ডিটিসিএর গণশুনানি

মেট্রোরেল করিডোরে সংকুচিত ফুটপাত নিয়ে অসন্তোষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল, যার একটি অংশ এরই মধ্যে সীমিতভাবে চালু হয়েছে। এলিভেটেড মেট্রোর কাঠামোটি তৈরি করতে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে সড়কের ফুটপাত। আবার মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি স্টেশনে ওঠা-নামার সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে ফুটপাতের ওপর। সংকুচিত হয়ে আসা এসব ফুটপাতে বিঘ্নিত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক হাঁটাচলা। আবার মেট্রো ব্যবহারকারী যাত্রীদের জন্যও অসুবিধার কারণ হচ্ছে। গণপরিবহন হিসেবে মেট্রোরেলের সুবিধা শীর্ষক এক গণশুনানিতে মেট্রো করিডোরের সংকুচিত ফুটপাত নিয়ে এমন অসন্তোষই প্রকাশ করেছে যাত্রীরা। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) কার্যালয়ে গতকাল গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

গণপরিবহন হিসেবে মেট্রোরেলের বিভিন্ন সুবিধার ওপর আলোকপাত করেন ডিটিসিএর ডেপুটি ম্যাস ট্রানজিট ইঞ্জিনিয়ার (এমআরটি) রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, মেট্রোরেলে অল্প সময়ে অধিকসংখ্যক যাত্রী পরিবহন করা যাবে। ফলে ছোট ছোট যানবাহনের ব্যবহার কমবে। মেট্রোরেল পুরোপুরি বিদ্যুচ্চালিত হওয়ায় পরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। একই সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় পূর্ণ মাত্রা গতি আনবে। নিরসন হবে যানজট। মহানগরবাসীর কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। সাশ্রয়কৃত কর্মঘণ্টা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। নগর পরিবহনে মেট্রোরেল সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি -সম্পর্কিত প্রযুক্তিতেও দক্ষ জনবল গড়ে উঠবে বলে উল্লেখ করেন রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে মেট্রোরেল।

শুনানিতে অংশ নিয়ে মেট্রোরেল ব্যবহার করা যাত্রীরা অভিযোগ করে, উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের কয়েকটি স্টেশনের সিঁড়ি ফুটপাতের ওপর তৈরি করা হয়েছে। কারণে ফুটপাত সংকুচিত হয়ে পথচারীদের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। একইভাবে পুরো মেট্রোরেলের অ্যালাইনমেন্ট বা গতিপথে বিদ্যমান সড়কের ফুটপাত সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গণশুনানিতে উপস্থিত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা বলেন, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এলাকায় ফুটপাতের সমস্যা ছিল। সেগুলো সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এসব স্টেশন এলাকার ফুটপাত সম্প্রসারণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণকাজ প্রায় শেষের দিকে। আর ভবিষ্যতে যেসব মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে সেগুলোতেও ফুটপাতের বিষয়ে সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করবে ডিএমডিসিএল।

যাত্রীরা সময় জানায়, মেট্রোরেল ব্যবহারকারী যাত্রীদের সিংহভাগই স্টেশনে আসবে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। এর মধ্যে যারা ৫০০ মিটার বা এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে বসবাস করে তারা চাইবে হেঁটে স্টেশন পর্যন্ত আসতে। কিন্তু মেট্রোরেলের স্টেশনসংলগ্ন বিভিন্ন সড়কসহ ঢাকার বেশির ভাগ সড়কের ফুটপাতই মানসম্মত নয়। আবার ফুটপাতের একটা বড় অংশ রয়েছে অবৈধ দখলে। এমন প্রেক্ষাপটে পুরো ঢাকা শহরের জন্যই আদর্শ মানের ফুটপাত নির্মাণ, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ দখলমুক্ত রাখার দাবি জানান তারা।

ডিটিসিএর গতকালের গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন। তিনিও মন্তব্য করেন, মেট্রোরেলের পূর্ণ সুফল পেতে হলে এবং রাজধানীবাসীর জন্য আদর্শ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আদর্শ মানের ফুটপাত সবচেয়ে জরুরি। সেজন্য অবশ্যই ফুটপাতের জায়গাগুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। জায়গা হলো মানুষের হাঁটার জন্য। তাই মানুষের নির্বিঘ্নে হাঁটার পথ থাকতে হবে।

শুধু ফুটপাত নয়, মেট্রোরেলের কারণে ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়কে গাড়ি চলার পথও সংকুচিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ডিটিসিএর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম। তিনি বলেন, ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোর একটি কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, যাকে আমরা ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে অভিহিত করি। ব্যস্ততম সড়কটির কারওয়ান বাজার শাহবাগে তৈরি করা হয়েছে মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন। এসব স্টেশনের পোর্টাল ফ্রেম তৈরি করা হয়েছে রাস্তার দুই পাশের ফুটপাত ঘেঁষে। ফলে ব্যস্ততম সড়কের ক্যারিজওয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ঢাকার মেরুদণ্ড বিবেচিত রাস্তাটি সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় পুরো ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় পড়ছে বিরূপ প্রভাব। ঢাকায় আরো পাঁচটি মেট্রোরেল তৈরি হবে। সেগুলো তৈরি করতে গিয়ে যেন ক্যারিজওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে নজর দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

গণশুনানিতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারাও। তারা বলেন, একটি সড়কের ওপর এলিভেটেড বা উড়াল অবকাঠামো তৈরি করলে তা ওই সড়কের ক্যারিজওয়ে কিছুটা সংকুচিত করবেই। ঢাকার সড়ক অবকাঠামোর বাস্তবতায় এটি এড়ানোর সুযোগ একেবারেই সীমিত ছিল। তবে ডিএমটিসিএল পববর্তী মেট্রোরেলগুলোয় শহরের ভেতরে আর এলিভেটেড অবকাঠামো করবে না। শহরের ভেতরের জন্য মেট্রো নির্মাণ করা হবে পাতালপথে, যা বিদ্যমান সড়কের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।

শুনানিতে অংশ নিয়ে মেট্রোরেলের নিচের সড়কের মিডিয়ানের রেলিংয়ের উচ্চতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অংশীজনরা। তারা বলেন, মেট্রোরেলের নিচের সড়কের মাঝখানে মিডিয়ান তৈরি করে দিয়েছে ডিএমটিসিএল। কিন্তু এতে যে রেলিং ব্যবহার করা হচ্ছে, তার উচ্চতা খুব বেশি নয়। সুযোগে অনেক পথচারীই মিডিয়ান টপকে যেখানে-সেখানে রাস্তা পারাপার হচ্ছে, যা সড়ক পরিবহনে বিশৃঙ্খলা তৈরির পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়িয়েছে।

ডিটিসিএ আয়োজিত গণশুনানিতে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ, সড়ক জনপথ অধিদপ্তর, সেতু কর্তৃপক্ষ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি মেট্রোরেলের সাধারণ যাত্রীরা অংশ নেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন