মেঘনা বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা

সিএইচটি গ্লোবাল ৭০ বছর ধরে কাজ করছে। আমাদের এজেন্ট আরএইচ করপোরেশনের মাধ্যমে ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশে আমাদের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় কলকারখানা, শিল্প-কারখানা, টেক্সটাইল খাতকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে সহায়তা দিতে এখানে একটি কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএইচটির ম্যানেজমেন্ট। আশা করছি, আগামী জুনে আমাদের ফ্যাক্টরিটা অপারেশনে যাবে

প্রদীপ কুমার ধর

জেনারেল ম্যানেজার, সিএইচটি বাংলাদেশ লিমিটেড

সিএইচটি বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের মূল পণ্য কী?

সিএইচটি বাংলাদেশকে নিয়ে বলার আগে সিএইচটি গ্লোবালকে নিয়ে বলতে চাই। টেক্সটাইল পণ্যকেন্দ্রিক বহুজাতিক কোম্পানি সিএইচটি গ্লোবাল। এটি কেমিক্যাল নিয়েও কাজ করে। আমাদের এজেন্ডা হচ্ছে সাসটেইনেবল কেমিক্যাল (টেকসই রাসায়নিক) উৎপাদন। আবার আমরা যে কেবল কেমিক্যাল বানাই বা সাপ্লাই করি এমন নয়, কেমিক্যালভিত্তিক কলকারখানাগুলোকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিই এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। আমরা টেকসই পণ্যকে আমাদের মূল কাঠামো হিসেবে দেখি। গ্রাহকদের কীভাবে ডে-টু-ডে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারি সেটিই আমাদের লক্ষ্য। গ্রাহকরা কেমিক্যাল নিয়ে কারখানায় যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সেগুলোর ক্ষেত্রে সেবা দেয়াই আমাদের কাজ।

সিএইচটি গ্লোবাল ৭০ বছর ধরে কাজ করছে। আমাদের এজেন্ট আরএইচ করপোরেশনের মাধ্যমে ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশে আমাদের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় কলকারখানা, শিল্প-কারখানা, টেক্সটাইল খাতকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে সহায়তা দিতে এখানে একটি কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএইচটির ম্যানেজমেন্ট। আমাদের যে গ্রাহক রয়েছেন, তাদের আরো কাছ থেকে সহায়তা দিতে এবং বাংলাদেশের যেগ্রোথ মোমেন্টামতৈরি হয়েছে তাকে আরো ভালোভাবে সিএইচটি সাপোর্ট দিতে পারে। আশা করছি, আগামী জুনে আমাদের ফ্যাক্টরিটা অপারেশনে যাবে।

কী পরিমাণ বিনিয়োগ করছেন এখানে?

মুহূর্তে এখানে আমাদের বিনিয়োগ হিসাব করেছি মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদি দেখি বাংলাদেশের মার্কেটটা আমাদের খুব ভালোভাবে রেসপন্স করছে, তখন গ্রুপ অবশ্য আরো বেশি কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেবে।

কর্মসংস্থান কেমন হচ্ছে?

আমাদের কারখানা শ্রমঘন নয়, প্রযুক্তিনির্ভর। আমাদের কাজগুলোর অধিকাংশই প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হয়। তাই প্রথম ফেজে এখানে ৩৫ জনের কর্মসংস্থান হবে।

যে কেমিক্যাল উৎপাদন করেন, বাংলাদেশে এর বার্ষিক চাহিদা কেমন?

বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিগুলো একটি ভালো সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটি আরো বিকাশ লাভ করবে। খাতের একটা বড় অংশই আমাদের গ্রাহক। দেশের টেক্সটাইল সেক্টর যদি ৫০ বিলিয়ন হয় তাহলে এর - শতাংশই টেক্সটাইল কেমিক্যাল নিয়ে। তাই এখানে একটা ভালো সুযোগ রয়েছে।

দেশে সরকারি-বেসরকারি আরো অর্থনৈতিক অঞ্চল থাকতে আপনারা মেঘনাকেই কেন বেছে নিলেন?

একটা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বাছাই করতে সিএইচটি গ্রুপ তিনটি মানদণ্ডকে মূল্যায়ন করে থাকে। একটা হচ্ছে অঞ্চলের অবস্থান, দ্বিতীয়ত, অবকাঠামো উন্নয়ন, আর তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক অঞ্চলটি যারা পরিচালনা করছে তাদের সক্ষমতা, ম্যানেজমেন্ট, বিহাইন্ড দ্য সিন ম্যানেজমেন্ট এক্সপার্টাইজ কেমন? তিনটি বিষয় বিবেচনা করে সিএইচটির মনে হয়েছে, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন উইল বি দ্য রাইট চয়েস ফর দেম।

এখন পর্যন্ত আপনাদের অভিজ্ঞতা কী?

মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় এখন পর্যন্ত আমরা সন্তুষ্ট এবং তাদের ব্যবস্থাপনা টিমও প্রকৃতপক্ষে সক্ষম। এদের বিশেষায়িত বিশেষজ্ঞও আছে। একটা অর্থনৈতিক অঞ্চল চালানোর জন্য এবং বিনিয়োগকারীদের সেবা দেয়ার সক্ষমতা মেঘনার আছে। তাদের অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন তাও সন্তোষজনক। তাদের সেন্টার ইটিপি সিস্টেম, সেন্টার ফায়ার ব্রিগেড আছে, রাস্তাগুলো অনেক প্রশস্ত, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভালো এখানে। সুতরাং আমরা এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট।

পরিকল্পিত শিল্পায়নের লক্ষ্য নিয়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার লক্ষ্য সরকারের। এখন পর্যন্ত যে কয়টি হয়েছে, ওইসব অঞ্চলের বিনিয়োগ আকর্ষণ সম্পর্কে কোনো মেসেজ আছে কি? মানুষ কেন এখানে বিনিয়োগ করবে? এর বাইরেও তো বিনিয়োগ করা যায়।

অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির জন্য সরকারের যে উদ্যোগ, এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমি মনে করি, দেশের একটা সফলতার গল্প এটি। তাছাড়া বেজার অধীনে যে ওয়ান স্টপ সলিউশন (ওএসএস) আছে, তারাও খুব সাপোর্টিভ। এখানে একজন বিনিয়োগকারী সহায়তার জন্য তাদের কাছে গেলে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। 

দেড় বছর ধরে দেশে কাজ করেছেন। এখন পর্যন্ত কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে?

চ্যালেঞ্জ থাকবেই। পৃথিবীতে মুহূর্তে সব জায়গাতেই, প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। আপনি যেকোনো খাতেই যান সেখানেই চ্যালেঞ্জ দেখতে পাবেন। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সেগুলোকে কীভাবে প্রশমন করছি, কমিয়ে আনছি। আমাদের দেশে বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে, যারা সহায়তা করছে। মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন এবং বেজাও আমাদের প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

বলতে চাচ্ছি, আপনাদের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোন কোন ইস্যু সবচেয়ে বেশি মোকাবেলা করতে হয়েছে?

আমি এগুলোকে ইস্যু বলব না, এগুলোকে অপরচুনিটি বলব। বাংলাদেশে আমরা এসেছি নতুন সংগঠন হিসেবে। কোম্পানির সেটআপ থেকে শুরু করে এনভায়রনমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, বয়লারাইজেশন সার্টিফিকেটসহ নানা ধরনের কাজ সম্পন্ন করতে তারা (বেজা) আমাদের সহায়তা করেছে। বাংলাদেশে রুলগুলো নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে, আমি যদি রুলগুলো ফলো করি, তাহলে আর কোনো ইস্যু থাকে না। আর আমলাতন্ত্র পৃথিবীর সব জায়গায় রয়েছে।

আপনাদের যে পণ্য সেটি কি বাংলাদেশে আর কেউ তৈরি করে?

আমি যতটুকু জানি, বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে আমরাই প্রথম। আর লোকাল কিছু কোম্পানি কেমিক্যালের একটা অংশ তৈরি করে থাকে। তাছাড়া ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এখনো আমদানি হয়। আর এটা যেহেতু ব্যাক টু ব্যাক এলসিতে আমদানি হয়, আমরা যদি লোকাল ম্যানুফ্যাকচারিং করি তাহলে সাসটেইনেবিলিটির দিক থেকে এটি ভালো বিষয় হবে।

বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ফ্যাসিলিটি নিয়ে যারা আমদানি করছে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে?

এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। কিন্তু চ্যালেঞ্জ থাকলে অপরচুনিটিও থাকে।

আপনারা কি প্রডাকশন কস্টটা সেই মাত্রায় নামিয়ে আনতে পারছেন? অবশ্যই, আমাদের বিশ্বাস আমরা এখানে উৎপাদন করে রিডিউস কস্টে টিকে থাকতে পারব।

এটা কি শুধুই বিশ্বাস? নাকি ম্যাটেরিয়ালিস্টিকভাবে পসিবল?

এটি পানিভিত্তিক পণ্য। যখন তারা (এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড ইন্ডাস্ট্রি) আমদানি করছে তখন কিন্তু তারা পানি আমদানি করছে। আমি যখন লোকাল উৎপাদনে যাব, আমাকে কিন্তু পানি আমদানি করতে হচ্ছে না। এটা আমাদের আমদানির জন্য সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন