বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দ মেঘনার অর্থনৈতিক অঞ্চল

মেঘনা গ্রুপের কুমিল্লা ইকোনমিক জোন ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় চররমজান সোনাউল্লাহ মৌজায় ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল। ২৪৫ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা অঞ্চলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। মাটি ভরাট, সীমানাপ্রাচীর, শিল্প-কারখানার উপযোগী ম্যানহোল, শ্রমিকদের আবাসস্থান, সুয়ারেজ লাইন, এসটিপি, ইটিপি নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে সেখানে ১০টি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত দেশের প্রথম বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা ৮৯৪ মিলিয়ন ডলার। দেশী বিনিয়োগের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিদেশী কোম্পানিও বিনিয়োগ করেছে এখানে। এখন পর্যন্ত কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে শক্তিশালী বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের বৃহত্ ফাইন্যান্সিং কোম্পানি ফাইন্যান্সারদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। বিশেষ করে প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মেঘনা পিভিসি লিমিটেড, সোনারগাঁ সোলার এনার্জি লিমিটেড, এমপিপি পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেড, মেঘনা এডিবল অয়েলস রিফাইনারি লিমিটেড, মেঘনা পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস লিমিটেড, সোনারগাঁ ফ্লাওয়ার অ্যান্ড ডাল মিলস লিমিটেড, তাসনিম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড, মেঘনা কনটেইনার টার্মিনাল লিমিটেড, মেঘনা বলপেন অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড।

দেশের সর্বাধুনিক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার অনুমতি পায় মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল। প্রথমে ৭১ একর জায়গা নিয়ে অঞ্চলের যাত্রা। পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগ বাড়ায় আরো ৩৯ একর বাড়ানো হয়। ভবিষ্যতে আরো ১৩ একর বাড়িয়ে ১২৩ একর করার পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। অর্থনৈতিক অঞ্চলে এরই মধ্যে কর্মসংস্থান হয়েছে আট হাজার লোকের।

সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়ার ইউনিয়নে টিপর্দি এলাকায় অবস্থিত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে পানীয়, খাদ্যসামগ্রী, ফাইবার ব্যাগ, ইষ্পাত কারখানা, প্যাকিজিং, ফার্মাসিউটিক্যাল, গার্মেন্টস, রাসায়নিক কারখানা।  এর মধ্যে দেশী কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনিক সিমেন্ট ফাইবার  ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, সোনারগাঁও স্টিল ফেব্রিকেট লিমিটেড, মেঘনা নুডলস অ্যান্ড বিসড়ুট ফ্যাক্টরি লিমিটেড, সোনারগাঁও প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, টেকলিপ লিমিটেড, মেঘনা বালড় ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেঘনা ফয়েল প্যাকেজিং লিমিটেড, মেঘনা স্টার কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, থাই ফয়েল অ্যান্ড পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এসটুএস কেমিকেল।  বিদেশী কোম্পানিগুলোর মধ্যে টিক ম্যানুফ্যাকচারিং (বাংলাদেশ) লিমিটেড, টিক ইন্ডাস্ট্রিজ (বাংলাদেশ) লিমিটেড, সিগওয়ার্ক বাংলাদেশ লিমিটেড, সিকা বাংলাদেশ লিমিটেড, সাকাতা ইক্স বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড, ইসমার্টু টেকনোলজি বিডি লিমিটেড, সান ফার্মাসিউটিক্যালস ইজেড লিমিটেড, যতুন বাংলাদেশ লিমিটেড, সিএইচটি বাংলাদেশ লিমিটেড, ডিআইসি বাংলাদেশ, এমবি সলুশানস বিডি লিমিটেড তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর পাশেই দেশের সর্বাধুনিক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মহাসড়ক ছাড়াও চার কিলোমটাির দূরে রয়েছে নদীপথ এবং ২৩ কিলোমিটার দূরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রয়েছে বিদ্যুত্, পানি, গ্যাসের সুবিধা।

এমআইইজেড সূত্রে জানা গেছে, ৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যাত্রা করে এরই মধ্যে ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ সম্ভব হয়েছে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে। এর মধ্যে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে ১০ কোটি ডলার। কর্তৃপক্ষ আশা করছে পুরোপুরি চালু হলে বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১৬ হাজার মানুষের।

ইকোনমিক জোনের কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, জার্মানির চারটি প্রতিষ্ঠান সেখানে পণ্য উত্পাদন শুরু করেছে। এছাড়া শিগগিরই উত্পাদনে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, চীন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশসহ আটটি দেশের মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক অঞ্চলে উত্পাদন শুরু করেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায় এবং পণ্য উত্পাদনের জন্য সব সুবিধা চালু থাকায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চলে।

২০১৮ সালের শেষের দিকে মেঘনা বেভারেজ প্রথম পণ্য উত্পাদন করে অর্থনৈতিক অঞ্চলে। বিদেশী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠান প্রথম উত্পাদনে যায়। এরই মধ্যে ফ্যাক্টরি তৈরি করার জন্য প্রায় সব প্লট বরাদ্দ হয়ে গেছে। মাত্র দুই একরের একটি প্লট খালি আছে। তবে বিনিয়োগকারীদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি অংশে আরো ১৪টি প্লট থাকবে।

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার সোনারচরে তৃতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছে মেঘনা গ্রুপ। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল বেজার কাছ থেকে কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল চূড়ান্ত সনদ পায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মেঘনা উপজেলায় মেঘনা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ১১৫টি প্লটে ২৪৬ দশমিক একর জমি রয়েছে। এর বেশির ভাগই হাজার ৪৬ দশমিক ৮৬ বর্গমিটারের প্লট। দ্রুতই অঞ্চলটিকে ৩৫০ একরে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে মেঘনার।

অঞ্চল কর্তৃপক্ষ জানায়, কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পরিপূর্ণভাবে তৈরি হলে এখানে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। এখানে প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। শতভাগ সবুজ শিল্পায়নের মাধ্যমে এখানে গড়ে উঠবে টেক্সটাইল, টেক্সটাইল অ্যাকসেসরিজ, আরএমজি, আরএমজি অ্যাকসেসরিজ, কেমিক্যাল, স্টিল, গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি।

মেঘনা গ্রুপ জানায়, অঞ্চলটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে কারখানা, প্রশাসনিক ভবন, পণ্যাগার, লজিস্টিক এলাকা, পানি বর্জ্য শোধনাগার, সড়ক অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমির কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মেঘনার। কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে অঞ্চলে পণ্য উত্পাদনে যাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বলছে, একটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন থেকে শুরু করে ভবন তৈরিতে এক বছরের মতো সময়ের প্রয়োজন। অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্যে যত ইউটিলিটি-ফ্যাসিলিটির প্রয়োজন, তা সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব। এরই মধ্যে অঞ্চলের সীমানাপ্রাচীর তৈরি শেষ হয়েছে। বিদ্যুতের ব্যবস্থার জন্য পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডকে জমি দেয়া হয়েছে। তারা সেখানে স্টেশন বসাবে। গ্যাস সরবরাহও প্রক্রিয়াধীন। তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গ্যাস সরবরাহ করবে। পানির ব্যবস্থার জন্য থাকবে বেশকিছু উপায়। মেঘনা নদীর পাড়ে হওয়ায় মেঘনার শাখা নদী থেকে পানি নিয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বসানো, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার ভূগর্ভস্থ পানিও উত্তোলন করে সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে।

এছাড়া পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে এখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অগ্নিনির্বাপক পরিষেবা, ইনভেস্টর রিক্রিয়েশন ক্লাব, কনভেনশন হল, পৃথক গাড়ি পার্কিং লট এবং মেডিকেল ডে-কেয়ার সেন্টার থাকবে। অঞ্চলের অভ্যন্তরে হেলিপ্যাড, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, আবাসিক ভবন পার্কের মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। আগের দুই অঞ্চলের পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে তারা। এরই মধ্যে অঞ্চলে ফ্যাক্টরি তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানির বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও এখানে বিনিয়োগ করতে চায় বলেও অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন