ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক শামস গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিথ্যা মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। মো. গোলাম কিবরিয়া নামে রাজধানীর কল্যাণপুরের এক বাসিন্দা মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। এরপর গতকাল ভোর ৪টার দিকে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের আমবাগান এলাকার বাসা থেকে শামসকে সিআইডির পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। তেজগাঁও থানার ওই মামলায় পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

মামলার বাদী মো. গোলাম কিবরিয়া নিজেকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এজাহারে বলা হয়েছে, শামসুজ্জামানের প্রস্তুত করা প্রথম আলোর সংবাদে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি, সেই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলেছে, পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম? বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব। সামাজিক মাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়।

বাদীর অভিযোগ, ঘটনায় মহান স্বাধীনতা দিবসে দেশের গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। প্রকৃতপক্ষে ওই শিশুটি ধরনের কোনো কথা বলেনি। একটি অশুভ চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য মিথ্যা সংবাদ তৈরি পরিবেশন করে অনলাইন সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে দেশের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। মহান স্বাধীনতা দিবসে এমন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ এবং বিশ্বব্যাপী প্রচার করায় বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তিনি ক্ষুব্ধ বলেও জানান। এজাহারে বলা হয়, এজাহার নামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা অনুমতি ছাড়া মিথ্যা তথ্য-উপাত্তসহ মানহানিকর তথ্য প্রকাশ প্রচার করে আইন-শৃঙ্খলার

অবনতি ঘটানোর উপক্রম সহায়তার অপরাধ করেছে।

প্রসঙ্গত, ২৬ মার্চ প্রথম আলোর অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তার ওপর ভিত্তি করে দিনমজুর জাকির হোসেনের বক্তব্য দিয়ে একটি কার্ড তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সেখানে ভুলবশত জাকিরের বদলে শিশু সবুজ মিয়ার ছবি যুক্ত করা হয়। কার্ডটি প্রকাশের পর ভুল বুঝতে পেরে ১৭ মিনিটের মাথায় সেটি সরিয়ে নিয়ে সংশোধনী দিয়ে তা আবারো অনলাইনে প্রকাশিত হয়।

তবে এর মধ্যেই সবুজ মিয়ার ছবিসংবলিত ভুল কার্ডটি ভাইরাল হয়ে যায়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। যে প্রতিবেদন থেকে কার্ডটি তৈরি করা হয়েছিল সেটি লিখেছিলেন শামসুজ্জামান শামস। মঙ্গলবার গভীর রাতে শামসকে তুলে নেয়া হলেও গতকাল দুপুর পর্যন্ত তাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো। পরে দুপুরে সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আজিমুল হকও। তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। মামলায় কেবল একজনের নাম রয়েছে। আমরা এখনো আসামিকে বুঝে পাইনি। মামলাও সিআইডিকে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলায় শামসুজ্জামান শামসকে নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা গেছে, গতকাল ভোর ৪টার দিকে তিনটি গাড়িতে প্রায় ১৪-১৫ জন ব্যক্তি শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান। এর মধ্যে সাত-আটজন বাসায় ঢোকেন। একজন শামসুজ্জামানের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তার ব্যবহূত একটি ল্যাপটপ, দুটি সেলফোন একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যান। ১০-১৫ মিনিট পর ওই ব্যক্তিরা শামসুজ্জামানকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যান। সেখানে সাহরি খেয়ে ৪০ মিনিট পর ভোর পৌনে ৫টার দিকে শামসুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে আবার তার বাসায় যান। এরপর তারা জব্দ করা মালপত্রের তালিকা করেন। শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় সঙ্গে নিতে বলেন এবং সেখানে তার কয়েকটি ছবি তোলেন। এরপর শামসকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে যান ওই ব্যক্তিরা। ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনও উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আইন কিন্তু নিজস্ব গতিতে চলে। কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে বিচার চায় বা সংক্ষুব্ধ হয়ে থানায় মামলা করে, সে অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নিতেই পারে। স্বাধীনতা দিবসে ধরনের একটা ভুয়া খবর যদি কেউ দেয়, তাহলে যে কেউ সংক্ষুব্ধ হতে পারে, আপনিও হতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন