চিত্রকর্মে মুক্তিযুদ্ধ

স্বাধীনতার রাজপথে শিল্পীদের প্রবহমানতা

সিলভিয়া নাজনীন

তারেক মাসুদ নির্মিত মুক্তির গান চলচ্চিত্রের পোস্টার, শিশির ভট্টাচার্য ছবি: বিডিনিউজ

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে তিনটি আলাদা রাষ্ট্র গঠন হওয়ার কথা থাকলেও নবাব ওমর ও ভূস্বামীদের দ্বারা গঠিত মুসলিম লীগের নেতারা ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের নামে পূর্ব বাংলার সঙ্গে চরম অনৈতিক ও বিশ্বাস ভঙ্গের নানাবিধ ঘটনা শুরু করে। পূর্ব বাংলার মানুষকে শৃঙ্খলিত করা হয় পূর্ব পাকিস্তান নাম দিয়ে। দুটি আলাদা ভূখণ্ড তার ভাষা আলাদা, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, ঐতিহ্য, ধ্যান-ধারণা, অর্থনীতিসহ সামাজিক অবস্থাও আলাদা।

স্থলপথে দুই হাজার মাইল এবং জলপথে তিন হাজার মাইল ব্যবধানে দুটি ভিন্ন জাতিকে ধর্মের নাম দিয়ে একটি রাষ্ট্রে একত্রিত রাখার পরিকল্পনা করা হয়। পূর্ব বাংলায় শোষণের ক্ষেত্র তৈরি করার  উদ্দেশ্যে গঠিত পূর্ব পাকিস্তানে অচিরেই ধর্মের খোলস ভেঙে পশ্চিম পাকিস্তানের লুটেরাদের চেহারা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। প্রথমে সংখ্যাগুরু বাঙালির মুখের ভাষাকে বিলুপ্ত করে মুষ্টিমেয় সংখ্যালঘুর ভাষা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত হয়।

আর শুরুতেই বাংলার মানুষ রুখে দাঁড়ায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ আর প্রতিবাদের এক চূড়ান্ত পর্যায় তৈরি হয়। বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রথম রক্তাক্ত প্রতিবাদ, যা বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ দেশের শিল্পীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। মিছিল, সমাবেশ, বক্তৃতা ও তুলির আঁচড়ে শিল্পীরা ফুটিয়ে তুলেছেন পশ্চিম পাকিস্তানের নির্যাতন ও চক্রান্তের নানাবিধ কূটকৌশল। রাতের পর রাত জেগে শত শত প্রাচীরে ছবি ও পোস্টার এঁকে, দেশাত্মবোধক বক্তব্য এবং ব্যঙ্গচিত্র চিত্রায়ণের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের প্রতি শিল্পীরা যেসব কটাক্ষ করে তা ক্ষমতাসীন সরকারকে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন করে তোলে। পাকিস্তান সরকার তখন শিল্পীদের থামাতে ব্যর্থ হয়। যেখানে এ দেশের মানুষ মাতৃভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল ভাষা আন্দোলন কমিটি ঠিক সেই স্থানেই একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। সরকারের আদেশে প্রথমে পুলিশ এবং পরে সামরিক বাহিনী এই স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেয়। ভাষা আন্দোলন কমিটি রাতারাতি এই স্তম্ভ পুনর্নির্মাণ করে। পঞ্চাশের দশকের প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ভাঙা-গড়ার প্রতিযোগিতা চলে। ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময় ভাস্কর, শিল্পী নভেরা আহমেদ ও হামিদুর রহমানেরও যৌথ প্রচেষ্টায় শহীদ মিনার নির্মাণকাজ আরম্ভ হয়, যা পরবর্তী দশকে তরুণদের ভেতর দেশাত্মবোধের চেতনা সৃষ্টিতে সহায়ক বলে ধরা যায়। অন্যদিকে ১৯৫৪ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট দালাল মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিজয়ী হলে শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সেনাপতি আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে সামরিক শাসন জারি করে বাঙালির সব ধরনের স্বাধীনতা হরণ করে শোষণের সব পথ নতুন করে উন্মুক্ত করে।

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার মানুষের জন্য স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ছয় দফা ঘোষণা করেন। ছয় দফা ছিল পূর্ব বাংলার বাঙালিদের সব রকম অর্থনৈতিক শোষণ, বঞ্চনা আর নিপীড়ন থেকে মুক্তির এক অসাধারণ দলিল। ছয় দফা দাবি করার পর আওয়ামী লীগের সব নেতাকে জেলে নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে দেশদ্রোহিতার মামলার প্রধান আসামিও করা হয়েছিল।

শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে গণআন্দোলন ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়। তখন আইয়ুব খান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে এবং মামলা প্রত্যাহার করে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন সামরিক প্রধান ইয়াহিয়া খানের কাছে। ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল ছিল অবিশ্বাস্য। পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের ১৬৭টি পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ। ইয়াহিয়া খান তখন নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানা টালবাহানা করে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। এরপর আসে সেই ২৫ মার্চ রাত। নিরস্ত্র মানুষের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশবিক বর্বরতায়। আর শুরু হয় বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ। মৃত্যুর  এ বিভীষিকা অসহায় বাঙালি তার দুর্জয় মনোবল আর সাহস নিয়ে রুখে দাঁড়ায় মরণপণ প্রতিরোধ স্বাধীনতা যুদ্ধে।

বাংলাদেশের এই ক্রান্তিলগ্নে শিল্পীরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী। ২ মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন চত্বরে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলার চারু ও কারুশিল্পী সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে চিত্রশিল্পীরা ‘স্বাধীনতা’র প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে মিছিল করেন। এ মিছিলে রফিকুন নবী, হাশেম খানসহ আরো অনেকের আঁকা কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র, স্লোগান ও পোস্টার ছিল। কেউ সরাসরি রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে, কেউবা রঙ-তুলি হাতে প্রচারণায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘এজমা-ই-ইমতিয়াজ’ ও পাকিস্তানের নাগরিকত্ব বর্জন করেন। শিল্পী কামরুল হাসান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশা প্রস্তুত করেন। অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য প্রচার মন্ত্রণালয়ে কামরুল হাসানের নেতৃত্বে শিল্পীরা মনোগ্রাম, পোস্টার, কার্টুন, লিফলেট, ব্যানার, নকশা ইত্যাদি তৈরি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকৃষ্ট করেন। এই সময়ে তৈরি হয় শিল্পী কামরুল হাসানের অবিস্মরণীয় পোস্টার ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’। এভাবে অন্যান্য শিল্পী মিলে ‘বাংলার হিন্দু বাংলার খ্রিস্টান বাংলার বৌদ্ধ বাংলার মুসলমান আমরা সবাই বাঙালি’, ‘সদা জাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী’, ‘বাংলার মায়েরা মেয়েরা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা’, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো’ শীর্ষক পোস্টারগুলো তৈরি করেন। এ সময়ের শিল্পীরা ছিলেন কামরুল হাসান, রশীদ চৌধুরী, কাজী গিয়াস, নিতুন কুন্ডু, দেবদাস চক্রবর্তী, নাসির বিশ্বাস, প্রাণেশ মণ্ডল, বীরেন সোম প্রমুখ। এছাড়া শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, স্বপন চৌধুরী, গোলাম মওলাও ছিলেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পে নানা অনুষ্ঠানের মঞ্চসজ্জা, দৃশ্যপট অংকন ও নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ সরাসরি রণাঙ্গনে কমান্ডার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। শিল্পী আবুল বারক আলভী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনের ফলে বাঙালিদের মধ্যে যে জাতীয়তাবোধের বীজ অঙ্কুরিত হয় তা পূর্ণতা লাভ করে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে। স্বাধীনতা-উত্তর এ দেশের শিল্পী সম্প্রদায়, বিশেষত নবীন শিল্পী ও শিল্প শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশাত্মবোধক ধারা বিশেষ প্রাধান্য পায়। তবে ভাষা আন্দোলনের সময় আঁকা ছবির তুলনায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রকলার পরিমাণ কম। মুক্তিযুদ্ধের বিশাল পটভূমিতে বিভিন্ন শিল্পীর অভিব্যক্তি ভিন্ন রকমের। অবয়বী ধারায় কেউ সরাসরি চিত্রিত করেছেন গেরিলা যোদ্ধা, বধ্যভূমির দৃশ্য, বিজয়োল্লাস, স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মরণীয় মুহূর্ত, দগ্ধ শহর-গ্রাম-লোকালয় ইত্যাদি মুক্তিযুদ্ধের অন্তঃপ্রবাহকে।

শিল্পী কামরুল হাসানের ছবিতে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণা ছিল, অন্যদিকে শিল্পাচার্যের ছবিতে জীবনের সাহসিক উচ্চারণ, আশাবাদ দেখা যায়।  শিল্পী এসএম সুলতান গণহত্যার নিষ্ঠুরতা তুলে ধরেন তার চিত্রকর্মে। শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ এঁকেছেন রেখাধর্মী চোখের সাদৃশ্য কান্নার ‘সিম্ফনি’। শিল্পী হামিদুর রহমানের মনে মুক্তিযুদ্ধ গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ধারাবাহিক কাজগুলোর মধ্যে ‘ভীতি’, ‘বন্দি শিবিরে নারী’, ‘হাতগুলো’, ‘ঢাকার দিকে বিজয় মিছিল’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া শিল্পী আমিনুল ইসলামের গণকবরের ইতিহাস, শিল্পী কিবরিয়ার ছবিতে জর্জরিত আঘাতে হৃদয়ক্ষরণ আমাদের স্বাধীনতার সময়কে তুলে ধরে। শিল্পী মুর্তজা বশীরের ‘স্বাধীনতার এপিটাফ’ গুরুত্বপূর্ণ চিত্রকর্ম। তার ছবিতে কান্না, শোক, গভীরতা, আত্মার শুদ্ধতা উন্মোচন হয়েছে। এছাড়া শিল্পী মনিরুল ইসলাম, কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, হাশেম খান প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে চিত্রপট উজ্জ্বল করেছেন।

 বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ছিল একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই। এ লড়াইয়ে অদম্য শিল্পীদের মনোবল ও দেশপ্রেমের অনন্য কীর্তি হয়ে আমাদের জানিয়ে দেয় বাংলার শিল্পীদের গর্বিত ইতিহাস। ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা-শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রপটে বিপুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধার দেহের পেশি, অস্ত্র, আক্রমণ, বিজয়ী যোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতার পতাকা নানারূপে মূর্ত করেছেন। শিল্পীদের বিচিত্র অভিনিবেশ আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে গভীর প্রাণসঞ্চারী করে তুলেছে। ১৯৭২ সালে চারুকলার তরুণ শিল্পী দল  ‘পেইন্টার’স গ্রুপ’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রদর্শনী করেন। শিল্পীদের মূল বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ, তার ভয়াবহতা, স্বাধীনতা অর্জন ও স্বাধীনতাকেন্দ্রিক রোমান্টিসিজম। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন চন্দ্র শেখর দে, হাসি চক্রবর্তী, কাজী হাসান হাবীব, মনসুরুল করিম প্রমুখ। এছাড়া তরুণ শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী হয়ে ছাত্রাবস্থা থেকেই ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। ১৯৭৩-৭৪ সালে ঢাকা পেইন্টার’স গ্রুপ নামে অপেক্ষাকৃত তরুণ শিল্পীদের আবির্ভাব হয়। তারাও মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে বিষয় হিসেবে নিয়ে প্রচুর ছবি এঁকেছেন ও প্রদর্শনী করেছেন। এ সময়ের শিল্পীরা হলেন তরুণ ঘোষ, দীপা হক, বিমল পাল, সুকুমার পাল, নজরুল হোসেন, কুহু, উত্তম দে প্রমুখ। 

উল্লেখ্য, শিল্পী তরুণ ঘোষও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর ‘একাত্তর সিরিজ’ নামে বেশকিছু চিত্রকর্ম রয়েছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ অত্যন্ত প্রকাশবাদী ভঙ্গিতে এসেছে। আশির দশকে ‘সময়’ গ্রুপের প্রদর্শনীর মধ্যেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয় হিসেবে এসেছে। বিশেষ করে শিল্পী ঢালী আল মামুনের ‘সেভেনটি ওয়ান ইন দ্য টাইম অব প্রেগন্যান্সি’, শিল্পী নিসার হোসেনের ‘ঘাতকের মুখ’, শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যের ‘তিনজনের প্রতিকৃতি’ উল্লেখযোগ্য। তাদের চিত্রপটে বাঙালি জাতিসত্তার উপাদান তীক্ষ্ণ ও তির্যকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আশির দশকের শেষে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা’ বিষয় নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছিল এবং আরো অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এ সময়ে শিল্পী কাজী রকিবের কথা উল্লেখ করা যায়। 

পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাদের বিজয়লগ্নে ১৪ ডিসেম্বর জাতির সেরা সন্তানদের খুঁজে হত্যা করে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থানকে চিহ্নিত করতে সচেষ্ট হয়। সেই ক্ষত আজও রয়েছে। চিত্রকলা থেকে শুরু করে সব সৃজনশীলতার বিরুদ্ধবাদীদের বিপক্ষেই ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সাংস্কৃতিক এই পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমাদের অর্জন অসামান্য হলেও প্রকৃত বিজয়ের জন্য আমাদের প্রয়োজন দেশাত্মবোধের গভীর অনুধাবন।

আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ। সহস্র প্রতিকূলতার মুখেও বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন ও আদর্শ, প্রেম ও সংকল্প, ধৈর্য ও প্রত্যয়, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ বিজয়ী করে তুলেছে। স্বাধীনতার এ অর্জনকে নতুন সময়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বিস্তৃত করার দায়িত্ব সবার। আর এক্ষেত্রে শিল্পী ও শিল্পকর্ম নতুন মাত্রা নির্ণয় করতে পারে।

সিলভিয়া নাজনীন: শিল্পী ও গবেষক 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন