ঈদে দর্শকের স্বস্তি ওয়েব কনটেন্টে

মাহমুদুর রহমান

মহানগরে মোশাররফ করিম, শহরে অনেক রোদের দৃশ্যে সাবিলা নূর ও খায়রুল বাসার, মাইশেলফ অ্যালেন স্বপনে নাসির উদ্দিন খান

এবারো প্রতি বছরের মতো ঈদে নির্মাতারা নানা কনটেন্ট নিয়ে হাজির হয়েছেন। এর মধ্যে আছে এক পর্বের নাটক, সাতদিনের ধারাবাহিক, ফ্ল্যাশ ফিকশন, টেলিফিল্ম, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি। এরই মধ্যে এক পর্বের নাটকগুলো মুক্তি পেয়েছে টেলিভিশন চ্যানেল ও ইউটিউবে। এবার ঈদে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সিনেমাও মুক্তি পেয়েছে। তবে সাধারণ দর্শকের কাছে বহুদিন ধরে ঈদ মানেই নাটক। টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক দেখেই তারা ঈদের সময়টা পার করতেন। বাংলাদেশের নাটক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দর্শকও প্রশংসা করেছেন নানা সময়। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সে জায়গা হারাচ্ছে নাটক। নানা কারণেই গত কয়েক বছরে নির্মিত ও প্রচারিত নাটক নিয়ে আপত্তি ছিল দর্শকদের। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হলো ওটিটির আগমনে।

ঈদে অনেকগুলো নাটক মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু নাটক জনপ্রিয়ও হয়েছে। টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি ইউটিউবে প্রকাশিত নাটকগুলোও ভিউ পেয়েছে। কিন্তু নাটক নিয়ে পুরনো সে মুগ্ধতা আর নেই। দর্শকদের অভিযোগ, একই ধারার নাটক তৈরি হচ্ছে। নতুনত্ব নেই কনটেন্টে। ঘুরেফিরে একই মুখ দেখা যায় নাটকগুলোয়। ফলে একঘেয়ে হয়ে পড়ছে বাংলা নাটক। প্রতি ঈদেই নাটক প্রচারের পর তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা দেখা যায়। তবে এবার নাটক নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। বরং বেশকিছু নাটকের দৃশ্যায়ন, শব্দচয়ন নিয়ে আপত্তি দেখা গেছে। নাটকে অকারণেই গালি, অশ্লীল ভঙ্গি দেখানোর ব্যাপারে অনেকদিন ধরেই দর্শক অভিযোগ করে আসছিলেন। মূলত বাংলা নাটকের পুরনো অভিনেতাদের বিদায় এক ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি করেছিল। এরপর ভালো নির্মাতারাও কাজ কমিয়ে দিয়েছেন।

লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে নির্মাতারা ‘‌কনটেন্ট’ নিয়ে হাজির হয়েছেন। কনটেন্ট শব্দটা আগে খুব বেশি ব্যবহার হতো না। বলা হতো অনুষ্ঠান, অনুষ্ঠানমালা। অনলাইনে এখন নানা ধারার কাজ হওয়ার কারণে বলা হয় কনটেন্ট। এ বছর বাংলাদেশের ওটিটি প্লাটফর্মগুলোয় অনেক কনটেন্ট না এলেও যা এসেছে তাতেই দর্শক স্বস্তি খুঁজে নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথমেই থাকবে হইচইয়ে মুক্তি পাওয়া আশফাক নিপুনের সিরিজ মহানগরের দ্বিতীয় পর্ব। ঈদের একদিন আগে স্ট্রিম হওয়া এ সিরিজ নিয়ে দর্শক উচ্ছ্বসিত। প্রথম সিজন থেকেই এ চাহিদা ছিল। দ্বিতীয় সিজন দর্শক আরো পছন্দ করার পাশাপাশি এখন অপেক্ষা মহানগরের তৃতীয় সিজনের জন্য।

একইভাবে দর্শক পছন্দ করেছেন শিহাব শাহীনের ‘‌মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। ২০২২ সালের ঈদুল আজহায় স্ট্রিম হওয়া সিন্ডিকেটের স্পিন অফ সিরিজটি মাত্র দুজন প্রধান অভিনেতা নিয়েও গল্প ও নির্মাণের গুণে প্রশংসিত। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ওটিটি কনটেন্ট নিয়ে প্রশংসা করেছেন দেশ ও দেশের বাইরের শিল্পী ও নির্মাতারা। অ্যালেন স্বপনের পারফরম্যান্স নিয়ে সুবর্ণা মোস্তফা তার ফেসবুক পোস্টে প্রশংসা করেছেন। মহানগর ২-এর প্রশংসা করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। একটা সময় ঈদের নাটক কিংবা হানিফ সংকেতের ইত্যাদি নিয়ে যেভাবে আড্ডায় কথা উঠত, এখন তা উঠছে ওয়েব কনটেন্ট নিয়ে। এর মধ্যে এগিয়ে থাকছে সিরিজ। তবে এর বাইরে তৈরি হচ্ছে ওয়েব ফিল্ম, ফ্ল্যাশ ফিকশন ইত্যাদি। কিন্তু নাটক কি একেবারেই নেই?

ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে এবার ওপরের দিকে আছে কাজল আরেফিন অমির ‘‌বিদেশ’। নাটকটিতে থাকা বার্তার জন্য দর্শক এটি পছন্দ করেছে। প্রশংসা পাচ্ছে আরটিভিতে প্রচারিত ‘‌ঘুম’, অপূর্ব-তারিন অভিনীত ‘‌প্রিয় পরিবার’। কিন্তু অপূর্বরই এককালে অভিনয় করা ‘‌বড় ছেলে’র মতো সাড়া ফেলা নাটক নেই অনেকদিন ধরে। একই মুখ, পুরনো ধারার কনটেন্ট, মানের চেয়ে সংখ্যায় বেশি নাটক হওয়ার পাশাপাশি ভালো নাটক না হওয়ার আরেকটি কারণ টেলিভিশন নাটকের নির্মাতারা ওটিটিতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। শিহাব শাহীন, আশফাক নিপুন, শাফায়েত মনসুর রানা, মিজানুর রহমান আরিয়ান, কাজল আরেফিন অমি, রেদোয়ান রনিরা টেলিভিশনেরই নির্মাতা, কিন্তু এখন তারা ওয়েবে বেশি সময় দেন। এর কারণও আছে। ওয়েবে স্বাধীনতা নিয়ে কাজ ও নিরীক্ষা করার সুযোগ আছে।

কাজল আরেফিন অমি এবার বঙ্গর জন্য নির্মাণ করেছিলেন অরিজিনাল সিরিজ ‘‌ হোটেল রিল্যাক্স’। দর্শকের কাছ থেকে খুব একটা ইতিবাচক সাড়া না পেলেও নতুন কিছু চেষ্টা করার বিষয়টি তারা পছন্দ করেছে। মিজানুর রহমান আরিয়ান নির্মাণ করেছেন ফ্ল্যাশ ফিকশন ‘‌শহরে অনেক রোদ’। দীপ্ত প্লেতে প্রচারিত হয় এটি। শাফায়েত মনসুর রানা অভিনয় করেছিলেন বিঞ্জের ‘‌কুহেলিকা’য়। কনটেন্টের নতুনত্ব, বৈচিত্র্য ও বড় ব্যানারের কারণে দর্শক টেলিভিশন ও ইউটিউব নাটক থেকে ওটিটিতেই বেশি স্বস্তি বোধ করছেন। কনটেন্ট তো ভালোই, টেলিভিশন চ্যানেলের মতো বিজ্ঞাপনের অত্যাচারও নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন