রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি অনিশ্চয়তায়

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: রয়টার্স

ভারতের বিরোধীদলীয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী রাজ্য সরকারে কখনো মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি। সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসকে জয়ী করতে নেতৃত্বও দেননি। ২০১৯ সালের সর্বশেষ সংসদীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবু তিনি রয়েছেন ভারতের বিরোধীদলীয় রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রধান প্রতিপক্ষও যেন তিনি। খবর রয়টার্স।

মানহানির মামলায় সম্প্রতি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এ কংগ্রেস নেতা। পেয়েছেন দুই বছরের কারাদণ্ড। আইন অনুযায়ী লোকসভার সদস্য পদও হারিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে তার দল ও সমর্থকদের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধিতা জোরদার করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

৫২ বছর বয়সী এ নেতা সম্প্রতি ভারতের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মীর পর্যন্ত ভারত জোড়ো নামে চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা শেষ করেছেন। এ পদযাত্রায় তিনি দল ও তার ভাবমূর্তি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিলেন।

যদিও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক কারাদণ্ডাদেশ ৩০ দিনের জন্য স্থগিত হয়েছে এবং এ সময়ে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পাবেন এ নেতা। কিন্তু এ রায়ের ফলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ডুবে গেছে। কেননা রাহুল গান্ধী যদি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ স্থগিত বা বাতিল করতে ব্যর্থ হন, তবে ক্ষমতাসীন হওয়া দূরের কথা, পরবর্তী নির্বাচনে অংশও নিতে পারবেন না।

ভারতের বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার মূল কারণ হিসেবে দেখা হয় তার পারিবারিক রাজনীতির অবদানকে। ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে ৫৪ বছরই তার দল কংগ্রেস ভারত শাসন করেছে। এর মধ্যে তার বাবা রাজীব গান্ধী ও দাদি ইন্দিরা গান্ধী, প্রপিতামহ জওহরলাল নেহরুসহ তার পরিবারের সদস্যরা ৩৭ বছরের অধিক সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। 

অবশ্য ভারতের রাজনীতিতে গান্ধী পরিবার এখন যেন নিজেরাই নিজেদের ছায়া হয়ে আছে। রাজনীতির আগের সেই শক্ত অবস্থান তারা ধরে রাখতে পারেননি। তবে রাহুলের ইতালীয় বংশোদ্ভূত মা ও কংগ্রেসের সাবেক প্রধান সোনিয়া গান্ধী এবং তার বোন প্রিয়াংকা গান্ধী এখনো কংগ্রেসে তাদের আধিপত্য ধরে রেখেছেন। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতন্ত্রে রাজবংশীয় রাজনীতির কোনো ভূমিকা নেই, এমন মন্তব্য করে মোদি সরকার শক্তিশালী গান্ধী বংশ এবং তাদের ঐতিহ্যকে আক্রমণ করতে চায়। নরেন্দ্র মোদি প্রায়ই তার ভাষণে রাহুল গান্ধীকে ‘‌রাজকুমার’ বলে সম্বোধন করেন।

২০০৪ সালে উত্তর প্রদেশের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা আমেথি থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রাহুল গান্ধী। ২০০৯ ও ২০১৪ সালেও বিজয়ের ধারা অব্যাহত থাকে। কিন্তু ২০১৯ সালে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আসনটি হারিয়ে ফেলেন। তবে কেরালা রাজ্যের একটি আসনে জয়লাভ করে কোনোমতে সংসদে ফেরার সুযোগ পান।

সুযোগ থাকলেও সংসদে রাহুল গান্ধীর উপস্থিতি ছিল অনেক কম। তবে সংসদের বাইরে বেশ সরব এ নেতা। বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি প্রায়ই তার সমর্থকদের তার পরিবারের প্রতিশ্রুতি ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তার দাদি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও তার বাবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের বিষয় উল্লেখ করেন। 

নয়াদিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ভিজিটিং ফেলো নীলাঞ্জন সরকার বলেন, ‘‌রাহুল গান্ধীর দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং সংসদ সদস্যপদ খারিজ এখন তার জন্য ভবিষ্যৎ রাজনীতি সৃষ্টিকারী বা ধ্বংসকারী। তিনি হয়তো যুক্তি দিতে সক্ষম হবেন, তিনি এমন এক সরকারের লক্ষ্যবস্তু হয়ে আছেন, যা সব ভারতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে না অথবা তিনি বিজেপির দাবি করা অক্ষম রাজনীতিবিদের তকমা সত্যে পরিণত করবেন।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন