জোড়াতালির বাঁধে অরক্ষিত উপকূল

কাজ শুরুর আগেই দুর্নীতি বর্ষায় বিপদের আশঙ্কা

ওবায়দুল্লাহ সনি

বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বছরই প্রকল্প নেয় পাউবো। জোড়াতালি দিয়ে চলে মেরামতকাজ। দুর্যোগ এলে দুর্বল বাঁধ আবার ভেঙে পড়ে ছবি: ফাইল/নিজস্ব আলোকচিত্রী

সুন্দরবন লাগোয়া উপকূলীয় এলাকায় এমনিতেই বৃষ্টি বেশি হয়। চারপাশে ফাঁকা জায়গা, নদ-নদীরও অভাব নেই। বঙ্গোপসাগর কাছে থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রাথমিক ধাক্কাটাও সহ্য করতে হয় অঞ্চলকে। লোকালয়ে নোনাজল ঠেকাতে তাই স্থানে স্থানে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য বাঁধ। তবে প্রতি বছর বর্ষা এলেই এসব নদীরক্ষা বাঁধে ফটল দেখা দেয়। কখনো আবার পানির চাপে দাঁড়াতেই পারে না। তখন জোড়াতালি দিয়ে চলে মেরামতি। বেশি দিন তা স্থায়ী হয় না। ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ এলে দুর্বল বাঁধ ভেঙে পড়ে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতি। বাড়িঘর হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয় হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংস্কারের নামে লুটপাটের কারণেই বাঁধগুলোর পরিণতি।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদীসংলগ্ন চাকলা গ্রামের সাদ্দাম হোসেন। বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকেন। তিনি জানান, দুর্যোগের পর প্রতিবারই টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি ওঠে। প্রতিশ্রুতিও মেলে। কিন্তু এর বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে উপকূল রক্ষায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ আর বাস্তবে রূপ পায় না। ভোগান্তির শেষ হয় না উপকূলবাসীর। প্রতি বছরই বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘর ফসলি জমি নোনাপানিতে তলিয়ে যায়। নিজের ভিটা ফেলে আশ্রয় নিতে হয় অন্যত্র। এলাকার অসংখ্য মাছের ঘেরও ডুবে যায়। এতে বছরে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, দেশের ১৩ জেলায় ষাটের দশকে হাজার ৮১০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় ১৩৯টি পোল্ডার বা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে স্বাধীনতার ৫২ বছরে নতুন আর কোনো পোল্ডার তৈরি হয়নি। পাকিস্তান আমলের এসব বাঁধ সংস্কার আর পুনর্নির্মাণেই কেটে গেছে অর্ধশত বছর। এগুলোর নকশাও সেই মান্ধাতা আমলের। উচ্চতা মাত্র ১০ ফুট। অথচ আমফানসহ সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস বয়ে এসেছে ১২-১৫ ফুট ওপর দিয়ে। ফলে ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রেখার প্রায় ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা এখনো অরক্ষিত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো প্রকল্প হাতে নেয় পাউবো। দরপত্র ছাড়াই সরকারি সংস্থাটি জরুরি সংস্কারের নামে কাজ দেয় পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। তারা আবার অর্ধেক মূল্যে স্থানীয় সাব-ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। লাভ রেখে পরবর্তী সময়ে শ্রমিক সর্দারদের কাছে সে কাজ বিক্রি করে দেন স্থানীয় ঠিকাদারও। এভাবে কয়েক হাত ঘুরে প্রকল্পের মূল টাকার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ ব্যয় হয় বাঁধ মেরামতে। এমনকি লাভের আশায় অপ্রয়োজনীয় স্থানেও সংস্কার প্রকল্প নেয়া হয়। চলতি অর্থবছরেও বিভিন্ন স্থানে একইভাবে বাঁধ মেরামতের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। নামমাত্র কাজ করে সেই টাকা পকেটে ভরছে পাউবোর অসাধু কর্মকর্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া কয়রাতিনটি নদ-নদীর ১২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ঘেরা খুলনার কয়রা উপজেলা। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস নদীভাঙনে প্রতি বছরই প্লাবিত হয় ওই এলাকার হাজার হাজার বসতি। স্থানীয়রা জানান, জরুরি কাজের নামে বিগত ১০ বছরে কয়রার বেড়িবাঁধ সংস্কার নির্মাণ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ১৪২ কোটি ৫৮ লাখ হাজার টাকারও বেশি। জোড়াতালিতেও বাঁধ সংস্কারের নামে যেটুকু কাজ হয়, সেখানেও রয়েছে অর্থ লুটপাটের অসাধু চক্র। বছরও তা- হচ্ছে।

পাউবোর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ ২০২২-২৩ অর্থবছরে খুলনার কয়রা উপজেলার দুটি পোল্ডারে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১৮টি স্থান নির্ধারণ করা হয়। এগুলো মেরামতের জন্য সরকার কোটি ৮৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু কোনো দরপত্র ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি স্থানের কাজ পেয়েছেন যশোরের কেশবপুরের প্রতিষ্ঠান তানিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল মতিন। বাকিগুলোর মধ্যে চারটি স্থানীয় ঠিকাদার মোজাফ্ফর হোসেন এবং দুটি স্থানের কাজ পান সিরাজউদ্দৌলা লিংকন খলিলুর রহমান নামে দুই ঠিকাদার।

সম্প্রতি ওইসব এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চোরামুখা এলাকার বেড়িবাঁধের চার স্থানের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, চারটি স্থানে হাজার ২০ মিটার বাঁধে রিং-ডাইক অস্থায়ী ঢাল সংরক্ষণের কাজ করা হয়েছে। এর জন্য বরাদ্দ ছিল কোটি ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা। তবে ওই কাজ মাত্র ২০ লাখ টাকায় শেষ করা হয়েছে বলে জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রমিক সর্দাররা। চারটি স্থানের মধ্যে দুটিতে কোনো মাটির কাজই হয়নি। বালিভর্তি সামান্য কিছু জিও ব্যাগ বাঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে।

কাজের ঠিকাদার স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন দাবি করেন, পাউবোর নকশা অনুযায়ীই তিনি কাজ করিয়েছেন। এত কম টাকায় কাজ শেষ করার বিষয়ে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, পাউবো সব কাজই তো তাদের পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে করিয়েছে। আমি মাত্র চারটির কাজ পেয়েছি, তাও সাব-কন্টাক্টে। সব ঘাপলা তো মূল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পরামর্শেই হয়েছে। বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার আব্দুল মতিনের সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

প্রকল্পটির আওতায় হরিহরপুর এলাকায় বাঁধের ঢালে সিমেন্টের ব্লকের ওপর কিছু জিও ব্যাগ সাজিয়ে রেখে কাজ শেষ দেখানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগেই এখানে বাঁধ নির্মাণের কাজ হয়। নতুন করে কাজের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। মূলত টাকা লুটপাট করতেই নামসর্বস্ব কাজ দেখানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূল ঠিকাদারের হয়ে কাজটি করেছেন অহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনিও দাবি করেন, পাউবোর নকশা অনুযায়ীই কাজ করেছেন।

দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের মেদেরচর এলাকায় ৪০০ মিটার বাঁধের মাটির কাজ কিছুটা করেই ফেলে রাখা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলাম জানান, নিয়ম অনুযায়ী দুই পাশের ঢালে মাটি ভরাট করার পর বাঁধ উঁচু করার কথা। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মূল বাঁধের মাটি ছেঁটে ওপরে তুলে উঁচু করছিল। তাই স্থানীয়রা সে কাজে বাধা দেয়। কাজেরও দায়িত্বে রয়েছেন সাব-ঠিকাদার অহিদুল ইসলাম।

এদিকে বনায়নের গাছ উপড়ে ফেলে কয়রা গ্রামের শাকবাড়িয়া নদীর পাড়ে এক্সক্যাভেটর দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কারের অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে যদিও সে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন ঠিকাদার। জানা যায়, এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয়পদ্ধতির মাধ্যমে বিপ্লব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেয় পাউবো। তাদের হয়ে তত্ত্বাবধানে আছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য হরেন্দ্র নাথ সরকার। বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজটি মূলত কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতা পেয়েছেন। তার অনুরোধে আমি দেখাশোনা করছি। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবির মুখে আপাতত কাজ বন্ধ আছে।

খুলনার কয়রা উপজেলার বেড়িবাঁধ পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণের (পওর) দায়িত্বে রয়েছে সাতক্ষীরার পাউবো-২। ওই কার্যালয়ের কয়রা অঞ্চলটি দেখাশোনা করেন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আগের অর্থবছরের কাজগুলোয় প্রাক্কলন নকশায় ত্রুটি থাকতে পারে। চলমান অর্থবছরের কাজে ওই সমস্যা নেই। আমরা চেষ্টা করছি আগের ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে। এখন যেভাবে নকশা প্রাক্কলন তৈরি হবে, তা বরাদ্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই করা হবে।

সারা দেশের উপকূলীয় বাঁধের চিত্রটা প্রায় কয়রার মতোই। উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার আইলাদুর্গত গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাকসুদুল আলম জানান, নদীবেষ্টিত তার ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া, দাতনেখালী, পার্শ্বেমারী, জেলেখালী গাবুরা এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন ধরেই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, উপকূলীয় জনপদের মানুষের জানমাল রক্ষা করতে হলে নির্মাণ করতে হবে টেকসই বেড়িবাঁধ। তা না হলে প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকাই কেবল অপচয় হবে। মানুষের কোনো উপকারে আসবে না।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ- -এর অধীনে বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ রয়েছে অন্তত ৩০ কিলোমিটার। যদিও এর পরিমাণ আরো অনেক বেশি ছিল। অনেক এলাকার বাঁধ এরই মধ্যে সংস্কার করা হয়েছে এবং কিছু অংশের কাজ চলমান বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। বিষয়ে সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ--এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, জেলার ছয়টি উপজেলায় আমাদের অধীনে বেড়িবাঁধ রয়েছে ৩৭৯ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বা আংশিক ঝুঁকিপূর্ণ ২৫ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। কিছু এলাকায় সংস্কারের কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে বর্ষার মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার হয়ে যাবে।

অন্যদিকে সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ--এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার জানান, তার কার্যালয়ের অধীনে প্রায় ৪০০ কিলোমটাির বেড়িবাঁধ। এর মধ্যে কয়েকটি পোল্ডারে প্রায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারকাজ চলছে।

বঙ্গোপসাগর, খাপড়াভাঙ্গা নদী, পায়রা নদী, আগুনমুখা নদী তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত সর্বদক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীবাসীকেও ঝড়-বৃষ্টির সময় নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। জেলায় মোট পোল্ডার রয়েছে ৩৬টি। হাজার ৩৩৬ দশমিক ৪২ কিলোমিটার বাঁধের ৬৯ দশমিক ৬০৪ কিলোমিটারই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সদর উপজেলার নান্নু সিকদার বলেন, আমাদের গ্রাম চান্দুখালী পায়রা নদীর পাড়ে। পাউবো যে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছিল তা বিলীনের পথে। এটি দ্রুত মেরামত না করলে এবারের বর্ষায় আমাদের কষ্টের সীমা থাকবে না।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, জেলার বেশ কয়েকটা উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। চলতি অর্থবছরে সেগুলো মেরামতের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়া কিছু এলাকায় নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণে কাজ চলমান আছে।

লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলার মধ্যে রামগতি, কমলনগর, রায়পুর সদরের আংশিকসহ চারটিই মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষা। তবে গত তিন দশকে সবচেয়ে বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে রামগতি কমলনগর। নদীতে বিলীন হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা। ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়েছে লক্ষাধিক উপকূলীয় বাসিন্দা। মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন থেকে দুই উপজেলাকে রক্ষায় হাজার ৮৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।

পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, ৩৪টি প্যাকেজের মাধ্যমে রামগতি কমলনগর উপজেলার ৩১ কিলোমিটার এলাকায় নদীতীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ ৪০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ সম্পন্ন হবে। তবে বর্ষায় তীব্র স্রোত থাকে বলে তখন কাজ চলবে কিছুটা দীর্ঘ গতিতে। বর্ষা শেষে ব্লক পেলে বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা তীব্রতা বাড়বে। ঘন ঘন নিম্নচাপ আর জোয়ার-ভাটার খেলায় উপকূলে চড়বে নোনাপানির আগ্রাসন। এতে মুক্তির জন্য উঁচু মজবুত বাঁধই একমাত্র ভরসা। উপকূল কিংবা নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণে দীর্ঘ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল পরিবেশ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক . মো. মনিরুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে দীর্ঘ কঠিন পথ। এর প্রস্তুতিও নিতে হবে ভেবেচিন্তে, সময় নিয়ে। তাছাড়া বাঁধে সামাজিক বনায়ন করা হলে কিংবা ঘরবাড়ি তুললে সেটি অনেক বেশি সুরক্ষিত থাকে। কেননা নিজেদের স্বার্থেই এলাকাবাসী বেড়িবাঁধকে সুরক্ষিত রাখতে উদ্যোগী হয়। তাই যত বড় অংকের অর্থই বরাদ্দ হোক সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কাজ করলে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে বরাদ্দ পাওয়া অর্থ সবই জলে যাবে।

বাঁধ নির্মাণ রক্ষণাবেক্ষণের ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাতে উঠে আসে স্থানীয় জনগণকে উপেক্ষা করে প্রভাবশালীদের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি; যেখানে প্রভাব খাটান মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, ক্ষমতাসীন দলের নেতা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক পাউবো কর্মকর্তাদের। বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাঁধ নির্মাণ বা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এতে সাধারণ জনগণের ক্ষতি প্রশমনের চেয়ে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যটাই বেশি থাকে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িতদের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের জীবন সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। আমাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসব চিত্র অনেকবার উঠে এসেছে। ফলে এসব কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের পাশাপাশি যারা পেছনে থাকেন এবং যোগসাজশ করেন তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

 

প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বণিক বার্তার খুলনা প্রতিনিধি শুভ্র শচীন, সাতক্ষীরার গোলাম সরোয়ার, লক্ষ্মীপুরের মো. রাকিব হোসাইন রনি পটুয়াখালীর বাদল হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন