মিউচুয়াল ফান্ড

বড় ভূমিকা নেয়ার আগেই কেলেঙ্কারিতে চুপসে যাচ্ছে

মেহেদী হাসান রাহাত

দেশে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের যাত্রা শুরু চার দশকেরও বেশি আগে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না খাতটির পারফরম্যান্স। প্রশ্নবিদ্ধ বিনিয়োগ হতাশাজনক রিটার্নের কারণে মিউচুয়াল ফান্ডে দিন দিন আগ্রহ হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ বিদেশে পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও অনিয়মে এগিয়ে দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাত। সামনের দিনগুলোয় মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট আরো তীব্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন তারা।

সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম মিউচুয়াল ফান্ড। বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এসব ফান্ডের অধীনে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকে, যা পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেন সম্পদ ব্যবস্থাপকরা। পুঁজিবাজারের সংকটকালে বাজার স্থিতিশীলতায়ও ফান্ডগুলো ভূমিকা রেখে থাকে। যদিও বৈশ্বিক চিত্রের বিপরীত অবস্থা বাংলাদেশে। আকারে ছোট হওয়ায় দেশের পুঁজিবাজারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর। এমনকি বাজারের সংকটকালেও ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে এসব ফান্ড।

চার দশকেও বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গায় পৌঁছতে পারেনি মিউচুয়াল ফান্ড। তহবিলের অর্থ বিভিন্ন তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যদিও এর বিপরীতে তেমন কোনো রিটার্ন আসছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্তেও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিতে আইন লঙ্ঘন করে মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগের বিষয়টি উঠে এসেছে। এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে আকর্ষণীয় রিটার্নও পাননি বিনিয়োগকারীরা। সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে দুটি বাদে বাকি ৩৪টি এখন ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হচ্ছে। এছাড়া ১৪টি ফান্ডের বাজারমূল্যে নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) এখন ১০ টাকার নিচে রয়েছে।

দেশে বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ডের অধীনে ব্যবস্থাপনাধীন মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপনাধীন সম্পদ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপনাধীন সম্পদ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালিত ইউনিট ফান্ডের সম্পদ রয়েছে হাজার ৬৪০ কোটি টাকার। দেশে বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ১১৯টি। এর মধ্যে মেয়াদি বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড আছে যথাক্রমে ৩৬টি ৮৩টি। বিএসইসি অনুমোদিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বর্তমানে ৫৮।

সম্পদের পরিমাণের দিক দিয়ে দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের শীর্ষ অবস্থানে আছে আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (এএমসিএল) প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনাধীন ফান্ডে সম্পদের পরিমাণ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। হাজার ৯৩০ কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে এর পরের অবস্থানে রয়েছে রেস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল। তৃতীয় অবস্থানে থাকা এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনাধীন সম্পদের পরিমাণ ৯২০ কোটি টাকা। ৫৮০ কোটি টাকার সম্পদের ভিত্তিতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে এইমস অব বাংলাদেশ। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের কাছে রয়েছে ২৯০ কোটি টাকার সম্পদ। এছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে থাকা সম্পদের পরিমাণ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।

বৈশ্বিকভাবে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো। বাজারে বিক্রয় চাপ তীব্র হয়ে উঠলে তখন মিউচুয়াল ফান্ডগুলো শেয়ার কিনে নেয়ার মাধ্যমে সেটিকে প্রশমিত করে। এজন্য মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিময়যোগ্য সম্পদ মোট বাজার মূলধনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। দেশের পুঁজিবাজারে এখন তারল্য সংকট চলছে। দৈনিক গড় লেনদেন ৫০০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। পরিস্থিতিতেও কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না মিউচুয়াল ফান্ড। দেশে খাতটির বিনিয়োগযোগ্য মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গতকালের বাজার মূলধনের শতাংশ।

দৈন্যদশার মধ্যেই আবার সাম্প্রতিক সময়ে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের অর্থ আত্মসাৎ বিদেশে পাচারের বেশকিছু অভিযোগ সামনে এসেছে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস (ইউএফএস) লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনাধীন ইউএফএস আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস পদ্মা লাইফ ইসলামিক ইউনিট ফান্ড ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড থেকে ১৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসির তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে ভুয়া কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগ দেখিয়ে ৫৮ কোটি ৯০ লাখ, ভুয়া এফডিআর এমটিডিআরের মাধ্যমে ৪৭ কোটি ৯২ লাখ এবং শেয়ার বিক্রির পর বেআইনিভাবে অর্থ উত্তোলন স্থানান্তরের মাধ্যমে ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) বেশি দেখানোর মাধ্যমে ম্যানেজমেন্ট ফি ট্রাস্টি ফি বাবদ কোটি ৮২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে চার ফান্ড থেকে ১৭৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগের সুদ, এফডিআর এমটিডিআরের সুদ এবং অতিরিক্ত আদায় করা ফি বাবদ ইউএফএসের কাছে ২৩৫ কোটি আদায় করার বিষয়ে সুপারিশ করেছে বিএসইসির তদন্ত কমিটি। এক্ষেত্রে অর্থের পরিমাণ নির্ধারণে বিশেষ নিরীক্ষার সুপারিশ করেছে কমিটি। এরই মধ্যে ইউএফএসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীর চার ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পালিয়ে গেছেন।

গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় ইউএফএসের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অন্যান্য কর্মকর্তা, ট্রাস্টি, কাস্টডিয়ান নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি ইউএফএস লিমিটেডের নিবন্ধন সনদ কেন বাতিল হবে না সেজন্য নোটিস জারি করা হবে। অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত ইউএফএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীর তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২- মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে ইউএফএসের পরিচালক, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও এর আওতায় আনা হবে। ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি হিসেবে আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা অনুযায়ী পরিচালক, কর্মকর্তাসহ ইউএফএস-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাচার করা তহবিল, অপরাধলব্ধ আয়, অবৈধ ব্যয় বা অনাদায়ী অর্থ পুনরুদ্ধার বা পুনর্ভরণের জন্য বিশেষ নিরীক্ষার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ফান্ডের ট্রাস্টি কাস্টডিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায়ে আইসিবির ট্রাস্টি কাস্টডিয়ান বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও কেন শাস্তির মুখোমুখি করা হবে না, সে বিষয়েও নোটিস জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি আলোচিত চার ফান্ডের বিধিবদ্ধ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানি এবং রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কোম্পানির সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আলোচ্য দুই নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এগুলোর অংশীদারদের ওপর তালিকাভুক্ত কোম্পানি, সমন্বিত বিনিয়োগ স্কিম এবং বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা অ্যাসিউরেন্স কার্যক্রম পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিএসইসি।

মিউচুয়াল ফান্ড খাতে আরেকটি সাম্প্রতিক সময়ে আরেকটি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। এমটিবি ইউনিট ফান্ড অ্যালায়েন্স সন্ধানী লাইফ ইউনিট ফান্ড থেকে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ব্যাংক হিসেবে ৭২ কোটি টাকা স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠে। ফান্ড দুটির নিরীক্ষকও নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো প্রায় ৩৯ কোটি টাকার পাওনা অর্থের বিপরীতে পর্যাপ্ত প্রমাণ খুঁজে পাননি। ফান্ডের অর্থ স্থানান্তর নিরীক্ষকের মতামতের বিষয়টি বিএসইসিকে অবহিত করে ফান্ড দুটির ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (বিজিআইসি) এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে বিএসইসি। এর মধ্যেই গত বুধবার অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খন্দকার আসাদুল ইসলাম যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সেজন্য বাংলাদেশ পুলিশের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়, খন্দকার আসাদুল ইসলাম তার ব্যবস্থাপনাধীন মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বেআইনিভাবে ৪৫ কোটি লাখ টাকা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটির ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করেছে। পরবর্তী সময়ে অর্থ নগদ উত্তোলন কিংবা অজ্ঞাত প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থ স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের টাকা খন্দকার আসাদুল ইসলাম পাচার করেছেন বলে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়।

মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের এমডি সিইও খন্দকার আসাদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, আমি দেশেই রয়েছি। বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত তদন্তের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সময়ের মধ্যে আমি সবকিছুর ব্যাখ্যা নথিপত্র জমা দেব। এর মধ্যেই সবকিছু সমাধান হয়ে যাবে। পাশাপাশি ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

মিউচুয়াল ফান্ডের সাম্প্রতিক এসব অনিয়মের কারণে খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো তলানিতে নেমে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন এমনিতেই পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সবচেয়ে কম। তার ওপর এসব কেলেঙ্কারির কারণে সেটি আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অবস্থায় ইউএফএসের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পরই মিউচুয়াল ফান্ড খাতের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে দেয় বিএসইসি।

দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতে একের পর এক অনিয়ম ঘটার বিষয়ে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা (সিআইও) রিয়াজ ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, সিস্টেমে দুর্বলতা থাকার কারণেই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে মনিটরিং সার্ভিল্যান্স আরো জোরদার করতে হবে। মিউচুয়াল ফান্ড খাতে সুশাসন নিশ্চিতে ট্রাস্টি, কাস্টডিয়ান, নিরীক্ষক এবং সর্বোপরি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা রয়েছে।

শীর্ষ তিন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান আইসিবি এএমসিএল, রেস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের সম্পদ যাচাই করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। এজন্য তিনটি আলাদা পরিদর্শক দল গঠন করা হয়েছে। পরিদর্শন কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি বর্তমানে সব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কাছ থেকে আগের চেয়ে বিস্তারিতভাবে তথ্য তলব করা শুরু করেছে বিএসইসি। পাশাপাশি কাস্টডিয়ান ট্রাস্টিদেরও যথাযথভাবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মিউচুয়াল ফান্ড খাতের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি, যা হওয়ার হয়ে গেছে। সামনে আর অনিয়মের সুযোগ কেউ পাবে না। আমরা এরই মধ্যে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম নজরদারি করা হচ্ছে। যারা মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ নিয়ে গেছে সেগুলো ফেরত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি সামনে আপনারা মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে ভালো খবর জানতে পারবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন