সিটি গ্রুপের রয়েছে তিন অর্থনৈতিক অঞ্চল

সিটি গ্রুপের হোসেন্দি ইকোনমিক জোন ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সিটি ইকোনমিক জোন। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের অত্যাধুনিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের যাত্রা ২০১৯ সালের এপ্রিলে। যদিও ব্যক্তিমালিকানাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে সিটিকে ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি লাইসেন্স দেয় বেজা। ৭৭ দশমিক ৯৬ একরের ভূমিতে এরই মধ্যে সিটি ইকোনমিক জোনের অবকাঠামো উন্নয়নে ৭৬০ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে বিশ্বব্যাংকসহ দেশের বেসরকারি আট ব্যাংক দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ৩৪০ কোটি টাকা, যা আইপিএফএফ টু প্রকল্পে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে দুই কিলোমিটার ভেতরে শীতলক্ষ্যার তীরে ৭৭ দশমিক ৯৬ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে সিটি ইকোনমিক জোন। এরই মধ্যে সেখানে কয়েকটি শিল্প ইউনিট তাদের কারখানা স্থাপন করেছে। সেগুলো হচ্ছে সিটি অটো রাইস অ্যান্ড ডাল মিলস লিমিটেড, সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (ইউনিট-), সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড, সিটি পলিমার লিমিটেড, রূপসী ফিড মিলস লিমিটেড, রূপসী ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড, রূপসী ফুডস লিমিটেড। বাকি অঞ্চলেও মাটি ভরাট, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণসহ নানা কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে সিটি ইকোনমিক জোন দেশে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।

অন্যসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো সিটি ইকোনমিক জোনেও পরিবেশগত দিক বিবেচনায় নিয়ে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী সিটি গ্রুপ। সয়াবিনবীজ থেকে তেল সয়ামিল, চিনি থেকে চকোলেট বিস্কুটভোগ্যপণ্য উৎপাদনের বড় হাবে পরিণত হয়েছে সিটি ইকোনমিক জোন। অত্যাধুনিক যন্ত্র প্রযুক্তির মাধ্যমে কাঁচামাল সংগ্রহ, পণ্য উৎপাদন খালাস হচ্ছে হাতের স্পর্শ ছাড়াই। দৈনিক পাঁচ হাজার টন সয়াবিনবীজ ক্রাশিং ইউনিটে মিলছে এক হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং চার হাজার টন সয়ামিল। দেশের চিনির চাহিদার বড় একটি অংশের জোগানও দিচ্ছে সিটি ইকোনমিক জোন। শুধু তাই নয়, নেদারল্যান্ডসের মেশিনারিজ প্রযুক্তির সহায়তায় রূপসী ফিড মিলে দৈনিক তিন হাজার টন প্রাণিখাদ্য প্রস্তুত হচ্ছে। এসব শিল্পের পাশাপাশি সিটি ইকোনমিক জোনে গড়ে উঠেছে পানীয় কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পও।

দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী সিটি গ্রুপের অধীনেহোসেন্দীনামেও আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। ২০১৮ সালে সেটি প্রাকযোগ্যতা সনদ পায় এবং ২০২০ সালে অর্জন করে পূর্ণ সনদ। হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলটি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার চর বেতাকি, ভবানীপুর, রগুরচর হোসেন্দী মৌজায় ১০৮ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত। এটি মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জামালদী বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র দশমিক কিলোমিটার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে হোসেন্দীর দূরত্ব ২১৭ কিলোমিটার।

হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাস্টারপ্ল্যানে শিল্প এলাকা হিসেবে ৬৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ, বিশেষায়িত অবকাঠামো দশমিক ৫১, ইউটিলিটি ১৭ দশমিক ১০ অ্যামেনিটিস দেখানো হয়েছে ১৫ শতাংশ। গ্রিন ইকোনমিক জোন ধারণা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মূল পরিকল্পনায় যথেষ্ট পরিমাণ উন্মুক্ত স্থান এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি), সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ (এসটিপি) শিশুযত্ন কেন্দ্রের জন্য নির্দিষ্ট স্থান রাখা হয়েছে। তাই প্রাথমিকভাবে ১০৮ একরের মধ্যে এটি গড়ে তোলা হলেও ১৫০ একর জায়গায় অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এটি উন্নয়নে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে সিটি গ্রুপ। তারা বলছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে বিনিয়োগকারীরা নৌ-পথে খুব ভালো যোগাযোগ সুবিধা পাবেন। সিটি গ্রুপ নিজস্ব যৌথ উদ্যোগে এতে বিনিয়োগ করবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও জমি দেয়া হবে।

এরই মধ্যে অঞ্চলে সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমেটেড, সিটি পলিমার লিমিডেট, ঢাকা সল্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল লিমিটেড, ঢাকা সুগার লিমিটেড, ইউকে বাংলা পেপার লিমিটেড, ইউকে বাংলা সিমেন্ট লিমিটেড, সিটি এলপিজি লিমিটেড হোসেন্দী শিপ বিল্ডিং লিমিটেডের কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পেপার মিলটিও হবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে, যেখানে প্রতি বছর উৎপাদন করা হবে লাখ ৩০ হাজার টন কাগজ। উৎপাদন করা হবে সব ধরনের টিস্যু পেপারও। উৎপাদিত পণ্যের একটা বড় অংশ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির পরকিল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

প্রতি বছর তিন হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন ৫০-৬০টি লাইটার জাহাজ তৈরি করতে সক্ষম মুন্সিগঞ্জের মেঘনা পাড়সংলগ্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে থাকা হোসেন্দী শিপ বিল্ডিং লিমিটেড। ঢাকা সুগার লিমিটেড কারখানাটি বছরে ১৩ লাখ টন চিনি পরিশোধনে সক্ষম। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিরতিহীন উৎপাদন চালু রাখার জন্য ১২৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার নিজস্ব পাওয়ার প্লান্ট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে প্রায় ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছে এর স্বত্বাধিকারী সিটি গ্রুপ। 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নে অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাকযোগ্যতা সনদ পেয়েছে পূর্বগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল। বেজার অনুমোদন পেলে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন তৃতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে এটি। প্রাথমিকভাবে ৯৪ একর দিয়ে শুরু হলেও ক্রমান্বয়ে ১৫০ একরে উন্নীত করা হবে পূর্বগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চলকে। সেখানে স্টিল মিলস, কেমিক্যালস এবং সিরামিক পণ্য খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। লক্ষ্য সামনে রেখে টেকসই পরিবেশবান্ধব শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে পরিকল্পনা করেছেন উদ্যোক্তারা।

যোগাযোগের দিক থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি অত্যন্ত সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে থাকায় নৌ সড়কপথে যোগাযোগের সুব্যবস্থা রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটির অবস্থান রাজধানী থেকে ২৫ কিলোমিটার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে।

অঞ্চল কর্তৃপক্ষ জানায়, পূর্বগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এর মাধ্যমে প্রায় ১১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এরই মধ্যে প্রাকসমীক্ষার কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন কেবল চূড়ান্ত সনদের অপেক্ষা। সেটি পেলেই শুরু হবে শিল্প নির্মাণের কাজ। ঢাকার নিকটবর্তী স্থানে হওয়ায় অঞ্চলে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন