করোনা সত্ত্বেও দেশে বেকারত্ব বাড়েনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও দেশের বেকারত্বের সংখ্যা কমেছে। ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২’-এ এমন তথ্য উঠে এসেছে। জরিপের তথ্যানুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। মোট বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ জরিপের প্রাথমিক ফল প্রকাশ করেছে। আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে এ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে বিবিএস।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মো. এহছানে এলাহী, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন প্রমুখ।

জরিপে বলা হয়, ২০১৬-১৭-এর জরিপে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। কর্মক্ষম বেকার ছিল ২৭ লাখ। ছয় বছরের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। 

সভায় বলা হয়, এ বিশাল বেকার জনগোষ্ঠী সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগও পায় না। বেকারত্বের এ হিসাব আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দেয়া মানদণ্ড অনুযায়ী। আইএলও মনে করে, সপ্তাহে ১ ঘণ্টা কাজ না করলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।

বিবিএসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিগত পাঁচ বছরে শ্রমবাজারের সূচকগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ২০২২ সালের ফলাফলে পাওয়া যায়, বেকারত্বের হারের সূচক কমেছে। শ্রমশক্তিতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের হারে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে এবং কর্মে নিয়োজিত বিশেষ করে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। যুব জনগোষ্ঠীর শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বেড়েছে। কৃষি এবং সেবা খাতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বেড়েছে।

নমুনা ফ্রেম হিসেবে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর দ্বিতীয় জোনাল অপারেশন ব্যবহার করে দেশব্যাপী ১ হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক গণনা এলাকা ও প্রতিটি প্রাথমিক গণনা এলাকা থেকে ২৪টি খানা নির্ধারণ করা হয়। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা এবং বছরে মোট ১ লাখ ২৩ হাজার ২৬৪টি খানা থেকে নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বিস্তারিত প্রতিবেদনে শ্রমবাজারের সূচকগুলোর বিশ্লেষণ এবং পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘‌অর্থনীতিতে একটা রূপান্তর ঘটছে। সেটি গ্রামে গেলে বোঝা যায়। রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এখন মূল কাজ। অর্থাৎ শ্রমিকদের ন্যায্যতা ও মূল্য পাওয়া নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। নারীদের পারিবারিক কাজ শ্রমশক্তির বাইরে আছে, এটা দুঃখজনক। তাদেরটা যোগ করা হলে জিডিপি ৪৫০ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৬৫০ বিলিয়ন হয়ে যাবে। করোনা সময় এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকা শহরে দারিদ্র্য কমেছে এবং বেকার সংখ্যা কমেছে। এর মূল কারণ, আমরা সীমিত লকডাউন করেছি। শিল্প-কারখানা খোলা ছিল। রাস্তাঘাট খোলা ছিল। প্রধানমন্ত্রী দ্রুত প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। ফলে করোনার সময় ঢাকায় উল্টোচিত্র বিরাজ করেছে।’

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালীন শহর থেকে অনেক মানুষ গ্রামে গেছেন। সেখানে তারা কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন। প্রচলিত শস্যের বাইরে শস্য বহুমুখীকরণে ভূমিকা রেখেছেন। তারা ফুল, ফল, মাছসহ নানা বৈচিত্র্যময় চাষে যুক্ত হন। পাশাপাশি যেসব জমি পড়ে ছিল সেগুলো চাষের আওতায় চলে আসে। ফলে কৃষিতে শ্রমশক্তি বেড়েছে। কিন্তু এটা পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন