সিনেমা শিল্পে উপসাগরীয় দেশে বিস্ময়কর উত্থান

বণিক বার্তা অনলাইন

দুবাইয়ের একটি সিনেমা হল। ছবি: রক্সি সিনেমা

বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরের একটি দুবাই। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হওয়ার কারণে এ অঞ্চলে বছর জুড়ে থাকে বহুমাত্রিক সংস্কৃতির আনাগোনা। একইভাবে খনিজ সম্পদ ও অবকাঠামো বাণিজ্যে এগিয়ে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য নগরগুলো তৈরি করেছে স্বতন্ত্র অবস্থান। সেই সূত্র ধরেই উপসাগরীয় অঞ্চলে বিকাশ লাভ করছে চলচ্চিত্র শিল্প।

অ্যারাবিয়ান বিজনেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশক জুড়ে উপসাগরীয় অঞ্চলে চলচ্চিত্র ব্যবসার উত্থান ঘটেছে। যা বৈশ্বিক বিনোদন খাতের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

এত দিন অল্প ব্যতিক্রম বাদে শুধু ভোক্তাদের হিসেবে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে ভূমিকা রেখে আসছিল উপসাগরীয় দেশগুলো। এখন নিজেদের পুরোনো বাণিজ্যিক অবস্থানকে আরো পোক্ত করতে বিনোদন খাতে বেশি জোর দিচ্ছে।

গ্রিনভিউ রিসার্চের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে চলচ্চিত্র ও বিনোদন বাজারের অর্থমূল্য ২০২০ সালেই ছিল ১৮৬ কোটি ডলার। ২০২১ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মধ্যপ্রাচ্যে স্থাপিত হয়েছে বিপুল সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহ। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব প্রিমিয়াম রূপালি পর্দার সংখ্যায় বিশ্বের প্রথম দশটি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অবকাঠামো সুবিধা সম্প্রসারণের প্রবণতা। বিনোদন খাতে তৈরি হচ্ছে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জড়িত হওয়ার সুযোগ।

সম্প্রতি ‌স্টার ওয়ার্স সিনেমার বড় একটা অংশ আবুধাবিতে চিত্রায়িত হয়। ‌মিশন ইমপসিবল সিনেমার দুবাই অংশ তো খুবই বিখ্যাত। এখন বুর্জ খলিফা পরিদর্শনে গেলে নজরে পড়ে টম ক্রুজের সিনেমার দৃশ্য। অথবা কোমল পানীয়ের বিজ্ঞাপনে হৃতিক রোশনের এই সর্বোচ্চ ভবন জয়ের দৃশ্য। এমনকি বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন ও সিনেমার দৃশ্যায়ন হচ্ছে দুবাইয়ে।

বলিউড ও ললিউডের শুটিংয়ের জনপ্রিয় গন্তব্য দুবাই বেশ কয়েক বছর ধরেই। কয়েক মাস আগে সৌদি আরবে চিত্রায়িত হয়েছে শাহরুখ খান অভিনীত ডাঙ্কি সিনেমায় কিছু অংশ। এর মাধ্যমে প্রথম কোনো ভারতীয় সিনেমার দৃশ্যায়ন হলো সৌদি আরবে। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে এ খাতে তৈরি হচ্ছে নিজস্ব প্রবণতা। পাশাপাশি পৌঁছে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের দুয়ারে।

অস্কার মনোনয়ন পাওয়া শেখর কাপুর সম্প্রতি জেদ্দায় অবস্থানকালে বলেন, আরব বিশ্ব যদি চলচ্চিত্রের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়, পরবর্তী প্রকল্পের জন্য তিনি দুবাই ও উপসাগরীয় অঞ্চলের দিকে ঝুঁকবেন। সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনও তার কাছে আকর্ষণীয়।

হলিউড থেকে শুরু করে নাইরেজিয়ার সিনেমাও সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে জায়গা। গত চার বছরে চলচ্চিত্র শিল্পের প্রসার ছিল অস্বাভাবিক দ্রুত। একদিকে বেড়েছে বিনিয়োগ, অন্যদিকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সংযুক্তি।

সৌদি আরবে প্রথম কোনো বলিউড সিনেমার শুটিং করেন শাহরুখ খান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

দুবাই ফিল্ম অ্যান্ড টিভি কমিশনের নির্বাহী প্রধান জামাল আল শরিফ বলেছেন, উপসাগরীয় অঞ্চলের দৃশ্য, স্থাপনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই বাইরের নির্মাতাদের আকৃষ্ট করে। এখানকার বাণিজ্যিক চুক্তিও স্থিতিশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ।

সৌদি সরকার ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে চলচ্চিত্র খাতে। দেশীয় চলচ্চিত্রের অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে।

দেশীয় ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও চলচ্চিত্র একটা গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। চলচ্চিত্রের এই বেড়ে উঠা মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শুটিংয়ের সেট তৈরিতে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন রয়েছে; ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে কাঠমিস্ত্রী পর্যন্ত। সেখানে কাজ করার সুযোগ লুফে নিতে পারে উদ্যোক্তারা। শুটিংয়ের পর ভিডিও এডিটিং থেকে শব্দ সমন্বয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও থাকে যুক্ত হওয়ার অবকাশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে বিকশিত হচ্ছে পর্যটন খাত। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই সব দেশে ভ্রমণ করেছেন একাধিক দেশের তারকা ও সিনেপ্রেমী। তৈরি হচ্ছে নিজেদের সিনেমাও। এভাবে চলতে থাকলে, খুব শিগগিরই নতুন ধরনের বিষয়বস্তু ও কনটেন্ট নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করবে একদা রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আরব দেশগুলো। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন