ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা

এক নতুন দিগন্তের নাম টেলিমেডিসিন

বণিক বার্তা ডেস্ক

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনকে বলা হয় এক নতুন দিগন্ত। যেমন রাজীব নূরের কথাই বলা যাক। তার মেয়ে অপার সর্বজয়া নূরের মস্তিষ্কে টিউমার ছিল। দেশে নেয়া চিকিৎসায় তা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। তাই চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন পড়েছিল ভারতে। কাজটি অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিল টেলিমেডিসিন। চিকিৎসা নিতে যাওয়ার আগে তো বটেই এখনো ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে দেশের ডাক্তারদের পাশাপাশি বিদেশী চিকিৎসকদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তিনি। ফলে মেয়ের ফলোআপটাও হয়ে যাচ্ছে। এসবই প্রযুক্তির সুবিধা। 

সারা বিশ্বই এখন ঝুঁকছে টেলিমেডিসিনের দিকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাদের বাস তাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো এবং কার্যকর চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করার মতো প্রযুক্তি দিয়ে সম্ভব শহর-গ্রামের এ বৈষম্য মেটানো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে কম চিকিৎসাকর্মী থাকার বিষয়টিও মানিয়ে নেয়া সম্ভব। কারণ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হলে, প্রয়োজন নেই—এমন কেউ সরাসরি ডাক্তারের কনসালটেশন নিতে পারবে না। ফলে সরাসরি কম রোগী দেখতে হবে চিকিৎসকদের। তাতে রোগীরা যেমন অনেক সহজে চিকিৎসাসেবা পাবে, তেমন নতুন প্রযুক্তি দিয়ে নিজের চিকিৎসা ভালোমতো ফলোআপও করতে পারবে।  

বর্তমানে দেশে ৬৫টি কেন্দ্রের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। এক্ষেত্রে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে জেলা ও বিভাগ পর্যায়ের ২৭ বিশেষায়িত হাসপাতালের সঙ্গে ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের প্রায় ১৩ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সরকার এসব ক্লিনিকে তাদের ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ দিয়েছে। নিয়োগ দিয়েছে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী। দেশের প্রায় পাঁচ হাজার ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র আছে। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন হটলাইন ও হেল্পলাইনের মধ্যে রয়েছে: স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩, জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ ও আইডিসিআর হটলাইন ১০৬৫৫। টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্য কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সরকারি অন্যতম কার্যকর উদ্যোগ হলো ‘‌মা টেলিহেলথ প্লাটফর্ম’। এর মাধ্যমে নবজাতক, শিশু, গর্ভবতী ও মাতৃস্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।

অন্যদিকে বেসরকারি উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন এনজিও, হাসপাতাল, মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানি ও দাতব্য সংস্থা। বাংলাদেশে টেলিমেডিসিন কার্যক্রমের যাত্রা আসলে দাতব্য সংস্থা ও এনজিওর হাত ধরেই। দাতব্য সংস্থা সুইফেন ও সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটিশন ঢাকা প্রথম টেলিমেডিসিন কার্যক্রম শুরু করে ১৯৯৯ সালে। ২০০০ সালের মাঝামাঝি গ্রামীণ কমিউনিকেশন তারবিহীন প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ টেলিমেডিসিন অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। ২০০৩ সালে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক প্রোগ্রাম বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করে। ২০০৫ সালে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিশেন অব বাংলাদেশ (ডিএবি) ও গ্রামীণ টেলিকম যৌথভাবে দেশে প্রথম ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কর্মসূচি চালু করে। 

২০০৬ সালে টেলিফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোন প্রথম ‘‌হেলথলাইন ডায়াল ৭৮৯’ শিরোনামে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করে। এই কার্যক্রমের আওতায় এসএমএসভিত্তিক ল্যাব রিপোর্ট, অ্যাম্বুলেন্স ও সেলফোনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা পরামর্শসেবা চালু করে। আরেক সেলফোন কোম্পানি রবি ‘মায়া আপা’ নামে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করে। ২০১৭ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সঙ্গে যৌথভাবে কার্যক্রম শুরু করে। পরে নামকরণ করা হয় ব্র্যাক-মায়া ইনিশিয়েটিভ। এছাড়া বর্তমানে ৩০টির স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: প্রাভা হেলথ, ডকটাইম, মায়া, বাংলামেডস, ডাক্তারকই, আরোগ্য, সিএমইডি, লাইফস্প্রিং, আর্ক হেলথ লিমিটেড, সিনেসিস হেলথ, ডিজিটাল হেলথ, প্রবাসী হেল্প লাইন, হিউম্যান হেথল হেল্পলাইন, ডিজিটাল হেলথকেয়ার ফাউন্ডেশন, কুইকমেড, জীয়ন, বেস্ট এইড, ডাক্তার দেখাও, ডক্টরোলা, মনের বন্ধু, ক্লিক এন কেয়ার, যত্ন, মেডিসিন ক্লাব ও ডাক্তার বাড়ি ইত্যাদি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন