অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগের পরিবেশ সাকাতাকে আকৃষ্ট করে

সাকাতা ইঙ্কস করপোরেশন জাপানভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান, যা ১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান বিশ্বের তৃতীয় সর্ববৃহৎ কালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে স্থাপন করেছে তাদের তৃতীয় কারখানা। মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে কোম্পানিটিকে সেই কারখানা স্থাপনের জন্য ২০১৯ সালে পাঁচ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। সাকাতা এরই মধ্যে  মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে সেখানে 

এস কে ছাবরা

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাকাতা ইঙ্কস (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেড

বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো আপনাদের উৎসাহী করেছে?

বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এখানে অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে দিনে দিনে। একই সঙ্গে শিল্প-কারখানার ক্ষেত্রে উন্নতিটা চোখে পড়ার মতো, যেটি আমাদের এখানে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ জুগিয়েছে। তাছাড়া জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম দেশ। এখানে প্রতিনিয়তই অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা গত চার বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। এখানে আমাদের বিনিয়োগ  মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাছাড়া আমরাই দেশে প্রথম বিদেশী কোম্পানি, যারা খুব সাধারণ জিনিসপত্র (কাঁচামাল) থেকে কালি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে বাংলাদেশে একটি শিল্পের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিও প্রবেশ করল। কারণ সাকাতা বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কালি উৎপাদনের জন্য। তাই কালির বাজার প্রতি বছর ১০-১২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কর্মসংস্থানের কথা বলতে গেলে আমাদের এখানে বর্তমানে ৮৫ জন শ্রমিক কাজ করেন, শিগগিরই এটি ১০০ জনে উন্নীত হবে। যদিও আমাদের বেশির ভাগ কাজই করা হয় অটোমেটিক মেশিনের সাহায্যে। শ্রমিক কম প্রয়োজন পড়ে। তবে ব্যবসা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে কর্মসংস্থানও বাড়তে থাকবে।

মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনাদের অভিজ্ঞতা কেমন?

বেশির ভাগ অর্থনৈতিক অঞ্চলই তাদের নিজস্ব সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করে। আমি মনে করি মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনই একমাত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল, যারা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আন্তরিকভাবে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। তারা এখানে আমাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে আমাদের বেশির ভাগ গ্রাহকের অবস্থান ঢাকায়। ফলে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন ঢাকার কাছে হওয়ায় আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা তৈরি করেছে। এটাও সত্য যে সরকারির তুলনায় বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে খরচ বেশি। তবে মেঘনায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এখানে অবকাঠামো, সড়ক যোগাযোগ খুবই চমৎকার। এখানে বেজা থেকেও বেশ সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাই আমরা সন্তুষ্ট।

বিদেশী কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার প্রকৃতপক্ষে কতটুকু আন্তরিক বলে আপনি মনে করেন?

বেজা খুবই আন্তরিক এবং বাংলাদেশ সরকার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। ভারতে কাজ করতে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেখানকার সরকার যতটুকু সুযোগ-সুবিধা দেয়, বিশেষ করে ভারতরে গুজরাটে তার তুলনায় বাংলাদেশ সরকার অনেক ভালো সুবিধা দিয়ে থাকে। এখানে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহজেই সব রকমের সনদ, অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে গত তিন বছরে বাংলাদেশে কাজ করতে এসে আমার বেশ ভালো কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে, যার মধ্যে বেজার সঙ্গে কাজ করা একটি। তাদের সক্রিয়তা বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্টে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। এখানকার জনগণও কাজের প্রতি নিবেদিত, শিক্ষা ব্যবস্থাও ভালো। সাকাতার বাংলাদেশ কারখানায় সব স্তরেই বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছে।

বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কোনো রকম নীতিগত সহায়তার প্রয়োজন মনে করেন?

আমারই প্রথম বিদেশী কোম্পানি, যারা বালাদেশে কালির ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। এখাতে আমদানির ক্ষেত্রে সাবসিডি দেয়া আছে। বাংলাদেশে কালি আমদানি করতে গেলে ১৫ শতাংশ ডিউটির নীতি রয়েছে। এখন স্থানীয় উৎপাদনক হিসেবে আমাদের সব কাঁচামালই আমদানি করতে হয় এবং এর ডিউটিও দিতে হয়। ফলে আমদানির ক্ষেত্রে ডিউটি এবং স্থানীয় উৎপাদকদের কাঁচামাল আমদানিতে ডিউটির হার রেখে একটি লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা প্রয়োজন। তাহলে আমরা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পারব।

দেশে আপনাদের ব্যবসার আকার কেমন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

বাংলাদেশে ব্যবসার এটি আমাদের প্রথম বছর। তবে আমি বছর শেষে টার্নওভার ১০০ কোটি টাকার বেশি হবে বলে আশা করছি। আমরা খুব ভালোভাবেই আমাদের পণ্য উৎপাদন করছি। স্থানীয় বাজারে পণ্য সরবরাহ করা এবং এখানকার বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এরই মধ্যে ভালোভাবে কাজ করছি। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেবা দিচ্ছি। সাকাতা ইঞ্জিনিয়াররা সবসময় সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। এটি যেহেতু টেকনিক্যাল কাজ ফলে আমরা সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। সাকাতা থেকে কেউ সেবা বা পণ্য নিলে অন্য কোথাও আর যোগাযোগ করতে হয় না, কারণ আমরা গ্রাহকের সব ধরনের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। কারণ আমাদের গ্রাহকের চাহিদার সবটুকু পূরণ করার সক্ষমতা রয়েছে। আমাদের খুবই দক্ষ টেকনিক্যাল টিমও রয়েছে তাত্ক্ষণাত সেবা দেয়ার জন্য। আমরা এখানে প্রাণ গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপসহ বাংলাদেশের শীর্ষ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছি।

বর্তমানে গোটা বিশ্বে অর্থনৈতিক একটা অস্থিরতা বিরাজমান। পরিস্থিতিতে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

গোটা বিশ্বের জন্যই খুব কঠিন একটি সময় এখন। এমন পরিস্থিতিতেও আমরা আমাদের ব্যবসায় সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছি। নিজেদের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে ব্যবসা করতে চাচ্ছি। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। আমি প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তা সবাইকে নিরাপদে রাখুন। কারণ যুদ্ধ প্রত্যেকেরই ক্ষতি করছে। যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি সব শ্রেণীর মানুষকে ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। অন্যদিকে যেকোনো পরিস্থিতিতেই মানুষের কালির প্রয়োজন পড়ছে। ফলে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা সবসময় রয়েছে। যেমন কভিডের সময় আমরা বাংলাদেশে উৎপাদন শুরু করতে পারিনি। তবে ভারতের কারখানা থেকে উৎপাদিত কালি অন্য সময়ের চেয়ে বেশি বিক্রি করেছি আমরা। কারণ তখনো চাহিদা কম ছিল না।

বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে মেঘনার প্রতি আপনি কী বার্তা দেবেন? বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরই বা কী পরামর্শ দেবেন এখানে বিনিয়োগের জন্য?

ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষকে সবসময়ই বিনিয়োগকারীদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং তাদের স্বস্তিতে ব্যবসার সুযোগ তৈরি করার ওপর জোর দেয়া উচিত। কখনো যদি কর্তৃপক্ষ তাদের সেবাদানে কার্পণ্য করে তাহলে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। অন্যদিকে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনোমিক জোন একেবারেই নতুন। ফলে সবসময় বিনিয়োগকারীদের সুবিধার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার বিকল্প নেই। আমি আমার জায়গা থেকে বলতে পারি, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ খুবই আন্তরিক। তাদের কার্যক্রম খুবই গোছানো, তারা বিনিয়োগকারীদের প্রতি খুবই যত্নশীল। ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এখানে স্বচ্ছন্দে বিনিয়োগ করতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন