ভারত মহাসাগর নিয়ে সাব কমিশনের প্রত্যাশা বাংলাদেশের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সভাপতিত্বে আইওসি রিজিওনাল কমিটি ফর দ্য সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ান ওশানের নবম আন্তঃসরকার অধিবেশন ঢাকায় শুরু হয়েছে গতকাল। অধিবেশনের আলোচনার মাধ্যমে ভারত মহাসাগর নিয়ে সাব কমিশনের প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেন এমপি গতকাল এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনদিনের সেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং অধিবেশনের প্রথম দিনে আয়োজক দেশের পক্ষে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাব কমিশনের প্রত্যাশার বিষয়টি অবহিত করেন তিনি।

মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘রিজিওনাল কমিটি ফর ইন্ডিয়ান ওশান, যেটা ১৯৮২ সাল থেকে চলে আসছে। এটার আজকে নবম সভা ঢাকায় হচ্ছে। সভাপতি হিসেবে আমাদের সভা করতে হয়। সেটারই বাধ্যবাধকতা হিসেবে আমাদের কমিটিতে যে ১৮টি দেশ আছে তাদের আমরা দাওয়াত দিয়েছি। আমরা এখানে মূলত আলাপ করব একটা পরিচ্ছন্ন সাগর (ক্লিন ওশান), স্বাস্থ্যসম্মত সাগর (হেলদি ওশান), দূষণমুক্ত সাগর (পলিউশন ফ্রি ওশান), নিরাপদ সাগর (সেফ ওশান)—কীভাবে বাউন্ডারি না দিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে এগুলো ঠিকভাবে করা যায়এসব বিষয়ে।

আমাদের এজেন্ডা আছে, আমাদের ব্লু ইকোনমি নিয়ে কী করা যেতে পারে উল্লেখ করে মো. খুরশেদ আলম বলেন, সমুদ্রের সব জায়গায় এখন অবজারভেশন ব্যবস্থা আছে, সুনামির জন্য হোক, সাইক্লোনের জন্য হোক অথবা অন্য যেকোনো কারণেই হোক। আমাদের ইন্ডিয়ান ওশানে (ভারত মহাসাগর) এটা বরং কম। সাগরের জন্য কমিটি সারা পৃথিবীতে একটাই, শুধু ইন্ডিয়ান ওশানে। বাকি সব সাব কমিশন হয়ে গেছে। সাব কমিশন হয়ে গেলে প্যারিস থেকে একটা বাজেট পাওয়া যায়। সেই বাজেট দিয়ে অনুসন্ধানের কাজ বা গবেষণার কাজ করা সম্ভব হয়। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে চেষ্টা করছি কমিটিকে সাব কমিশন করার জন্য। সাব কমিশনের নাম হবে ইন্টার গভর্নমেন্টাল ওশানোগ্রাফিক কমিশন সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ান ওশান। সাব কমিশন করার জন্য এরই মধ্যে পাঁচটা মিটিং আমরা করেছি। ষষ্ঠ মিটিংটা আগামী এপ্রিল হবে। মিটিংয়ে আমরা যদি সবাইকে কনভিন্স করতে পারি যে আমাদের জন্য একটা সাব কমিশন দরকার তাহলে ৩২তম যে অ্যাসেম্বলি মিটিং হবে প্যারিসে, জুলাইয়ে, সেখানে দেখা যাবে এটা আর কমিটি থাকবে না। এটা সাব কমিশন ফর ইন্ডিয়ান ওশান হয়ে যাবে।

মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘সাব কমিশন ফর ইন্ডিয়ান ওশান হয়ে গেলে একটা বাজেট আমরা সেন্ট্রালি প্যারিস থেকে পাব এবং সেই বাজেট দিয়ে আমাদের যত বৈজ্ঞানিক আছে যারা সমুদ্র নিয়ে কাজ করে, তাদের যেসব কাজের ধরন, সেটা অবজারভেশন হোক, টেম্পারেচার হোক, ক্লাইমেট হোক, কোস্টাল ভালনারেবিলিটি হোক, কেন কোস্ট ইরোশন হচ্ছে রকম যেকোনো ব্যাপারে আমরা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারব। শুধু আমরা না আমাদের যে ১৮টি দেশ আছে, সবার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। অবশ্য এখানে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াও আছে, তারা নিজেরাই অনেক টাকা খরচ করে। ভারত আছে আমাদের সঙ্গে তারাও অনেক টাকা এখানে বিনিয়োগ করে। আমাদের মতো যারা উন্নয়নশীল দেশ, তাদের জন্য অর্থ দিয়ে বৈজ্ঞানিক যে কার্যক্রম সেগুলো যেন পরিচালনা করতে পারি সেটাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা তিনদিন কাজ করব। আজকে শুরু হলো, পরশু শেষ হবে। শেষ করবেন আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

মো. খুরশেদ আলম জানান, বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমের ফলে সুনামি কেন হচ্ছে, সুনামির যেসব চেকিং স্টেশন আছে, সেগুলো সঠিক জায়গায় আছে কিনা, কীভাবে বাড়ানো যায়, সাইক্লোন কীভাবে কমানো যায়, কীভাবে সাইক্লোন ওয়ার্নিং আরো সঠিকভাবে, সুন্দরভাবে এবং পূর্বাহ্নে দেয়া যায়, সেসব বিষয় জানতে হবে। সাগরে যেসব মাছ, গাছ যা আছেসেগুলো সম্বন্ধে আমাদের আরো বেশি জানতে সুবিধা হবে। সামগ্রিকভাবে আমার মনে হয়, আমরা যদি সাব কমিশন করতে পারি আজকের মিটিংয়ের মাধ্যমে সবাইকে কনভিন্স করে, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের জন্য এটা সুফল বয়ে আনবে। কারণ বৈজ্ঞানিক দিক থেকে আমরা এখনো অনেক পেছনে। সারা পৃথিবীতেই অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা হচ্ছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত ইন্ডিয়ান ওশান নিয়ে সব চেয়ে কম গবেষণা হয়েছে। জায়গাটায় আমাদের উন্নতি দরকার।

প্রসঙ্গত, অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের প্রতিনিধি, আইওসি-ইউনেস্কো সচিবালয়, ইন্ডিয়ান ওশান কমিশন এবং বিশ্বব্যাংকের স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কুয়েত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, কাতার, শ্রীলংকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালদ্বীপ, সৌদি আরব ইয়েমেন।

অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে অঞ্চলের নিরাপত্তা, সংযোগ, শান্তি সমৃদ্ধির জন্য ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এছাড়া আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা; প্রকল্প গ্রহণের আহ্বান জানান। সমুদ্র পর্যবেক্ষণ তথ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরের সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে তাদের সুনির্দিষ্ট স্বার্থ অগ্রাধিকার বিবেচনা করে অঞ্চলের সক্ষমতা উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে আহ্বান জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী IOCINDIO-কে আঞ্চলিক কমিটি থেকে একটি সাব কমিশনে উন্নীত করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রথম দিনের অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম এবং Intergovernmental Oceanographic Commission (IOC)-এর নির্বাহী সচিব ভ্লাদিমির রিয়াবিনিন। এছাড়া আইওসি সভাপতি এরিয়েল হার্নান ট্রয়সি, ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটির  (International Seabed Authority (ISA) মহাসচিব মাইকেল ডব্লিউ লজ এবং আইওসি আফ্রিকার (IOCAFRICA) সভাপতি প্রফেসর আফিয়ান কৌদিও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রথম দিনের অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন।

আগামী দুদিন অংশগ্রহণকারীরা  IOCINDIO-এর অগ্রাধিকার প্রোগ্রাম প্রকল্প, ইউনেস্কো এবং IOC-এর সাম্প্রতিক উন্নয়ন, ২০২১-২০২৩ সালের IOCINDIO-এর বিভিন্ন কার্যক্রম, সূনীল অর্থনীতি, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র মানবস্বাস্থ্য, জাতিসংঘ ঘোষিত UN Decade of Ocean Science, IOCINDIO-এর ভবিষ্যত্ কর্মপরিকল্পনা এবং ২০২৩-২৫ অর্থবছরের বাজেটসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন