হ্যাকিং থেকে সেলফোন সুরক্ষায় করণীয়

ছবি: গিজচায়না

আমাদের জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ সেলফোন। পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি অনেক ব্যক্তিগত তথ্যও জমা থাকে এতে। তবে সেলফোন ব্যবহারের সঙ্গে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিও বাড়ছে। একজন হ্যাকার সহজেই সেলফোনে প্রবেশ করে ব্যাংক, ব্যক্তিগত ছবি ও ইমেইলের মতো সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে নিতে পারে। তাই সেলফোনকে হ্যাকারদের হাত থেকে সুরক্ষার্থে ২০টি বিষয়ে জানিয়েছে গিজচায়না।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার: সেলফোন সুরক্ষিত রাখার প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হচ্ছে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার। তাই এমন পাসওয়ার্ড সেট করুন যাতে বড় ও ছোট অক্ষর, সংখ্যাসহ বিশেষ অক্ষর থাকে। অপারেটিং সিস্টেম আপডেট: প্রায়ই নিরাপত্তা ত্রুটির সমাধানে অপারেটিং সিস্টেম আপডেট দেয়া হয়। আপডেটের মাধ্যমে হ্যাকাররা অনুপ্রবেশ করতে পারে এমন সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে। তাই সেলফোন অপারেটিং সিস্টেমটি নিয়মিত আপডেট গুরুত্বপূর্ণ। 

অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডে বিশ্বস্ত সোর্স: গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের মতো বিশ্বস্ত সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড সেলফোনকে ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষা দেয়। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার: অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টলের মাধ্যমে ভাইরাস, স্পাইওয়্যার ও ট্রোজানসহ বিভিন্ন ম্যালওয়্যার থেকে সেলফোনকে সুরক্ষিত রাখা যায়। 

পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারে সতর্ক থাকা: পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্কগুলো অনিরাপদ। এটি হ্যাকারদের সেলফোনে প্রবেশকে সহজ করে তোলে। ব্যাংকিং, অনলাইন শপিং বা ব্যক্তিগত ইমেইল অ্যাকসেস করার মতো সংবেদনশীল কাজে পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করাই ভালো।

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন: টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (টুএফএ) হচ্ছে নিরাপত্তার অতিরিক্ত একটি স্তর। এটি ব্যবহারকারীকে অ্যাকাউন্টে প্রবেশের জন্য দুই পর্যায়ের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়। টুএফএ কার্যকর থাকলে পাসওয়ার্ড চুরি হলেও ডিভাইসে সহজে প্রবেশ করা যাবে না। 

ফিশিং স্ক্যাম: ফিশিং স্ক্যামগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য গ্রহণের লক্ষ্যে প্রতারণা করতে সক্ষম। এতে ব্যবহারকারীর কাছে পাসওয়ার্ড বা ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত তথ্য চাওয়া হয়। এ ধরনের ইমেইল বা টেক্সট মেসেজ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া কোনো লিংকে ক্লিক করতে বললেও প্রবেশ করা যাবে না।

রিমোট ওয়াইপ অপশন কার্যকর করা: সেলফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে, রিমোট ওয়াইপ অপশন ব্যবহারকারীকে ফোনের সমস্ত তথ্য দূর থেকে মুছে ফেলতে সাহায্য করে। ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যে অন্যের অনুপ্রবেশকেও রুখে দেয়। 

সেলফোন রুট বা জেলব্রেক: রুট করা বা জেলব্রেক বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার ও ভাইরাসের জন্য ব্যবহারকারীর সেলফোনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। তাই সেলফোন রুট বা জেলব্রেক করা থেকে বিরত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

অনলাইনে তথ্য প্রকাশ: অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য—যেমন পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ডের বিবরণ সম্পর্কিত তথ্য কখনোই শেয়ার করা যাবে না। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কিছু শেয়ার করার আগে ভেবে নিতে হবে ও সতর্ক থাকতে হবে। 

এনক্রিপশন ব্যবহার: এনক্রিপশন হচ্ছে ব্যবহারকারীর তথ্যকে একটি কোডে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া, যা শুধু ব্যবহারকারীই দেখতে ও প্রবেশ করতে পারবে। ব্যাংকিং বিবরণ, ব্যক্তিগত ছবি এবং ইমেইলের মতো তথ্য সুরক্ষার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

ভিপিএন ব্যবহার: ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক হচ্ছে এমন একটি টুল যা ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট সংযোগ এনক্রিপ্ট করে ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রুট করে। এটি সেলফোনের তথ্যকে পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক বা অন্যান্য অসুরক্ষিত নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। 

সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক না করা: প্রতারণার ফাঁদ হিসেবে হ্যাকার প্রায়ই ব্যবহারকারীকে ম্যালওয়্যার ডাউনলোড বা ভুয়া ওয়েবসাইট দেখার লিংক সরবরাহ করে। সন্দেহজনক লিংক বা পপ-আপে ক্লিক করা এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে প্রেরক যদি আজানা হয়। 

অ্যাপ আপডেট করা: অপারেটিং সিস্টেমের আপডেটের মতো ডিভাইসে থাকা বিভিন্ন অ্যাপের আপডেট সময়মতো দিতে হবে। আপডেটগুলো নিরাপত্তা প্যাচের সঙ্গে আসে। সর্বশেষ নিরাপত্তা ফিচার সংশ্লিষ্ট অ্যাপ আপডেট নিশ্চিত করতে হবে।

বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন: বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন—যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং বা ফেসিয়াল রিকগনিশন, সেলফোনকে নিরাপত্তার অতিরিক্ত একটি স্তর প্রদান করে। হ্যাকারদের কাছে পাসওয়ার্ড থাকলেও এটি ব্যবহারকারীর সেলফোনের তথ্যে প্রবেশে বাধা দেয়। 

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহারকারীর সব অ্যাকাউন্টের জন্য জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি ও সঞ্চয় করতে পারে, যা শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাকেও সহজ করে তোলে।

অ্যান্টি-থেফট ফিচার: বেশিরভাগ সেলফোনে অ্যান্টি-থেফট ফিচার, যেমন ফাইন্ড মাই আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ম্যানেজার থাকে। এ ফিচারগুলো চালু রাখতে হবে। সেলফোনটি হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলে এ ফিচারগুলো এটি শনাক্ত করতে সহায়তা করে।

সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংবিষয়ক সতর্কতা: সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীকে তার ব্যক্তিগত তথ্য বা পাসওয়ার্ড প্রদানের জন্য প্রতারণা করে। এ ধরনের অযাচিত অনুরোধ এলে এড়িয়ে যেতে হবে।

পাবলিক চার্জিং স্টেশন পরিহার: যে কারো সেলফোনে থাকা তথ্যে প্রবেশের জন্য হ্যাকাররা পাবলিক চার্জিং স্টেশন ব্যবহার করতে পারে। তাই পাবলিক চার্জিং স্টেশন ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। ব্যবহারের প্রয়োজন হলে অবশ্যই তথ্য এনক্রিপ্ট করে রাখতে হবে।

ব্যাকআপ রাখা: নিয়মিত সেলফোনের তথ্য ব্যাকআপ রাখা জরুরি। সেলফোন হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলে তা পুনরুদ্ধার করতে এটি সহায়তা করে। হ্যাকারদের থেকে এ তথ্য নিরাপদ রাখতে ক্লাউড পরিষেবা ব্যবহার সুবিধাজনক। বণিক বার্তা ডেস্ক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন