‘‌সিনেমার দর্শক রয়েছে কিন্তু হলে যাওয়ার আগ্রহ নেই’

সাবিহা জামান শশী

গণঅর্থায়নে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সাঁতাও’ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসা পাচ্ছে। খন্দকার সুমন পরিচালিত এ সিনেমা গত ২৭ জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। সিনেমাটির ট্রেলার প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই দর্শক মহলে আগ্রহ তৈরি হয়, যার প্রমাণ মেলে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২১তম আসরে। বাংলাদেশ প্যানোরমা বিভাগে সিনেমাটির প্রিমিয়ার হয়। মুক্তির সাতদিন আগে গত ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এর প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছিল। প্রদর্শনীর আগেই জাদুঘরের সামনে দর্শকের ভিড়, দীর্ঘ সারি ছিল লক্ষণীয়। আসন না পেয়ে অনেক দর্শক মেঝেতে বসে, কেউ বা দাঁড়িয়ে সিনেমাটি দেখেছে। দর্শকের বিপুল আগ্রহ সত্ত্বেও সিনেমা হল পেতে বেগ পেতে হয়েছিল সাঁতাও নির্মাতাকে। মাত্র এক সপ্তাহ ঢাকার সিনেপ্লেক্সে স্থান পায় সাঁতাও। আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত এ সিনেমা দর্শকের কাছে নিয়ে যেতে বর্তমানে বিকল্প পথে হাঁটছেন নির্মাতা। কেন সিনেমা হল ছেড়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিকল্প প্রদর্শনী, জানতে চাইলে খন্দকার সুমন বলেন, ‘‌আমরা তো সাঁতাও সিনেমা হলে মুক্তি দিয়েছিলাম। বলতে গেলে দর্শকদের ডেকেই আমি হলে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আমরা কিছু সমস্যা দেখলাম, যার একটা হচ্ছে হলে নিজের কোনো দর্শক নেই। একজন নির্মাতা কিংবা প্রযোজকের পক্ষে দর্শককে ডেকে হলে আনা সম্ভব নয়। যদিও বা আনলাম, দেখা গেল অনেক হলের স্ক্রিন, প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম ভালো নয়। এমনকি বসার আসনের অবস্থাও ভালো না। এখন যে হলগুলো রয়েছে, সেগুলো সিনেমা দেখানোর উদ্দেশ্যে আর ব্যবহারও হচ্ছে না। সিনেমা দেখার পরিবেশ বেশির ভাগ হলেই নেই।’

 সিনেপ্লেক্স ও হলে যেতে দর্শকের অনীহার কারণে খন্দকার সুমন বিকল্প প্রদর্শনীর কথা ভেবেছেন এবং সারা দেশে সে অনুসারে বেশকিছু প্রদর্শনী করেছেন। বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংগঠনের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিনেমাটির প্রদর্শনী করেছেন। হলসংক্রান্ত বিষয় ও বিকল্প প্রদর্শনীর সুফল নিয়ে নির্মাতা বলেন, ‘‌হলে যদি দর্শক ডেকেই আনতে হয়, তাহলে কেন বিকল্প প্রদর্শনী করব না। হলের প্রতি মানুষের আগ্রহ একেবারেই নেই, কিন্তু বিকল্প প্রদর্শনীতে প্রচুর দর্শক হচ্ছে। তার মানে এটা স্পষ্ট, সিনেমার দর্শক রয়েছে কিন্তু হলে যাওয়ার আগ্রহ নেই। যে বাজারে নিয়মিত ক্রেতা নেই, সে বাজারে জিনিস তোলা আর না তোলা একই কথা, বরং উল্টো খরচ। সিনেমা হলের নিজস্ব কোনো দর্শক নেই। ফলে একটা সিনেমা মুক্তির পর সাড়া পাওয়া যায় না। আমরা অনেক দর্শক ডেকে হলে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু পরিবেশের কারণে তারা আর আসতে পারেনি। আমাদের অনুরোধ রক্ষা করে যে ক’জন দর্শক হলে এসেছে, তারা বের হয়ে হলের পরিবেশ ও টেকনিক্যাল বিষয় সম্পর্কে জানিয়েছে। এসব কারণেই আমরা সিনেমা হল ত্যাগ করেছি এবং বিকল্পভাবে অডিটোরিয়ামগুলোয় সিনেমা দেখাচ্ছি। সব জায়গায়ই আমরা হাউজফুল পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য আনন্দের ও বিস্ময়ের।’

সিনেপ্লেক্স নিয়ে এ নির্মাতা বলেন, ‘‌মুলত সিনেপ্লেক্সগুলো নির্মাণ হয়েছে বিদেশী সিনেমার জন্য। কারণ সিনেপ্লেক্সের টিকিটের দাম এত বেশি যে অনেকেই এ টাকা দিয়ে বাংলা সিনেমা দেখতে চায় না। ঢাকায় একটা মানুষকে বাসা থেকে সিনেপ্লেক্সে আসতে একটা আলাদা খরচ ও সময় ব্যয় করতে হয়। এরপর টিকিট কেটে সিনেমা দেখতে আরো বেশি অর্থ ব্যয় হয়। নগর জীবনে অনেকেই এখন এ অর্থ ব্যয় করে সল্প বাজেটের সিনেমা দেখতে যাবে না। মাল্টিপ্লেক্সে বা সিনেপ্লেক্সে বাংলা সিনেমা দেখার পরিবেশ থাকলেও দর্শক নেই। আর ঢাকার বাইরে কিংবা গ্রামে সিনেমা হল এত অবহেলায়, সেখানে পরিবেশের কারণে দর্শক যেতে পারে না। এই হচ্ছে বাংলা সিনেমার জন্য আমাদের সমস্যা। প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ, তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসালামের দেখানো পথ ধরে বিকল্প প্রদর্শনী করছি।’ 

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন চিত্রায়ণের প্রয়াসেই নির্মিত হয়েছে সাঁতাও। কৃষকের সংগ্রামী জীবন, নারীর মাতৃত্বের সর্বজনীন রূপ ও সুরেলা জনগোষ্ঠীর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নায় আবর্তিত হয়েছে সাঁতাওয়ের কাহিনী। আইনুন নাহার পুতুল, ফজলুল হক ও আব্দুল্লাহ আল সেন্টুসহ অনেকে সাঁতাওয়ের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন