প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদন

ভারতে ৩২৫ শতাংশ বিক্রয় বৃদ্ধির রেকর্ড নকিয়ার

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলমান সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রত্যাশা নকিয়ার ছবি: ইকোনমিক টাইমস

ভারতের বাজারে বড় ধরনের বিক্রয় রেকর্ড গড়েছে নকিয়া করপোরেশন। ফিনল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রতি প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত অংশের বাণিজ্যে প্রথম প্রান্তিকে বছরওয়ারি ৩২৫ শতাংশ বিক্রয় বৃদ্ধির রেকর্ড গড়েছে নকিয়া। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট বিক্রয় হয়েছে ৮৫ কোটি ৩০ লাখ ইউরো বা ৯৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার সমমূল্যের পণ্য। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, দেশটিতে ফাইভজি প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রসারণের প্রভাবেই এমন উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছে নকিয়া। 

ফিনল্যান্ডের এ প্রযুক্তি জায়ান্ট টেলিযোগাযোগ শিল্পের একটি প্রধান প্রতিযোগী। উন্নত ফাইভজি নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটি সরঞ্জামও তৈরি করে। ভারতের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় ফাইভজি নেটওয়ার্ক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে বেশ কয়েক বছর ধরেই কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। যার সুফলও পেতে শুরু করেছে জনপ্রিয় এ সেলফোন নির্মাতা। এ বিষয়ে নকিয়ার সাম্প্রতিক বিক্রির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ও সিইও পেখা লান্ডমার্ক বলেন, ‘যেমনটা ঠিক আমরা আশা করেছিলাম, মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে আসা লাভের ক্ষেত্রে বছরের প্রথম ও দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি।’ 

নকিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতে বিক্রয় বৃদ্ধি উত্তর আমেরিকার বাজারে তাদের মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্যবসায়িক মন্দাকে পুষিয়ে দেয়। নকিয়ার আয়ের বিবৃতি অনুসারে, ভারতে ফাইভজি স্থাপনার অব্যাহত সম্প্রসারণ প্রতিষ্ঠানটিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট শেয়ার’ অর্জনে সহায়তা করেছে। এদিকে উত্তর আমেরিকা অঞ্চলে নকিয়ার মোট বিক্রয় ৯ শতাংশ ও চীন ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যদিও ইউরোপে বেড়েছে ৫ শতাংশ। এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় বিক্রি ৭ শতাংশ বাড়লেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কমেছে ৯ শতাংশ। তাই নকিয়ার মূল বাজারগুলোতে নেটওয়ার্ক বিক্রয়ের ধীরগতির মধ্যে ভারতের বিপরীত চিত্রটি প্রতিষ্ঠানটির জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। 

নকিয়ার প্রথম প্রান্তিকের আয়ের বিবৃতি অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকজুড়ে ফাইভজি স্থাপনা সম্প্রসারণের গতি অব্যাহত ছিল। তাই ভারতে মোট বিক্রয় বৃদ্ধির সঙ্গে মোবাইল নেটওয়ার্ক-সম্পর্কিত। ভারতে নকিয়ার মোট বিক্রয় ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকের এ বছর বেড়েছে ৩২৫ শতাংশ।

বৃহত্তর চীনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফাইভজি বাজার হিসেবে বিবেচনা করে নকিয়া। বৃহত্তর চীন অর্থাৎ পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ড চীন, হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ানের বাজারকে বোঝানো হয়। ২০২০ সালে ‘ধুঁকতে থাকা’ নকিয়ার শীর্ষ পদে দায়িত্ব কাঁধে নেয়ার পর কয়েকটি ধাপে নিজের পরিকল্পনা সাজান লান্ডমার্ক। ধারণা করা হচ্ছে, তার পরিকল্পনার সুফল পেতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবসায় বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় পর্যালোচনা ও বিকল্প বিবেচনার পাশাপাশি বিনিয়োগের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিচ্ছে নকিয়া। এ সম্পর্কে লান্ডমার্ক বলেন, ‘ফাইভজি ও ফাইবারে বিনিয়োগের চলমান প্রয়োজনীয়তাকে আমরা সময়ের দাবি হিসেবে দেখি। এ অনিশ্চয়তাকে যেন সফলভাবে উতরে যেতে পারি তা নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের খরচের শৃঙ্খলা বজায় রাখব।’ 

ভারতের বাজারে চলমান সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বছরের দ্বিতীয়ার্ধ ঘিরেও আশাবাদী নকিয়া। প্রধান নির্বাহী আরো বলেন, ‘২০২৩ সাল বিক্রয় বৃদ্ধির বছর হতে চলেছে। আমরা প্রত্যাশা করছি চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের লাভের পরিমাণ প্রথমার্ধের তুলনায় শক্তিশালী হবে।’ 

উত্তর আমেরিকার মতো উচ্চ লাভের বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় টেলিকম সরঞ্জাম বিক্রির ব্যবসা খানিকটা চাপের মধ্যে রয়েছে। মন্দা পরিস্থিতির কারণে উত্তর আমেরিকা, বৃহত্তর চীন ও এশিয়ার কিছু অংশের গ্রাহকরাও অর্থ খরচে আগ্রহী নয়। চলমান পরিস্থিতিতে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মতো উচ্চলাভের বাজারে বিনিয়োগে পিছিয়ে দিচ্ছে টেলিকম অপারেটররা। নর্ডিক অঞ্চলের দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান নকিয়া ও এরিকসন বর্তমানে ভারতের বাজারে বিক্রয় বৃদ্ধির দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে। পাশাপাশি ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ কার্যক্রমে গতি আনছে। 

নকিয়ার সুইডিশ প্রতিদ্বন্দ্বী এরিকসনের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হয়ে উঠেছে ভারত। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এ বাজারে প্রতিষ্ঠানটির মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যা ৩৭ শতাংশ। 

ফাইভজি চালু করার জন্য টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে বড় ধরনের চুক্তির পাশাপাশি নকিয়া তাদের শিল্প গ্রাহকদের জন্যও বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে যারা পাওয়ার প্লান্ট, ইউটিলিটি, খনিসহ এ ধরনের শিল্পে নিজস্ব ফাইভজি নেটওয়ার্ক স্থাপন করে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন