খুলনার কয়রা উপজেলা থেকে বেতগ্রাম, এঁকেবেঁকে চলা ৬০ কিলোমিটার সড়কে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। তাই গুরুত্বপূর্ণ এ আন্তঃজেলা সড়কটি প্রশস্তকরণ ও বাঁক সোজা করতে নেয়া হয় ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার একটি প্রকল্প। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে ২০২০ সালে এর কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে তিন দফায় মেয়াদ বাড়ানোর সঙ্গে প্রকল্পটির বরাদ্দ বেড়েছে ৪০ কোটি টাকা। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি বাঁক সোজা না করেই প্রকল্পের কাজ বুঝিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে সড়কটিতে যাতায়াতকারী চার উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকেই যাচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি ‘বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনুমতি পায়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। পরে দুই দফা মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দও বাড়ানো হয়।
বর্ধিত সময় অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা করা। এজন্য ১১ দশমিক ২৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করার কথা। এতে ব্যয় ধরা হয় ৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। তবে এখনো জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় এ পরিকল্পনা বাদ দিয়েই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চাচ্ছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ কথা জানিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজের পক্ষে হুমায়ূন কবির ওরফে খোকন বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় বাঁক সোজা করা সম্ভব হচ্ছে না।’
স্থানীয়রা জানান, পাইকগাছা ও তালা উপজেলার মধ্য দিয়ে অর্ধশতাধিক বাঁক নিয়ে কয়রা-বেতগ্রাম সড়কটি মিশেছে খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কে। এর মধ্যে ৩০টি বাঁক অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করে সেগুলো সোজা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এখন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ৩০টি বাঁক সোজা না করলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে না।
জানা যায়, খুলনা শহর থেকে বেতগ্রাম পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার পথে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন পৌঁছতে সময় লাগে ৪০ মিনিট। অথচ বেতগ্রাম থেকে কয়রা সদর পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার পথে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা। সড়কের ওই অংশে অতিরিক্ত বাঁকের কারণে সময়ক্ষেপণ হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়রা উপজেলা অংশের সংগ্রামের মোড় এলাকা ও পাইকগাছার লক্ষ্মীখোলা এলাকার দুটি স্থানে বাঁক সোজা করার জন্য বালি ফেলা হয়েছে। কয়রা উপজেলা সদর থেকে দেয়াড়া গোপালের মোড় পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। বাকি ২৮টি স্থানে কোনো কাজ করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তালা বাজারের সামনে ৯০ ডিগ্রি কোণের বিশাল বাঁক রয়েছে। প্রায়ই সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে। বেতগ্রাম পার হয়ে তেঁতুলিয়া মোড়, তালা বাজারের পরে গোনালী বাজার মোড়, ধাপের পুকুর মোড়, দাইপুর শেখ ফরিদের মোড়, আড়ংঘাটা বাজার, নতুন হাটখোলা মোড়, লক্ষ্মীখোলা মোড়, গজালিয়াসহ সব বাঁকেই কাজ অসমাপ্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। আর প্রকল্প থেকে বাঁক সোজা করার বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে, এমনটি নয়। এজন্য জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা চলছে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে জমি অধিগ্রহণের ঝামেলা কাটলে বাঁকগুলো সোজা করা হতে পারে।’