কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

৩০ কোটি কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চাঙ্গা হবে বিশ্ব অর্থনীতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

বেইজিংয়ের রেস্তোরাঁর এ রোবটের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে কমতে পারে বিভিন্ন কাজে মানুষের প্রয়োজনীয়তা ছবি : রয়টার্স

বিশ্বব্যাপী কয়েক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়লেও বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং শ্রম উৎপাদনশীলতায় বড় ধরনের গতি যোগ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। গোল্ডম্যান স্যাকসের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শ্রম উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে, যদিও প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানের ওপর। তবে ৩০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান কেড়ে নিলেও চাঙ্গা হবে বৈশ্বিক অর্থনীতি। খবর দ্য ন্যাশনাল নিউজ।

প্রতিবেদনে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংকটির বিশ্লেষকরা জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শ্রম খরচ হ্রাস, নতুন কর্মসংস্থান ও স্থায়ী কর্মীদের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতার গতি ত্বরান্বিত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে উল্লেখযোগ্য হারে। আজ থেকে ১০ বছর পর বিশ্বব্যাপী অন্তত অর্ধেক প্রতিষ্ঠানও যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তাহলে বৈশ্বিক ডিজিপি ৭ শতাংশ বাড়তে পারে।

এআইয়ের মাধ্যমে এক দশকের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বার্ষিক উৎপাদনশীলতা ১ দশমিক ৪ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানো সম্ভব হতে পারে, যদিও উদীয়মান বাজার অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ প্রভাবগুলো খানিকটা বিলম্বিত হবে। এ বিষয়ে গোল্ডম্যান স্যাকসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জেন হ্যাটজিয়াস বলেন, ‘যদিও জেনারেটিভ এআইয়ের প্রভাব শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে এটির কার্যকারিতা ও প্রয়োগের ওপর। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত অনুমানটি যদি সঠিক হয় এবং এটি প্রতিশ্রুত কার্যকারিতা প্রদর্শনে সমর্থন হয়, তাহলে তা বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকেই তুলে ধরে।’

ব্যবসা পরামর্শক সংস্থা গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের তথ্যানুসারে, ২০২১ সালের ৯ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাজার ২০৩০ সালে ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যা মূলত ৩৮ শতাংশের বেশি বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হারে সম্প্রসারণ হচ্ছে।

গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রতিবেদনে বলা হয়, টাস্ক অটোমেশন (ম্যানুয়াল কাজগুলোকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদিত করা) শ্রম খরচ হ্রাস ও উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দেবে। এ প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, বিশ্বব্যাপী ১৮ শতাংশ কাজই এআইয়ের মাধ্যমে সম্পাদন হতে পারে, তবে উদীয়মান বাজারগুলোর তুলনায় উন্নত দেশে এর প্রভাব বেশি হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, এক দশকের মধ্যে ব্যাপকভাবে জেনারেটিভ এআই গ্রহণের মাধ্যমে শ্রম উৎপাদনশীলতা বার্ষিক ১ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানো যেতে পারে।

তবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বিষয়টি মূলত এআইয়ের কার্যকারিতা ও স্বয়ংক্রিয়তার ওপর নির্ভর করবে। যুক্তরাষ্ট্রে দুই-তৃতীয়াংশ পেশা এআই পরিচালিত স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির আওতায় এসেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বলছে, তাদের ২৫-৫০ শতাংশ কাজ এআই দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বর্তমান চাকরির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আংশিক পরিমাণে এআই অটোমেশনের আওতায় এসেছে। তবে জেনারেটিভ এআই বর্তমান কাজের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পর্যন্ত প্রতিস্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 

জেনারেটিভ এআই বৈশ্বিক প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরিকে প্রতিস্থাপন করতে পারে বলেও প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন আইনজীবী ও প্রশাসনিক কর্মীরা। গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঘিরে করপোরেট বিনিয়োগ যদি ক্রমেই বাড়তে থাকে, যেমনটা ১৯৯০ সালে সফটওয়্যারকেন্দ্রিক বিনিয়োগ ঘিরে তৈরি হয়েছিল, তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ শুধু মার্কিন বিনিয়োগের পরিমাণই হবে জিডিপির ১ শতাংশের কাছাকাছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন