রমজানে পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা

বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রাধিকার পাবে গ্যাস সীমিত হবে আবাসিকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রমজানে দেশে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখতে পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা। পরিকল্পনায় দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হবে। সার কারখানা, সিএনজি স্টেশন আবাসিকে সীমিত সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুযায়ী আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করা হলে পুরো রমজানে রাজধানীসহ সারা দেশে আবাসিক গ্রাহকরা সংকটে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সেচ মৌসুম গ্রীষ্মকালের গ্যাস উৎপাদন, এলএনজি সরবরাহ গ্রাহকশ্রেণীভিত্তিক গ্যাস বরাদ্দের বিষয়ে পরিকল্পনা তুলে ধরেছে পেট্রোবাংলা। গতকাল প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় রমজানে গ্যাস সরবরাহ পরিকল্পনার বিষয়ে অবহিত করা হয়।

পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা থেকে জানা যায়, পুরো রমজানে বিদ্যুতের পিক মৌসুমে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ সীমিত রাখা হবে। বিদ্যুৎ শিল্পকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় আবাসিকেও সীমিত করা হবে গ্যাস।

মতবিনিময় সভায় পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, রমজানে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে পেট্রোবাংলা একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করব যাতে কোথাও সংকট তৈরি না হয়।

পেট্রোবাংলার তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় গড়ে দৈনিক ১১২ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে পিক আওয়ারে চাহিদা ১৫৮ কোটি ঘনফুটে উঠতে পারে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বলছে, তারা গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের মতো। তবে তাদের দৈনিক চাহিদা তৈরি হচ্ছে গড়ে ১২০ কোটি ঘনফুটের মতো। আর পিক আওয়ারে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৩০ কোটি ঘনফুটের কাছাকাছি।

চলতি বছরে রমজান, সেচ গ্রীষ্ম মৌসুম একসঙ্গে শুরু হয়েছে। ফলে অন্য মৌসুমের তুলনায় স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি। মৌসুমে বিদ্যুৎ বিভাগ ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রাক্কলন করেছে। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হতে পারে বলে বিদ্যুত্সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। বিদ্যুতের বড় একটি অংশ আসছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বিবেচনায় অন্যান্য খাতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করার পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির দৈনিক গ্যাস সরবরাহ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২১-২২ মার্চ জাতীয় গ্রিডে মোট গ্যাস সরবরাহ ছিল প্রায় ২৯০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে স্থানীয় সরবরাহ ছিল ২১৮ কোটি ঘনফুট। আর আমদানীকৃত এলএনজি সরবরাহ ছিল ৭২ কোটি ঘনফুট।

স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন ২৩০ কোটি ঘনফুটের বেশি বাড়ানো সম্ভব নয়। এছাড়া দেশের বিদ্যমান এলএনজি অবকাঠামোর যে সক্ষমতা তাতে সর্বোচ্চ ৮৫ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের কথা জানায় পেট্রোবাংলা। স্থানীয় আমদানি উৎস মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৩১৫ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ দেয়া যেতে পারে। অন্যদিকে পেট্রোবাংলার প্রাক্কলন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪০০ কোটি ঘনফুটের ওপরে।

স্পট মার্কেটে মুহূর্তে এলএনজির দাম দু-তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বর্তমানে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩-১৪ ডলারে ওঠা-নামা করছে। অবস্থায় সাশ্রয়ী মূল্যে এলএনজি পাওয়া গেলেও অবকাঠামোগত সংকটের কারণে সরবরাহ কোনোভাবেই ৮৫ কোটি ঘনফুটের বেশি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।

দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি সরবরাহের পাশাপাশি চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশে ১২ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করেছে জ্বালানি বিভাগ। এরই মধ্যে স্পট মার্কেট থেকে চার কার্গো এলএনজি এসেছে দেশে। গতকাল অর্থনৈতিক ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আরো এক কার্গো এলএনজি আনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি এলএনজি কার্গো সরবরাহ করবে। ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কার্গো আমদানিতে পেট্রোবাংলার খরচ পড়বে ৫৭৮ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ১২২ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়েছে ১৩ ডলার ৬৯ সেন্ট।

এছাড়া মতবিনিময় সভায় ভোলা থেকে গ্যাস আনার পরিকল্পনার বিষয়ে পেট্রোবাংলা জানায়, এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নীতিগত অনুমোদন মিলেছে। আগামী জুনে ভোলার গ্যাস সিএনজি করে এনে গাজীপুর টাঙ্গাইলের শিল্প-কারখানায় সরবরাহ করা হবে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান, পরিচালক (পরিকল্পনা) আবদুল মান্নান পাটওয়ারী, পরিচালক (প্রশাসন) মো. আলতাফ হোসেন রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) কর্মকর্তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন