যশোরে রেজিস্ট্রার ও সাব রেজিস্ট্রার নেই ৩ মাস

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

যশোরের সাবেক কৃষি কর্মকর্তা সুবাশ দত্ত জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য এক সপ্তাহ ধরে ঘুরছেন, কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় তিনি কাজ সম্পাদন করতে পারছেন না। সদরের ফতেপুর গ্রামের রবিউল হোসেনও প্রায় এক মাস ধরে রেজিস্ট্রি অফিস ঘুরে জমি বিক্রি করতে না পারায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। 

শুধু ওই দুজন নয়, শত শত মানুষ তিন মাস ধরে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সেখান থেকে বলা হচ্ছে, সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। সংকট নিরসনে কারো কোনো উদ্যোগও নেই।

সরজমিন বৃহস্পতিবার যশোর রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য শত শত মানুষ অপেক্ষা করছে। দুপুর ১২টা বাজলেও সাব-রেজিস্ট্রার নেই। যে কারণে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন মাস ধরে জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব রেজিস্ট্রার নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত মণিরামপুরের সাব রেজিস্ট্রার পারভেজ খান অফিসে এলেও অফিস করছেন না। কেন তিনি অফিস করছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই অসুস্থ। শারীরিকভাবে দুর্বল। যে কারণে অফিসের কাজ করতে পারছি না। মানুষ হয়রানি হলেও আমার কিছু করার নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। লোকবল না দেয়ায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করছে।’

ঝিনাইদহের জেলা সাব রেজিস্ট্রার আসাদুল ইসলাম যশোরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ২৯ নভেম্বর জেলা রেজিস্ট্রার শাজাহান সরদার অবসরে যাওয়ার পর আর কাউকে এ পদে নিয়োগ দেয়নি সরকার। একই সঙ্গে যশোর সদর, শার্শা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় সাব রেজিস্ট্রার নেই। সদরের সাব রেজিস্ট্রার ইমরুল হাসান অপারশনের জন্য গত তিন মাস ছুটিতে রয়েছেন। ফলে অন্য উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার সপ্তাহে একদিন করে দায়িত্ব পালন করছেন। লোকবল সংকটে যশোরের রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে আমরা মন্ত্রণালয়কে অবগত করেছি।’

যশোর সদরের আন্দাবাদ কলেজের শিক্ষক আজিজুর রহমান কাজল বলেন, ‘আমি তিনদিন ধরে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য আসছি। কিন্তু সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় কাজ করতে পারছি না। আমার মতো এ অফিসে এসে শত শত মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। সরকার এ খাত থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করলেও হয়রানি থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার উদ্যোগ নেয় না।’

শহরের বেজপাড়ার চপল বিশ্বাস বলেন, ‘সাধারণভাবে এখানে কাজ হচ্ছে না। তবে বেশি টাকা দিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব রেজিস্ট্রার কাজ করছেন। এজন্য অনেকে পেশকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অফিসটিতে প্রকাশ্য ঘুসবাণিজ্য চললেও সরকারের এদিকে কোনো নজর নেই।’

যশোর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের (সদর) পেশকার বদর উদ্দিন জানান, তিন মাস ধরে সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় জমি রেজিস্ট্রি কম হচ্ছে। প্রতিদিন আমাদের এখানে আবেদন জমা পড়ে দেড় শতাধিক। সাব রেজিস্ট্রার থাকলে প্রায় সবই নিষ্পত্তি করা হয়। এ খাত থেকে সরকার প্রতি মাসে রাজস্ব আদায় করে প্রায় ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু এ কার্যালয়ে প্রায় তিন মাস ধরে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে না। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন