সফর শেষে আইএমএফের বিবৃতি

প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক ও স্থানীয় মুদ্রার ওপর চাপ থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধারাবাহিক উচ্চমূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক আর্থিক খাতের অস্থিরতা বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোয় প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এসব কারণে দেশের প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাংলাদেশী টাকার ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে বলে অভিমত সংস্থাটির। আইএমএফের স্টাফ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সফর শেষে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে গতকাল কথা জানানো হয়েছে।

আইএমএফের স্টাফ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল গত ২৫ এপ্রিল থেকে মে (গতকাল) পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেছে। সফর শেষে সংস্থাটির মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দ বিবৃতি দেন। তিনি বিবৃতিতে বলেন, বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যারা দ্রুত হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। সফরে আমরা সামষ্টিক অর্থনৈতিক আর্থিক খাতের সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির মূল যেসব প্রতিশ্রুতি ছিল, সেগুলো কতটা পূরণ হলো, তার অগ্রগতিও পর্যালোচনা করেছি। বর্ধিত ঋণ সুবিধা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সুবিধা (ইএফএফ), রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) ব্যবস্থার প্রথম পর্যালোচনায় আনুষ্ঠানিকভাবে তা মূল্যায়ন করা হবে, যা বছরের শেষের দিকে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সফরের সময় আইএমএফের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং অন্য ঊর্ধ্বতন সরকারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এছাড়া তারা বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, দ্বিপক্ষীয় দাতা উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে আসবে। বাংলাদেশকে দেয়া ঋণের শর্তানুযায়ী যেসব সংস্কার কার্যক্রম চালানোর কথা সেগুলো পর্যালোচনা করবে তারা। প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করা হবে।

এদিকে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সফরের শেষ দিনে আলোচনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গতকাল বিষয়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, আগামী মুদ্রানীতিতে ইন্টারেস্ট রেট করিডোর বা বাজারভিত্তিক সুদহার চালুর বিষয়ে ঘোষণা আসবে। একই সঙ্গে মুদ্রার একক বিনিময় হার চালু করা হবে। এছাড়া আইএমএফের শর্তানুসারে ব্যালান্স অব পেমেন্টস ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-) অনুযায়ী রিজার্ভ গণনার বিষয়েও আগামী মুদ্রানীতিতে ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ঋণের গড় সুদের হার দশমিক শতাংশ। ৪৭০ কোটি ডলারের মধ্যে দুই ধরনের ঋণ রয়েছে। বর্ধিত ঋণ সহায়তা বা বর্ধিত তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৩৩০ কোটি ডলার। আরএসএফের আওতায় পাওয়া যাবে ১৪০ কোটি ডলার। গত ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার বুঝে পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত ঋণ কর্মসূচি চলাকালীন বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের পর এক বিবৃতিতে আইএমএফ জানায়, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা, সামাজিক উন্নয়নমূলক ব্যয়ে সক্ষমতা তৈরিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, আর্থিক খাত শক্তিশালী করা, নীতিকাঠামো আধুনিক করে তোলা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার কাজে ঋণ সাহায্য করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন