মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউএইভিত্তিক আল ঘুরায়ের এক্সচেঞ্জের একটি শাখার সম্মুখভাগ ছবি: অ্যারাবিয়ান বিজনেস

ভারত, চীন, মেক্সিকো, ফিলিপাইন, মিসরসহ অনেক দেশেরই অন্যতম রেমিট্যান্স উৎস মধ্যপ্রাচ্য। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সমীক্ষা অনুসারে, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকের চারজনের মধ্যে তিনজনই মনে করছেন আগামী ১২ মাসে পরিবার-পরিজনের কাছে আরো বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে হবে তাদের। চলমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির জের ধরে পারিবারিক ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আগের তুলনায় বেশি অর্থ প্রেরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে তারা। খবর দ্য ন্যাশনাল।

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের তথ্যানুসারে, মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত ৬৬ শতাংশ গ্রাহকই মাসে এক বা একাধিকবার অর্থ প্রেরণ অথবা গ্রহণ করেন। পেপ্যালের পর ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থ লেনদেনকারী সংস্থা।

জরিপের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ উত্তরদাতা জানান, উচ্চজীবনযাত্রার ব্যয়ের মতো অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জে আগের বছরের তুলনায় তারা বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। এদিকে অর্থগ্রহণ করেন, এমন ৭৯ শতাংশ গ্রাহক জানিয়েছেন তাদের আরো অর্থের প্রয়োজন।

গত ৩১ অক্টোবর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২০টি দেশের ৩০ হাজার ৬০০ জন গ্রাহকের ওপর জরিপটি পরিচালিত হয়। এ প্রসঙ্গে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লদ ফারাহ বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিগুলো মহামারী-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের দিকে অগ্রসর হওয়ায় আমরা সবাই অনেকটা স্বস্তি অনুভব করেছি। তবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আরো চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।’

নভেম্বরে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংক তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালে বার্ষিক ভিত্তিতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় রেমিট্যান্স প্রবাহ ৫ শতাংশ বেড়ে ৬২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যদিও তা ২০২১ সালে রেকর্ড ১০ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধির চেয়ে কম ছিল।

বিশ্বব্যাংকের আগের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় বৈশ্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ৫৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচটি অন্যতম রেমিট্যান্স গন্তব্য হলো ভারত, চীন, মেক্সিকো, ফিলিপাইন ও মিসর।

তবে কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় চালু হলেও অভিবাসীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো কমেছে। ফলে নিজ পরিবারকে সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতাও কমেছে তাদের। তাছাড়া ক্রমবর্ধমান খরচ বৃদ্ধি অভিবাসীদের প্রকৃত আয়ের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের জরিপে আরো উঠে এসেছে, রেমিট্যান্স প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য পরিবারকে সমর্থন করা। তবে মধ্যপ্রাচ্যের গ্রাহকরা বলেছেন, ভবিষ্যতের অর্থ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। রেমিট্যান্স প্রেরণের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ হিসেবে উঠে এসেছে শিক্ষাসংক্রান্ত খরচ। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের গ্রাহকরা জানিয়েছেন, সন্তানদের শিক্ষাবাবদ খরচ মেটানোর জন্য অর্থ প্রেরণ করেন তারা। এর পরে রয়েছে পরিবারের সদস্যদের ব্যবসাসংক্রান্ত সহযোগিতা এবং ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সঞ্চয়ের বিষয়টি।

মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ উত্তরদাতাই জানিয়েছেন, তাদের দেশে মুদ্রার মান কমে গেলে তারা বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠিয়ে থাকেন। তবে বিনিময় মূল্য ও লেনদেনের চার্জের ওপর নির্ভর করে গ্রাহকরা কোন সংস্থার মাধ্যমে অর্থ পাঠাবে। জরিপে ৪০ শতাংশ উত্তরদাতাই ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করতে চান বলে জানিয়েছেন, তবে ১৯ শতাংশই ব্যক্তিগত চ্যানেল পছন্দ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন