সহ-সভাপতিকে মারধর, জাবি ছাত্রলীগের ৫ নেতা-কর্মী বহিষ্কার

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, জাবি

ছবি: বণিক বার্তা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদলকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা-কর্মীকে সাময়িক বহিস্কার করেছে প্রশাসন। এছাড়া বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে অবস্থান করতে পারবেন না।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বহিষ্কৃতরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আহমেদ গালিব, আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ইমরুল হাসান অমি, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মো. কাইয়ুম হাসান, একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য মো. আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগকর্মী তানভীরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

এ দিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ১৭(খ) ধারা অনুযায়ী দলের জরুরি সিদ্ধান্তে ইমরুল হাসান অমি (উপ-আইন সম্পাদক), আহমেদ গালিব (সহ-সম্পাদক), আহসানুল হাবীব রেজা (সদস্য)-র পদ স্থগিত করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হচ্ছে, গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে পূর্ব শত্রুতার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বাদলের ওপর অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় বহিষ্কৃতরা। এতে বাদল মাথায় গুরুতর আঘাত পান। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়।

সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আহত বাদল। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাত নয়টায় জাবি শৃঙ্খলা কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়।

এর আগে সাভারের সুলতান ডাইন রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে গত ১৯ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) ৪৭তম ব্যাচের ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানকে মারধর করে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন মাহফুজ। পরে ওই ঘটনার জেরে বুধবার সন্ধ্যায় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ গালিবকে পাল্টা মারধর করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দুই সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। মারধরের ঘটনায় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন গালিব।

এ দিকে ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যাচেষ্টা, দুই সাংবাদিককে হেনস্থা ও প্রক্টরিয়ায় বডির সদস্যদের গালিগালাজসহ আগের সব ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক, সদস্য রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শাহেদ রানা, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন ও গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুর্শেদা বেগম এবং সদস্য সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা মাহতাব উজ জাহিদ।

সার্বিক বিষয়ে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ ধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত। মারধর ও সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন