ডিজিটাল নাম্বার প্লেট ও আরএফআইডি ট্যাগ

লক্ষ্য থেকে এখনো অনেক দূরে বিআরটিএ

শামীম রাহমান

মোটরযানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০১২ সালে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট (রেট্রো রিফ্লেক্টিভ) রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগ সংযুক্তির কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সার্বিক মোটরযান ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। পাশাপাশি ভুয়া নাম্বার প্লেট, মোটরযান চুরি প্রতিরোধ অপরাধে জড়িত মোটরযান শনাক্ত করতে উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট আরএফআইডি ট্যাগ চালুর এক দশক পেরিয়ে গেলেও মোটরযানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুধু রাজধানীর মধ্যেই সীমিত রেখেছে বিআরটিএ। সংস্থার চেয়ারম্যান বলছেন, কার্যক্রম জোরদারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেরিতে হলেও মোটরযান ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।

নিবন্ধনের সময় সারা দেশের মোটরযানে বাধ্যতামূলকভাবে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট আরএফআইডি ট্যাগ সংযোজন করছে সংস্থাটি। বাবদ মোটরযান মালিকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে নির্ধারিত ফি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোটরযানে আরএফআইডি ট্যাগ সংযোজনের আরেকটি উদ্দেশ্য সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার এক্সপ্রেসওয়ের মতো অবকাঠামোর টোল স্বয়ংক্রিয়ভাবে আদায় করা। তবে লক্ষ্যও এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই পাশে একটি করে লেনে পরীক্ষামূলকভাবে আরএফআইডি ট্যাগের মাধ্যমে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হলেও উদ্যোগটি থমকে আছে।

লক্ষ্য বাস্তবায়ন থেকে দূরে থাকলেও ডিজিটাল নাম্বার প্লেট আরএফআইডি ট্যাগ সংযুক্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বিআরটিএ। গত ১৯ জানুয়ারি বিআরটিএর জারি করা একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন সেতুতে টোল আদায় কার্যক্রমসহ শৃঙ্খলা বিধানে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মোটরযান মালিককে মোটরযানে আরএফআইডি ডিজিটাল নাম্বার প্লেট সংযোজন করার অনুরোধ করা যাচ্ছে। অন্যথায় ফেব্রুয়ারি থেকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মোটরযান মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিজ্ঞপ্তির ঘোষণা অনুযায়ী, যেসব মোটরযানে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট আরএফআইডি ট্যাগ সংযুক্ত করা হয়নি, সেগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে বিআরটিএ। আরএফআইডি ট্যাগসহ ডিজিটাল নাম্বার প্লেট গাড়িতে সংযোজনের জন্য মোটরসাইকেল থ্রি-হুইলার মালিকদের কাছ থেকে হাজার ২৬০ টাকা হারে ফি আদায় করছে বিআরটিএ। আর চার চাকার যানবাহনের ফি হাজার ৬২৮ টাকা।

বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরএফআইডি ট্যাগের মধ্যে গাড়ির নিবন্ধন নম্বর, চ্যাসিস নাম্বার, মোটরযানের ধরনসংক্রান্ত কোড থাকে। ফলে ট্যাগযুক্ত কোনো মোটরযান আরএফআইডি স্টেশন অতিক্রম করলে স্টেশন তা শনাক্ত করে ফেলে এবং তা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠিয়ে দেয়। মোটরযানের অবস্থান, গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধের কাজে ব্যবহূত হচ্ছে ট্যাগ। অন্যদিকে ভুয়া নাম্বার প্লেট, মোটরযান চুরি প্রতিরোধ অপরাধে জড়িত মোটরযান শনাক্ত করার জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট।

তবে বিআরটিএর ডিজিটাল নাম্বার প্লেট আরএফআইডি ট্যাগের মাধ্যমে যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম শুধু রাজধানী ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বর্তমানে ১২টি আরএফআইডি স্টেশন রয়েছে, যেগুলো ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি আরো ১২টি আরএফআইডি স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।

যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের উদ্যোগ শুধু ঢাকায় সীমিত রাখায় সারা দেশের গ্রাহকরা -সম্পর্কিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, সার্কেল অফিসগুলোয় পিওএস মেশিন দিয়ে আরএফআইডি ট্যাগ স্ক্যান করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোনো মোটরযানের কর, ফিটনেস-সম্পর্কিত তথ্যগুলো আমরা সহজেই পেয়ে যাচ্ছি। তবে ঢাকার বাইরে আরএফআইডি স্টেশন না থাকায় মোটরযানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশ সরকার সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর টোল ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে। কার্যক্রমের সঙ্গে আরএফআইডির সংযোগ করার কথা জানিয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান আরো বলেন, সরকার ইলেকট্রনিক টোল আদায় ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আরএফআইডি ট্যাগের মাধ্যমে সহজেই টোল দেয়া সম্ভব। লক্ষ্য নিয়েই আমরা মোটরযানে এটি সংযুক্ত করার কার্যক্রম জোরদার করেছি।

যদিও আরএফআইডি ট্যাগের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় কার্যক্রম পদ্ধতি নিয়ে ভিন্ন মত দিয়েছে সরকারের একটি কারিগরি কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (উন্নয়ন) নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটির পর্যবেক্ষণ বলছে, আরএফআইডি ট্যাগের মেয়াদ পাঁচ বছর। এটি খুব একটা টেকসইও নয়। অনেক সময় গাড়িতে লাগানোর পর ট্যাগ নষ্ট হয়ে যায়। পরিপ্রেক্ষিতে আরএফআইডি ট্যাগের পাশাপাশি এএনপিআর নামে আরেকটি ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়েছে ওই কমিটি, যা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ব্যয়বহুল।

যদিও ডিজিটাল নাম্বার প্লেট আরএফআইডি ট্যাগ সংযোজন এবং এর মাধ্যমে মোটরযান নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা নজরদারি কার্যক্রমের বিষয়ে আশার কথাই বলছেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, ডিজিটাল এসব ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে উন্নত ব্যবস্থাপনা গ্রাহকসেবার জন্য। ব্যবস্থাটির সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হয়তো একটু সময় লাগছে। কিন্তু মোটরযান ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা পর্যায়ক্রমে এসব সেবার পরিসর বাড়ানোর কাজ করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন