আওয়ামী লীগ সরকার সুনির্দিষ্ট ও দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়ে সবকিছু করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে সেবা করার সুযোগ হিসেবে দেখে। অনেক বাধাবিপত্তি মোকাবেলা করে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এর পর থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে।’
গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩’ তুলে দেয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নয় ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ জাতীয় এ বেসামরিক পুরস্কার দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যার পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। স্থিতিশীলতার অভাবে বাংলাদেশ এর আগে খুব একটা অগ্রগতি দেখতে পায়নি।’
দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের সময়োপযোগী ও পরিকল্পিত পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। কারণ, আমরা কখনো অ্যাডহক ভিত্তিতে কোনো পরিকল্পনা নিইনি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। সুনির্দিষ্ট ও দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা সবকিছু করেছি। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আমরা সব সময় দেশের জনগণের কল্যাণকেই প্রাধান্য দিই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা খেলাধুলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, অর্থনীতি এবং অন্যান্য প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। আমরা সম্ভবত একটি বিশ্লেষণের পর আপনাদের দারিদ্র্য হ্রাস সম্পর্কে কিছু সুসংবাদ দেব।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকার প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ এবং প্রত্যেক গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি দিচ্ছে। জনগণের দোরগোড়ায় সঠিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে। প্রতিটি খাতে অগ্রগতির লক্ষ্যে গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার, যার মধ্যে কৃষি, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
দরিদ্রদের জন্য খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে ৩০ টাকা দরে প্রতি কেজি চাল দিচ্ছে। আরো ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার রমজান মাসে আরো ৫০ লাখ মানুষকে প্রতি কেজি ১৫ টাকায় চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।’
তিনি বলেন, ‘চালের পাশাপাশি রমজান মাসে ভর্তুকি মূল্যে ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলাসহ আরো কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আমরা সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে এ মাসে কাউকে খাবারের জন্য কষ্ট করতে না হয়।’
এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) শামসুল আলম, প্রয়াত লেফটেন্যান্ট এজি মোহাম্মদ খুরশীদ (মরণোত্তর), শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া (মরণোত্তর) ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) বীর বিক্রম।
‘সাহিত্য’ ক্যাটাগরিতে প্রয়াত ড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন আহমেদ (সেলিম আল দীন, মরণোত্তর) এবং ‘সাংস্কৃতিক’ ও ‘ক্রীড়া’ ক্যাটাগরিতে যথাক্রমে পুরস্কার পেয়েছেন পবিত্র মোহন দে এবং এএসএম রকিবুল হাসান।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ‘সমাজসেবা/জনসেবা’ বিভাগে এবং ‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’ ক্যাটাগরিতে নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ) ও ড. ফেরদৌসী কাদরী পুরস্কার পেয়েছেন।
এর আগে ৯ মার্চ স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পুরস্কারপ্রাপ্তদের স্বর্ণপদক, সনদ ও সম্মানী চেক দেয়া হয়েছে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।