আইইএলটিএস

আইইএলটিএস প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

ফয়সাল আহমেদ

ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ে বিশ্বের সব থেকে জনপ্রিয় পরীক্ষা আইইএলটিএস ছবি: ম্যাট রাইট

ইংরেজি ভাষা দক্ষতা যাচাই করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পরীক্ষা পদ্ধতি হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম। সংক্ষেপে আইইএলটিএস। ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইডিপি: আইইএলটিএস অস্ট্রেলিয়া ও কেমব্রিজ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাসেসমেন্ট যৌথভাবে এটি পরিচালনা করে থাকে। পরীক্ষাটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে যেকোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা বা বয়সের কেউ এ পরীক্ষাটি দিয়ে নিজের ইংরেজির দক্ষতা প্রমাণস্বরূপ প্রদর্শন করতে পারেন। শুধু ইংরেজি ভাষাভাষি দেশ নয়, পৃথিবীর অনেক দেশই এখন বিদেশীদের নিজের দেশে ঢুকতে দেয়ার শর্ত হিসেবে ইংরেজি দক্ষতার সনদ দেখতে চাচ্ছে। 

আইইএলটিএসের ধরন ও পরীক্ষা পদ্ধতি: পরীক্ষাটি চারটি আলাদা মডিউলের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সেগুলো হচ্ছে লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং এবং স্পিকিং। প্রতিটি মডিউলের স্কোর ০-৯ ‘ব্যান্ড স্কোর’-এর মধ্যে গণনা করা হয় যেখানে ৯ হচ্ছে সর্বোচ্চ স্কোর। প্রতিটি মডিউলে প্রাপ্ত ব্যান্ড স্কোরের ওপর ভিত্তি করে আবার একটি ‘ওভারঅল’ ব্যান্ড স্কোর হিসাব করা হয় ০-৯-এর মধ্যে। মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে এ পরীক্ষাটি। একাডেমিক এবং জেনারেল ট্রেইনিং। যারা উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যেতে চান, অর্থাৎ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়তে যেতে চান আইইএলটিএস একাডেমিক মূলত তাদের জন্য। আবার যারা বিদেশে কাজের সুবাদে, মাইগ্রেশনের উদ্দেশ্যে অথবা ডিগ্রি বা স্নাতকের নিচের কোনো ধাপ, যেমন স্কুল বা কলেজে পড়তে যেতে চান তাদের জন্য হচ্ছে আইইএলটিএস জেনারেল ট্রেইনিং পরীক্ষা। কার জন্য কোন ধরনের পরীক্ষা উপযুক্ত হবে তা রেজিস্ট্রেশন করার আগে আইইএলটিএসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (https://www.ielts.org) থেকে যাচাই করে নেয়া যেতে পারে। উপরোক্ত দুই ধরনের পরীক্ষাই আবার দুটি আলাদা মাধ্যমের যেকোনো একটিতে দেয়া যায়। কম্পিউটার ডেলিভার্ড টেস্ট (কম্পিউটারের মাধ্যমে) এবং পেপার বেইজড টেস্ট (কাগজ, পেনসিল বা কলম ব্যবহার করে)। কম্পিউটার ডেলিভার্ড টেস্টে সব মডিউল (লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং) একদিনে পরীক্ষা হয় এবং এর ফল সাধারণত তিন-পাঁচদিনের মধ্যে পাওয়া যায়। আবার পেপার বেইজড টেস্টের ক্ষেত্রে স্পিকিং পরীক্ষা একদিন অনুষ্ঠিত হয় এবং অন্য তিনটি মডিউল অন্য একদিনে হয়। এক্ষেত্রে পরীক্ষার ফল পেতে ১৩ দিনের মতো সময় লেগে থাকে। 

আইইএলটিএস প্রস্তুতি: যাদের ইংরেজির ভিত্তি অনেক ভালো তাদের কাঙ্ক্ষিত স্কোর অর্জনে প্রস্তুতিতে সময় লাগে কম। আবার যাদের ভিত্তি তুলনামূলক দুর্বল তাদের সময় লাগে একটু বেশি। তবে ভিত্তি যেমনই হোক না কেন প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নিচের রিসোর্সগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে ভালো স্কোর অর্জন সম্ভব।

স্পিকিং: স্পিকিং পরীক্ষা হয় একজন পরীক্ষকের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে। সময় লাগে মোটামুটি ১১-১৪ মিনিট। এক্ষেত্রে পরীক্ষক সরাসরি পরীক্ষার্থীর সামনে থাকতে পারেন, আবার ভিডিও কলের মাধ্যমেও যুক্ত হতে পারেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলে পরীক্ষা দিলে রেজিস্ট্রেশন করার সময়েই জানা যায় যে পরীক্ষা ভিডিও কলের মাধ্যমে হবে নাকি সরাসরি হবে। আইডিপিতে পরীক্ষা দিলে এ ব্যাপারটা সাধারণত স্পিকিং পরীক্ষার কয়েকদিন আগে জানা যায়। এ মডিউলে ভালো করতে হলে প্রতিদিন ইংরেজিতে নানা ধরনের বিষয়ে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সব থেকে ভালো হয় যদি একজন স্পিকিং পার্টনার খুঁজে বের করে তার সঙ্গে প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা অনুশীলন করা যায়। এক্ষেত্রে কিরন মাক্কারের স্পিকিং বই থেকে টপিকগুলো দেখে নেয়া যেতে পারে। তবে এ বইয়ের নমুনা উত্তরগুলো না দেখে নিজের মতো উত্তর সাজিয়ে অনুশীলন সব থেকে ভালো হবে। পাশাপাশি ইউটিউব থেকে ব্যান্ড ৮ বা ৯-এর স্যাম্পল উত্তরগুলো দেখা যেতে পারে। একটা বিষয় এখানে খেয়াল রাখা জরুরি, আমরা যারা নতুন স্পিকিং অনুশীলন করি তাদের কথা বলার গতি থাকে অনেক বেশি এবং এতে করে স্পিকিংয়ের গতির সঙ্গে আমাদের ব্রেইন অনেক সময় তাল মেলাতে পারে না। ফলে কথায় অনেক জড়তা চলে আসে। সেক্ষেত্রে একটু ধীরে কথা বলার অভ্যাস করা যেতে পারে তবে তা যেন কৃত্রিম মনে না হয় সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। স্পিকিংয়ে ভালো করতে IELTS Speaking Guess work Final Version by Kiran Makkar (latest one), Master IELTS Speaking by IELTS Simon বই এবং Academic English Help, IELTS Daily ইউটিউব চ্যানেল অনেকটা সহায়ক হবে। এছাড়াও ঢুঁ মারতে পারেন https://ieltsliz.com ওয়েবসাইটে।

লিসেনিং: এ অংশে ইংরেজি শুনে বোঝার দক্ষতা যাচাই করা হয়। চারটি আলাদা অংশে মোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। লিসেনিংয়ে ভালো করার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নিয়মিত ‘স্ট্যান্ডার্ড’ ইংরেজি শোনা এবং তা বোঝার চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে যে কয়েকটি ‘একসেন্ট বা উচ্চারণভঙ্গি’ ভালোভাবে খেয়াল করে শুনতে হবে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্রিটিশ, আমেরিকান এবং অস্ট্রেলিয়ান উচ্চারণভঙ্গি। ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোর জাতীয় রেডিও স্টেশন, এবং বিবিসি এর Minute Grammar, 6 Minute Vocabulary এবং 6 Minute English Podcast অনুষ্ঠানগুলো লিসেনিংয়ের জন্য খুবই ভালো। পাশাপাশি সময় ধরে ধরে Cambridge English IELTS বইগুলো থেকে লিসেনিং পরীক্ষা দিতে হবে নিয়মিত। সম্ভব হলে প্রতিদিন। পরীক্ষা দেয়ার পরে ভুল থেকে শিখতে এবং একই ধরনের ভুল বার বার না ঘটে তা খেয়াল রাখতে হবে। লিসেনিং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন মোবাইল অ্যাপ Poscast Player (Castbox.FM – Radio & Podcast & Audio Books), IELTS Podcast, IELTS Listening (AppFx Design), Cambridge English IELTS Academic or General, The Official Cambridge Guide to IELTS বই এবং Asad Yaqub, Fastrack IELTS, E2 IELTS ইউটিউব চ্যানেল।

রিডিং: এ অংশের পরীক্ষায় ১ ঘণ্টায় তিনটি প্যাসেজ থেকে মোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হয়। রিডিং মডিউল-টি আইইএলটিএস একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেইনিংয়ের জন্য আলাদা হয়ে থাকে। কিছু কৌশল অবলম্বন করলে এ মডিউলে ভালো স্কোর করা যায়। এক্ষেত্রে প্রথমেই প্রশ্নের ধরনগুলোর সঙ্গে খুব ভালোভাবে পরিচিত হতে এবং একেক ধরনের প্রশ্ন একেকভাবে অল্প সময়ে সমাধান করার উপায় নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে। The Official Cambridge Guide to IELTS বইয়ের রিডিং অংশটুকু ভালোভাবে পড়লে এ কাজটি একটু সহজ হয় এবং Pauline Cullen এর The Key to IELTS Success-এর রিডিং অংশ পড়েও রিডিংয়ের টেকনিক সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। ইউটিউবে আসাদ ইয়াকুব এবং ইটু আইইএলটিএসের রিডিং ভিডিওগুলো এ মডিউলে ভালো স্কোর তোলার জন্য খুবই সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। পাশাপাশি সময় ধরে ধরে Cambridge English IELTS বইগুলো থেকে রিডিং পরীক্ষা দিতে হবে নিয়মিত। 

রাইটিং: এ অংশে ইংরেজি লেখার দক্ষতা যাচাই করা হয়ে থাকে যেখানে ১ ঘণ্টায় দুটি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়, টাস্ক-১ এবং টাস্ক-২। টাস্ক-১-এর জন্য আইইএলটিএস একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেইনিংয়ের প্রশ্ন আলাদা হয়ে থাকে। এ মডিউলের প্রস্তুতি একদম শুরু থেকে নেয়ার জন্য Rachel Mitchell এর IELTS Writing Task 1+2 খুবই ভালো একটি বই। এ বইটি ভালোমতো আয়ত্ত করার পর Simon Braveman-এর IELTS Writing Task 1 + Task 2 এবং Rachel Mitchell-এর IELTS Writing Task 2 Samples বইয়ের নমুনা উত্তরগুলো পড়ে নিলে নিজের মধ্যে আইইএলটিএস রাইটিংয়ে ভালো করার আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। কারণ ভালো লিখতে হলে বেশি বেশি ভালো লেখা পড়তে হবে। ইউটিউব চ্যানেলগুলোর মধ্যে IELTS Up এবং IELTS Daily এর রাইটিং ভিডিওগুলোয় খুব সুন্দর করে রাইটিংয়ের নানা কলা-কৌশল শেখানো হয়েছে। এছাড়াও  IELTS Writing অ্যাপ এবং writing9 ওয়েবসাইটটিও রাইটিংয়ে জন্য খুবই সহায়ক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন