’

শিক্ষার্থীদের এক হল থেকে অন্য হলে এবং হল থেকে ক্লাসে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রিকশার পরিবর্তে সাইকেল হয়ে উঠেছে যাতায়াতের বাহন। বড় আয়তনের ক্যাম্পাসে সাইকেল যেন আশীর্বাদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হাবীব বলেন, ‘‌আমি দুই বছর আগে যখন ক্যাম্পাসে সাইকেল চালানো শুরু করি তখনকার তুলনায় এখন সাইকেল চালানো শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ। প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী এখন সাইকেল চালায়। ছাত্রী রয়েছে প্রায় ৫০ জন। ১ নম্বর গেট থেকে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, কলা অনুষদ পর্যন্ত অটোরিকশা করে যেতে ৩০ টাকা আর সিএনজি অটোরিকশায় ১২ টাকা খরচ হয়। আবার জিরো পয়েন্ট থেকে ওইসব জায়গায় অটোরিকশা করে ১৫ টাকা আর সিএনজি অটোরিকশা করে ৬ টাকা খরচ হয়। সাইকেল একাডেমিক জীবনকে সহজ করে তুলেছে। সহজেই এক জায়গা থেকে ক্যাম্পাসের আরেক জায়গায় যাতায়াত করা যায়।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাইক্লিং ক্লাবের সভাপতি শান্ত বলেন, ‘‌আমি শৈশব থেকেই সাইকেল চালাতাম।৷ স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য প্রথম সাইকেল কেনা হয়।৷ বিডি সাইক্লিস্টের বাইক ফ্রাইডের দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। সেই ক্রেজেই সাইক্লিস্ট হয়ে ওঠা৷। সাইক্লিং আমার শিক্ষাজীবনেও ব্যাপক অবদান রেখেছে।৷ যাতায়াতকে সহজ করার মাধ্যমে সময় বাঁচাতে সাইক্লিং অনন্য। একই সঙ্গে সাইক্লিং ক্লাবের মাধ্যমে বিভিন্ন কমিউনিটির সাইক্লিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা নেটওয়ার্কিংয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন