দেশের শিল্পায়নে অনেক বড় ফুটপ্রিন্ট রাখতে যাচ্ছে সিটি গ্রুপ

সিটি গ্রুপ মোট তিনটা বেসরকারি ইকোনমিক জোনের ডেভেলপার। মেঘনা গ্রুপও তিনটা ইকোনমিক জোনের ডেভেলপার, বসুন্ধরা গ্রুপ আছে, আরো অনেক গ্রুপ আছে। বাংলাদেশ অনেক ভালো করেছে এফডিআই আকর্ষণের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশে ভোগ্যপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সিটি গ্রুপের খুব সুনাম আছে। সয়াবিন তেল হোক বা আটা, ময়দা, চিনি অথবা পশুখাদ্য মোট চাহিদার ৩০-৪০ শতাংশ একাই সরবরাহ করে। বলা যায় ছয় কোটি মানুষের চাহিদা একাই পূরণ করে সিটি গ্রুপ। খাতের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি ইকোনমিক জোনে আছে। সিটি ইকোনমিক জোনে তা পুরোপুরি সংযুক্ত। প্রথম যেটা লাইসেন্স পায় সেখানে সবগুলোয় সিটি গ্রুপের নিজস্ব বিনিয়োগ। পরবর্তী সময়ে হোসেন্দী প্রাইভেট ইকোনমিক জোনে ঢাকা সুগার মিল, পেপার মিল, এলপিজি হয়েছে, এখন সিমেন্ট মিল হচ্ছে। সেখানে শিপ বিল্ডিং হয়েছে। জায়গায় কিছু জয়েন্ট ভেঞ্চার হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আছে। এরই মধ্যে একটা কারখানা চালু আছে আর একটি শিপ বিল্ডিং চালু হয়েছে

পবন চৌধুরী

প্রধান উপদেষ্টা, সিটি গ্রুপ

 

অর্থনৈতিক অঞ্চল ধারণা বাস্তবায়নের শুরু থেকেই আপনি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা কেমন?

আমি বলব এটা খুবই উৎসাহমূলক। বাংলাদেশের শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক কাঠামো পুরোপুরি পরিবর্তন করার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে একটা আইন করে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অ্যাক্ট ২০১০ এর আগেও বাংলাদেশে শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার জন্য চেষ্টা হয়েছে এবং বাংলাদেশের মতো চেষ্টা খুব কম দেশে হয়েছে। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্টের সময়ে যখন শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তখন বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প করপোরেশন) হয়। সেটা খুব বড় একটা উদ্যোগ বলে আমি মনে করি এবং একটি মৌলিক উদ্যোগ। সেখান থেকে ধীরে ধীরে অর্থনীতি বড় হতে থাকে। ১৯৮০ সালে তৎকালীন সরকার নতুন একটা আইন নিয়ে আসে। বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অ্যাক্ট। তখন অন্য অনেক দেশ মডেলে সফল হচ্ছিল। এক্সক্লুসিভ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন করে তারা তাদের দেশের এক্সপোর্ট বাড়ানোর ক্ষেত্রে সফলতা পাচ্ছিল। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো যাদের অতিরিক্ত মূলধন ছিল তারা অন্য দেশে বিনিয়োগ করে মূলধন বাড়ানো বা সম্পদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। সেই সুযোগটা করে দেয়ার জন্য বাংলাদেশও কাজ করে। এতে আরেকটা কাজ হয়, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে তখন এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন হতে থাকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এরপর আর বাংলাদেশে কোনো এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন হয়নি। 

তারপর এসে বিওআই হয় ১৯৮৯-এ। ১৯৯৬ তে আরেকটা আইন হয়, বেসরকারি ইপিজেড প্রতিষ্ঠা। আমি বলব এটা সরকারের আরেকটা সাহসী পদক্ষেপ, যে ব্যক্তিও ইপিজেড প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। কিন্তু ভালো উদ্যোগ হওয়া আর ভালো ফল পাওয়া কিন্তু এক না। যেকোনো কারণে হোক যে সম্ভাবনা নিয়ে এটা তৈরি হয়েছিল, তা আর এগোয়নি। এখনো একটা বেসরকারি ইপিজেডই আছে। সেটাও যে পুরো সম্ভাবনা নিয়ে বাস্তবায়ন হয়েছে, তা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবে না। একজন কোরিয়ান বিনিয়োগকারী চট্টগ্রামের আনোয়ারায় তা বাস্তবায়ন করেন, এরপর দ্বিতীয় কোনো বেসরকারি ইপিজেড হয়নি। এরপর আরেকটা অথিরিটি তৈরি হয়। ২০১১ সালে সৃষ্টি হয় বেজা (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) 

দেশের সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলোয় ১০০টি ইকোনমিক জোন করার জন্য একটা নীতিগত অবস্থান আমরা ঘোষণা করেছি। তার মধ্যে প্রায় ২৮টি ইকোনমিক জোন হয়েছে। ৯৭টি সাইট সিলেকশন হয়েছে। এগুলো করতে গিয়ে আমরা বুঝেছি, জায়গাতেও সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি খুব বেশি প্রয়োজন। এবং এটার ফলোআপ প্রয়োজন। সরকারের সহায়তা ছাড়া যা সম্ভব না। অথরিটির কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু অনেক জায়গায় অথিরিটি থাকে না। অনেক জায়গায় চাইলেও অনেক কিছু করা যায় না, আবার চাইলে যে অনেক কিছু করা যায় তার প্রমাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর। যেটা অনেক সক্ষমতা নিয়ে তৈরি হচ্ছে। বলা যায় একাই একশটি ইকোনমিক জোনের সমান। জাপান ইকোনমিক জোন, চাইনিজ ইকোনমিক জোন হচ্ছে, ইন্ডিয়ান ইকোনমিক জোন হচ্ছে, অনেক প্রাইভেট ইকোনমিক জোন হচ্ছে। বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত লাইসেন্স হয়েছে ১২টির এবং প্রাথমিক লাইসেন্স হয়েছে আরো নয়টির। মোট ২১টি বেসরকারি ইকোনমিক জোন, এর মধ্যে সিটিসহ ১১টি উৎপাদনে আছে।

আমরা বিসিক করেছি, ইপিজেড করেছি, বিওআই করেছি, বেসরকারি ইপিজেড করেছি। আমরা বারবার রকম বদলাচ্ছি, প্রক্রিয়া বদলাচ্ছি, কিন্তু মূল লক্ষ্য একটাই, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, অ্যাডভান্স প্রযুক্তি নিয়ে আসা। হ্যাঁ, একটি বিষয়ে কথা হতে পারে, এতগুলো অথিরিটি প্রয়োজন ছিল কিনা। সরকারের এতগুলো অথিরিটি না করে, ব্যয় বৃদ্ধি না করে, কীভাবে এক ছাতার নিচে ভিন্ন ভিন্ন মডেলের শিল্পাঞ্চল গঠন করা যায়, সেটি দেখা যেত। এখনো করা যায় কিনা ভাবতে হবে।