নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো আলাপ নেই —মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো সংলাপে যাবে না বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচন কমিশনের সংলাপের আমন্ত্রণ পাওয়ার পর গতকাল দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে দলের অবস্থানের কথা জানান তিনি। পাশাপাশি সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের আটকের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের স্পষ্ট কথা, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো আলাপ নেই। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। ডেফিনিটলি। বরাবর যেভাবে নেয় বাংলাদেশের মানুষ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটা যে এসেছিল সেটা তো একটা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এসেছিল, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরাই গ্রহণ করেছি, কারণ আমরা জনগণকে বিশ্বাস করি, ভালোবাসি। আমরা চাই যে জনগণের মতামতটা উঠে আসুক। সে কারণেই আমরা সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু আপনি জনগণকে মানবেন না, টোটালি বিচ্ছিন্ন করে দেবেন, উড়িয়ে দেবেন, জনগণের মতামতকে কোনো পাত্তাই দেবেন না। এখন তো সেই রাস্তায় চলে গেছেন যে অ্যানি কস্ট ক্ষমতায় থাকতে হবে। জনগণ কোথায় সেখানে?

দাবি না মানলে ওয়াকওভার দেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ওয়াকওভারে কখনই বিশ্বাস করি না। আমরা যেটা বিশ্বাস করি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ফর ইলেকশন। আমাদের মূল বিষয় হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। এটি তৈরি করার আগে আমরা যেটা বলেছি, সবার আগে ১০ দফা কর্মসূচি যেটা দিয়েছিইউ রিজাইন ফাস্ট। সংসদ বাতিল করেন, নতুন একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। নির্বাচন হবে...একশবার নির্বাচনে যাব।

অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪ সালে বয়কট করেছিলাম। ২০১৮ সালে আমরা ওয়াকওভার তো দিতে চাইনি। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে একবার না, দুই দফা সবার সামনে প্রমিজ করলেন যে একদম নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, কোনো রকমের অত্যাচার-নির্যাতন হবে না, পুলিশি নির্যাতন হবে না, প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে, ভোটে কারচুপি-ছলচাতুরী এগুলো হবে না। বারবার করে উনি বলেছেন। কী লাভ হয়েছে? এখন আপনি যা- বলেন, যত সুন্দর ভাষায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার যা- বলেন কী হবে?

সাংবাদিক গ্রেফতার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ভোরে একজন সাংবাদিককে সিআইডি বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এটা ভয়াবহ ঘটনা। আমি গতকাল রাতে যেটা দেখলাম, সময় একাত্তর টেলিভিশনে তারা একটা ফিচার করেছে যে মুহূর্তে সরকারকে বিব্রত করার জন্য কেন সে ধরনের রিপোর্ট করেছে। কী অপরাধ করেছে সেই সাংবাদিক, তা তো বুঝলাম না। আমার কথা হচ্ছে সত্য যে ঘটনা সেটাই সে তুলে ধরেছে। একজন মানুষের যে উক্তি সেই উক্তিটা তুলে ধরেছে। কী এমন অপরাধ হয়েছে?

তিনি আরো বলেন, সাংবাদিক শামসুজ্জামান রিপোর্ট করেছেন তার জন্য তাকে তুলে নিয়েছে সিআইডি। এগুলো আরো ক্ষতি করছে সরকারের। সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরার কারণে একজন সাংবাদিককে যদি হেনস্তা করতে হয় সেটা কি সরকারকে কোনো প্লাস পয়েন্ট দিচ্ছে, কোনো ক্রেডিট দিচ্ছে? ইন নো ওয়ে। ইতিহাস বলে, বাংলাদেশে সবসময় ধরনের কাজ যে সরকারগুলো করেছে, পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে কেউই কিন্তু রক্ষা পায়নি। এটা করে তো সরকারের লাভ হবে না। আমি শামসুজ্জামান শামসের আটকের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইউরোপ আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিকদের নিকটাত্মীয়দের ওপর ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়া নির্যাতনের বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় নিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। আল জাজিরার বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুলকার নাইন সায়েব খান সামির ভাই মাহিনুর আহমেদ খানকে ১৭ মার্চ সাদা পোশাকধারী লোকেরা মারাত্মকভাবে কুপিয়ে আহত করার ঘটনারও নিন্দা জানানো হয়েছে।

নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুতে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, কথা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যে সুলতানা জেসমিন র্যাব কাস্টডিতে মারা গেছেন, যা চরমভাবে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক অধিকারগুলো বিষয়ে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। বিএনপিও অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য জনসম্মুখে উপস্থাপন এবং সুলতানা জেসমিনকে হত্যার জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একজন মহিলাকে কোনো সুনির্দিষ্ট মামলা ব্যতিরেকে তুলে নেয়া এবং তার মৃত্যু আবারো প্রমাণ করেছে যে সরকারের অধীনে কর্মরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যথেচ্ছাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই চলেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন