মানুষের সম্পত্তি সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে বসবাসকারী অথবা প্রবাসীদের যেসব সম্পত্তি রয়েছে সেগুলোর সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘‌ভূমি সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে আগে মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলছি, আর এই কষ্টটা মানুষকে পেতে হবে না। দেশে থাকেন বা প্রবাসে থাকেন, আপনার সম্পত্তি আপনারই থাকবে। আপনার অধিকার যাতে সুনিশ্চিত ‍ও সুরক্ষিত হয়, সে ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি।’

গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘‌জাতীয় ভূমি সম্মেলন-২০২৩’ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাতটি উদ্যোগ/প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন, ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

সাতটি উদ্যোগের মধ্যে একটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গুচ্ছগ্রাম কমপ্লেক্স, যা জাতির পিতার দর্শনীয় একটি স্মরণীয় স্থান লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে স্থাপিত হয়েছিল। বাকি ছয়টি উদ্যোগ হলো রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন ইন্টারকানেকশন, স্মার্ট ল্যান্ড ম্যাপ, স্মার্ট ল্যান্ড রেকর্ডস, স্মার্ট ল্যান্ড পিডিয়া, স্মার্ট ল্যান্ড সার্ভিস সেন্টার এবং ইউনিয়ন ল্যান্ড অফিস।

ভূমি বণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‌কথায় আছে জোর যার মুল্লুক তার। অনেক সময় ভাই সম্পত্তি থেকে বোনকে বঞ্চিত করে, আবার বোন যদি শক্তিশালী হয়ে যায়, তখন সে ভাইকেও বঞ্চিত করে। এমনও ঘটনা আছে বোন বোনকে বঞ্চিত করছে। বণ্টন ব্যবস্থা যদি যথাযথভাবে হয়ে যায়, তারপর কেউ ভাইকে বা বোনকে দান করতে চাইলে করতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে বোনরাই বেশি বঞ্চনার শিকার হন, এটাও বাস্তবতা। বণ্টন ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করলে এই পারিবারিক সমস্যা আর থাকবে না। মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‌পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে প্রবাসীরা ভূমি সেবা পোর্টাল ই-খতিয়ান অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করলে ডাক বিভাগ তাদের ঠিকানায় জমির খতিয়ান পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নেবে। ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর ই-সেবা উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত ৭৭ লাখের বেশি নাগরিক এ সেবা গ্রহণ করেছে। ডাক বিভাগ এখন নাগরিকের ঠিকানায় খতিয়ান ও ম্যাপ পৌঁছে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত তিন লাখের অধিক খতিয়ান ও ম্যাপ নাগরিকরা হাতে পেয়েছেন। সম্প্রতি প্রবাসীদের জন্য এ সেবা উন্মুক্ত করা হয়েছে। এটা প্রবাসীদের জন্য একটা দুশ্চিন্তাও ছিল যে তাদের জমিজমার কী হলো। সেই দুশ্চিন্তাও দূর হয়ে গেল এ ডিজিটাল পদ্ধতিতে। পৃথিবীর ১৯২টি দেশ থেকে কোনো প্রবাসী কল সেন্টারে ফোন করলে অথবা ভূমি সেবা পোর্টাল ই-খতিয়ান অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করলে ডাক বিভাগ বিদেশে প্রবাসীদের নিজ নিজ ঠিকানায় খতিয়ান পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

নামজারি নিয়ে তিনি বলেন, ‘‌২০১৭ সাল থেকে ই-নামজারি শুরু হয়েছে। ফলে ভূমির মালিকরা ঘরে বসেই নামজারি আবেদন করতে পারছেন এবং হয়রানি ছাড়াই সেবা গ্রহণ করছেন। প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখের বেশি নামজারি ‍নিষ্পত্তি হচ্ছে।’

নগদ টাকা ছাড়া সেবার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‌২০২২ সালের ১ অক্টোবর থেকে ই-নামজারি সিস্টেমকে পুরোপুরি ক্যাশলেস ঘোষণা করা হয়েছে। সব ভূমি অফিসে ম্যানুয়াল ডিসিআরের পরিবর্তে চালু করা হয়েছে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য কিউআর কোডসমৃদ্ধ ডিসিআর।’ 

ডিজিটাল পদ্ধতি আরো আধুনিক করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‌বিভিন্ন সিস্টেমের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ করে শিগগিরই দ্বিতীয় প্রজন্মের ই-নামজারি চালু করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ই-মিউটেশনের বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ভূমি মন্ত্রণালয় জাতিসংঘে ইউনাইটেড নেশন্স পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২০ অর্জন করেছে।’ 

জনসেবার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‌ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন ও সেবা দেয়ার লক্ষ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আরো নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন, সেটাই আশা করি। আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। জনগণের কল্যাণ সাধনই আমাদের লক্ষ্য।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন