সাগরতীরে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ‘সোনালী স্বপ্ন পাঠশালা’

রাজু কুমার দে, মিরসরাই

মিরসরাইয়ের সোনালী স্বপ্ন পাঠশালায় এভাবেই শিশুদের পাঠদান করা হয় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের গজারিয়া-ডোমাখালী এলাকার অধিকাংশ মানুষ বঙ্গোপসাগরের তীরে বেড়িবাঁধের পাশে বসবাস করে। এখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই পার্শ্ববর্তী সন্দ্বীপ উপজেলা থেকে এসে বসতি গেড়েছেন । ওই ইউনিয়নে ‘সন্দ্বীপ পাড়া’ নামে একটি এলাকাও রয়েছে। 

এলাকার বাসিন্দারা সাগরে মাছ ও বনের কাঠ আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিম্নবিত্ত হওয়ায় সন্তানদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে তারা সচেতন নয়। এছাড়া ওই এলাকা থেকে প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। তাই সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা থাকলেও তারা পারেন না। সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সোনালী স্বপ্ন’। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি সাহেরখালী ইউনিয়নের গজারিয়া-ডোমখালী এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে পাঠদানের মাধ্যমে কুড়িয়েছে প্রশংসা। এসব শিশুকে বিভিন্ন বিদ্যালয়েও ভর্তি করিয়ে দেন তারা।  

সামাজিক সংগঠন সোনালী স্বপ্নের উদ্যোক্তারা জানান, গজারিয়া-ডোমখালী বেঁড়িবাধের পাশে বসবাস করা পরিবারগুলোর সুবিধবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে তারা একটি পাঠশালা গঠন করেন। নামে দেন ‘সোনালী স্বপ্ন পাঠশালা’। ২০১৩ সালের মার্চে ১৩ শিশুকে নিয়ে শুরু করা এ পাঠশালায় বর্তমানে ৯৩ শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থী সাহেরখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। প্রতি শুক্র ও শনিবার বিকাল ৪-৬টা পর্যন্ত সাগর তীর খোলা মাঠে চাটাই বিছিয়ে চলে পাঠদান। মূলত এ পাঠশালায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের পাঠই রপ্ত করানো হয়।

জানতে চাইলে সংগঠনের সাবেক সভাপতি মঈনুল হোসেন টিপু বলেন, ‘২০১৩ সালে শুরু হওয়া আমাদের “‍সোনালী স্বপ্ন পাঠশালা’’টির মাধ্যমে গজারিয়া-ডোমখালী এলাকার কয়েকশ শিশু শিক্ষার আলো পেয়েছে। আমরা এগিয়ে যেতে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’  

‘সোনালী স্বপ্ন পাঠশালা’র পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আলভী আক্তার বলে, ‘আমার বাবা প্রথমে আমাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চাননি। পরে সোনালী স্বপ্নের স্যাররা আমার বাবাকে বুঝিয়ে আমাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। আমি বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছি।’

জানতে চাইলে ‘সোনালী স্বপ্ন পাঠশালা’র পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সমাজের একাংশকে ফেলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা কয়েকজন মিলে সোনালী স্বপ্ন পাঠশালাটি গঠন করি। অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানো ও বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া কমানোই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’ 

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাবরিনা লিনা বলেন, ‘সোনালী স্বপ্ন সংগঠনটি একটি পাঠশালা পরিচালনা করে বলে আমি শুনেছি, যা থেকে সমাজের অবহেলিত শিশুরা শিক্ষার আলো পাচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন