আঙ্কটাডের পূর্বাভাস বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির ধারা থাকবে নিম্নমুখী

বণিক বার্তা ডেস্ক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে বিশ্ব বাণিজ্যের নেতিবাচক ধারা দেখা গেছে। মূলত ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে নানা ধরনের সংকটের কারণে বাণিজ্যে মন্দা ভাব দেখা যায়। গত বছরের শেষ প্রান্তিকের মতো চলতি বছরও বিশ্বের বাণিজ্য ধীরগতির থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলন আঙ্কটাড। খবর ন্যাশনাল নিউজ।

২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাণিজ্য পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু বছরের দ্বিতীয়ার্ধের অবস্থা আরো ইতিবাচক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিশ্ববাণিজ্যের ধারা বেশ ইতিবাচক রয়েছে।

আঙ্কটাড গত বছরের শেষ প্রান্তিকের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলছে, অবনতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, জিরো কভিড নীতিমালা তুলে নেয়া এবং মূল্যস্ফীতির চাপের বিষয়ে নতুন উদ্বেগের কারণে ওই প্রান্তিকে ব্যবসায় ধীরগতি ছিল। তবে এখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। যদিও ২০২৩ সালজুড়েই বৈশ্বিক বাণিজ্যে মন্দা ভাব থাকবে। সেই সঙ্গে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, এমন প্রত্যাশাও রয়েছে। 

তবে যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জারি থাকে তাহলে বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির বিষয়ে আঙ্কটাডের পূর্বাভাস চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নামতে পারে। ২০২৪ সালে তা দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৩-এ। এর আগে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অন্য দেশগুলোর আমদানি ব্যয় ও খাদ্যের দাম বেড়ে যায়। তবে গত সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দাম কমতে শুরু করে। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। 

আঙ্কটাড বলছে, ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন কারণ, চলমান মূল্যস্ফীতি এবং বিশ্বব্যাপী ঋণের স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবাহে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে আঙ্কটাড। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তা ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বড় নেতিবাচক প্রভাবক হিসেবে বিরাজ করবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে সুদের হার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবেলা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দফায় দফায় বাড়িয়েছে সুদের হার। জাতিসংঘের সংস্থাটি বলছে, বছরজুড়ে নিত্যপণ্যের দাম মহামারীপূর্ব সময়ের চেয়ে বেশিই থাকবে। বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি এবং ধাতুর দাম। উচ্চসুদের হারের কারণে বৈশ্বিক মোট ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। এ দুটির সম্মিলনে অনেক দেশেরই সামষ্টিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

তবে ইতিবাচক কিছু কারণও রয়েছে। যেমন বড় অর্থনীতির দেশগুলোয় অর্থনীতির আউটলুকে পরিবর্তন এসেছে, জাহাজে পণ্য পরিবহনের খরচ কমেছে, ডলারের দাম কমেছে এবং পরিষেবা খাতের চাহিদা বেড়েছে। এসব কিছু মিলিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। 

আঙ্কটাড বলছে, সব মিলিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি বেশ অনিশ্চিত। তবে ইতিবাচক কারণগুলো নেতিবাচক ধারাকে কিছুটা দমন করতে সহায়তা করবে বলেও প্রত্যাশা করা হচ্ছে। 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ধারায় কিছু পরিবর্তন আসবে। এ পরিবর্তন প্রভাবিত হবে বড় বড় কোম্পানির কিছু সিদ্ধান্তের কারণে। আর সেটি হলো কোম্পানিগুলো তাদের কারখানার অবস্থান পরিবর্তন করে মূল ভোক্তাদের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। সরবরাহ চেইনে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে নিজ নিজ মূল দেশেও ফিরছে কারখানা। ফলে প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে কিছুটা বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হতে পারে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সৃষ্টি হতে পারে আঞ্চলিকীকরণ। আবার পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যনীতির দিকে অর্থনীতিগুলো ঝুঁকতে শুরু করায় বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবাহেও এর প্রভাব দেখা দিচ্ছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২২ সালের শেষ দিকে পরিবেশবান্ধব পণ্যের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তা দ্বিতীয়ার্ধের নিম্নমুখী প্রবণতায় বাধা সৃষ্টি করে। গত বছর বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩২ ট্রিলিয়নে পৌঁছে। তবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করায় এবং বিভিন্ন ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় বছরের শেষার্ধে এসে ব্যবসার প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক ধারা দেখা যায়। তবে এসবের মধ্যে ভালো বিষয় হলো পরিবেশবান্ধব পণ্যের অবস্থান শক্তিশালী হওয়া।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন