দাম না কমালে মুরগি আমদানির পরামর্শ এফবিসিসিআইয়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামে হঠাৎ উল্লম্ফণের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, এক মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা কীভাবে বাড়তে পারে? যদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে পোলট্রি শিল্প খাতসংশ্লিষ্টরা প্রতারণা করেন, তাহলে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতের বিষয়টি বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে মাংস ডিম আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া যেতে পারে। এছাড়া আমরা কোনো উপায় দেখছি না।

গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআইয়ের বোর্ডরুমে রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এক মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি।

তিনি বলেন, দেশীয় উৎপাদক ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে, কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিলে তো হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেয়া যাবে না। বাজার সহনশীল রাখতে আমরা আমদানির অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করব।

তবে বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য ভোক্তাদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পণ্য কিনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে না। হঠাৎ কয়েকদিনে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে কঠোর হবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই বাজার কমিটি বাতিল করে দেয়া হবে। একই সঙ্গে দাম বেশি নেয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক বা কাউকে আটক করা হোক।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন, আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না। বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পাম অয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য।

জসিম উদ্দিন বলেন, অনেক ভোক্তা একসঙ্গে অনেক পণ্য কিনে রাখেন, তখন দোকানে মজুদ না হয়ে ভোক্তার বাসায় এক ধরনের মজুদ হয়। এটি ঠিক নয়।

বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে আমাদের দেশেও দাম বাড়বে উল্লেখ করে ব্যবসায়ী নেতা বলেন, সরকার অনেক জায়গায় ভর্তুকি দিচ্ছে, দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, খেজুরসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের আমদানি, মজুদ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিন লাখ টনের বেশি চিনি রয়েছে, ভোজ্যতেলও চাহিদার তুলনায় বেশি মজুদ আছে। নিত্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতির কোনো শঙ্কা নেই। বৈশ্বিক কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়লে ব্যবসায়ীদের কিছু করার থাকে না। তবে অবৈধভাবে কেউ যেন দাম  না বাড়ায়আমরা সে বিষয়টি মনিটরিং করব। কোনো ব্যবসায়ী অবৈধভাবে দাম বাড়ালে সংশ্লিষ্ট বণিক সমিতিকে সেই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেটা না করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই বণিক সমিতির লাইসেন্স বাতিল করবে। এক্ষেত্রে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সরকারকে সহযোগিতা করা হবে।

সময় এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য যা বৃদ্ধি পাওয়ার পেয়েছে। রমজানকে কেন্দ্র করে দাম যেন নতুন করে না বাড়ে। আমরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জেনেছি চিনি, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। পাইপলাইনেও যথেষ্ট পণ্য রয়েছে। গত বছর ঈদের আগে বাজারে যে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল, এবার যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়। ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস এবং ডিমের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকার মাংস ডিম আমদানির চিন্তাও করতে পারে। এতে স্থানীয় শিল্প হুমকিতে পড়বে। এফবিসিসিআই সেটা চায় না বলেই সবাইকে নিয়ে মতবিনিময় সভায় বসেছে।

সরকার বিভিন্ন নিত্যপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার কারণে বাজার প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মুখপাত্র কাজী আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, অবৈধ মুনাফা রোধকল্পে বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করা জরুরি। এর জন্য নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমাতে হবে। দেশে শিল্প তৈরির জন্য সরকার কয়েকটি পণ্যের আমদানিও বন্ধ রেখেছে। এখন ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ওপর চাপ দিচ্ছেন। আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া ছাড়া সমস্যার সমাধান নেই। এখানে যদি উৎপাদন খরচ বেশি হয় তাহলে আমদানি করে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। এভাবে চলতে পারে না, মানুষের কষ্ট হচ্ছে।

সভায় সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমাদের কাছে চিনি-ভোজ্যতেলের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে রোজায় কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না।

মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি এমএম মোমেন, মো. আমিন হেলালী, পরিচালক এমজিআর নাসির মজুমদার, বিজয় কুমার কেজরিওয়াল, হাফেজ হারুন, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, আবু হোসেন ভূঁইয়া রানু, আক্কাস মাহমুদ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনসহ অন্য ব্যবসায়ী নেতারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন