সিরাজগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ বিদ্যালয়

প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার গজারিয়া এলাকায় জরাজীর্ণ মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ বিদ্যালয় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নে গজারিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে অর্থকষ্টে শিক্ষক ও কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের আড়াইশ শিক্ষার্থীর পড়ালেখার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান বিদ্যালয়টির জন্য ৮১ শতাংশ জমি দান করেন। পরে সেই জমির ওপর ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মোতাহার হোসেন তালুকদার ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। রতনকান্দি ইউনিয়নে একাধিক মুক্তিযোদ্ধার বসবাস হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পরে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অবকাঠামো নির্মাণ বা সংস্কার করা হয়নি। যার কারণে জরাজীর্ণ টিনের ঘরে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়ের মেঝে কাঁচা, মেঝেতে ইঁদুরের গর্ত। বিদ্যুৎ নেই, শ্রেণীকক্ষগুলোয় প্রয়োজনীয় বসার ব্রেঞ্চ নেই। বৃষ্টির সময় ভাঙা টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ে ভিজে যায় শিক্ষার্থীদের বই-খাতা। ঘরটিও হেলে পড়েছে। এমনকি লেখার জন্য ভালো কোনো ব্ল্যাকবোর্ডও নেই। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ২৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছে আটজন। 

দীর্ঘ ২৫ বছরেও বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা যেমন পাচ্ছেন না কোনো বেতন-ভাতা, তেমনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। গত কয়েক বছরে দেশে হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। কিন্তু সব শর্ত পূরণ করার পরও প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। বছরের পর বছর বিনা পারিশ্রমিকে পাঠদান করায় অর্থকষ্টে ভুগছেন তারা।

স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী মারজানা খাতুন ও সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী আয়শা সিদ্দিকা নীলা বলে, ‘ক্লাসরুম নেই, বেঞ্চ নেই, বিদ্যুৎ নেই। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণ করছি। এখানে লেখাপাড়া করার কোনো পরিবেশ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাবান্ধব। তিনি আমাদের কষ্ট বোঝেন। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তিনি অনেক কিছুই করছেন। আমরা চাই আমাদের প্রতিষ্ঠানটি অতিদ্রুত এমপিওভুক্ত ও অবকাঠামো নির্মাণ করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে দেবেন তিনি।’

প্রধান শিক্ষক আবু সামা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নিয়ম অনুযায়ী এমপিওভুক্তির সব কাগজ জমা দেয়া হয়েছে। তার পরও এমপিওভুক্ত হয়নি। যার কারণে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।’

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি সলিম উল্লাহ বলেন, ‘‌এতদিনে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত না হওয়া দুঃখজনক। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিষ্ঠানটি ভালো হলে নিয়মের মধ্যে পড়লে এমপিওভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।’ 

বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মোতাহার হোসেন তালুকদার স্মৃতি সংসদের সভাপতি ড. জান্নাত আরা হেনরী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ গ্রহণ করতে পারছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারে আসার পর হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছেন। কিন্তু সব যোগ্যতা থাকার পরও এ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন