ভয়াল ২৫ মার্চ

গণহত্যা দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে সাধারণ বাঙালির ওপর নির্মমভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে অস্ত্রসজ্জিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। অপারেশন সার্চলাইট নাম দিয়ে ঢাকায় সেদিন চলে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। ২০১৭ সাল থেকে দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। ইতিহাসের ভয়ংকরতম দিনের স্মরণে গতবারের মতো এবারো রাতে মিনিটের জন্য অন্ধকারে ঢেকে যাবে দেশ।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতি বছরের মতো এবারো ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে এক মিনিট অন্ধকারে (ব্ল্যাক আউট) থাকবে সারা দেশ। রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ব্ল্যাক আউট পালন করা হবে। তবে কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাগুলো কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

গণহত্যা দিবস পালনে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সারা দেশে গণহত্যা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোয় সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষকে অনুরোধ জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী আলাদা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়। এমন গণহত্যা আর কোথাও যাতে না ঘটে, গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে সে দাবিই বিশ্বব্যাপী প্রতিফলিত হবে।

রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, সব বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নতি আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প ২০৪১ ঘোষণা করেছেন। লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্রপতি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্যকর অবদান রাখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করার মধ্য দিয়েই আমরা একাত্তরের গণহত্যায় জীবনদানকারী প্রতিটি প্রাণের প্রতি আমাদের চিরন্তন শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে পারি।

নিজের বাণীতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের শহীদদের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক নিয়ে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা এবং রাজারবাগে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষক, বাঙালি পুলিশ সামরিক সদস্যদের হত্যা করতে থাকে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। এর অব্যবহিত পূর্বেই জাতির পিতা স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা বার্তা লিখে যান ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীনচূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। যা প্রথমে ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে বার্তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়, দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারায় এবং গোটা দেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছি। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গণহত্যা এড়াতে ভীতসন্ত্রস্ত ১১ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা বাংলাদেশ -দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ন বাস্তবায়ন করছি; ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পরিকল্পনাকে সময়োপযোগী করে বাস্তবায়ন করতে পারবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন