ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে ডিজেল আমদানি উদ্বোধন

মৈত্রী পাইপলাইন দুই দেশের জন্যই মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ-ভারত পাইপলাইনের উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি ছবি: সংগৃহীত

ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন চালুকে দুই দেশের জন্যই মাইলফলক অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মৈত্রী পাইপলাইন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক অর্জন। গতকাল বিকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে উদ্বোধন শেষে তিনি কথা বলেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটি থেকে বোতাম টিপে পাইপলাইনের উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে জ্বালানি তেল আমদানি শুরু হলো। আগে রেলপথে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আসত বাংলাদেশে। এখন তা পাইপলাইনের মাধ্যমে আসবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাইপলাইনের মতো আগামী দিনেও আরো সফলতা বাংলাদেশ-ভারত উদযাপন করবে। জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে আমরা একই সঙ্গে কাজ করব। পাইপলাইনে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। ফলে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহও নিশ্চিত করবে।

মৈত্রী পাইপলাইনের সুফলের কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন চালুর ফলে দুই দেশের জনগণ বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি, তখন পাইপলাইন আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এর প্রায় সাড়ে চার বছর পর প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হলো। ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন ভারত বাংলাদেশের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশে পড়েছে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে পড়েছে পাঁচ কিলোমিটার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্ব সবসময় অটুট থাকুক সেটাই আমরা চাই। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, সেটাকে আমরা কার্যকর করতে চাই। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঠিক রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাব। আমরা চাই আমাদের উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হোক।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই ভারতের বিনিয়োগকারীরাও এখানে বিনিয়োগ করুক। আমরা দুই দেশই তাতে লাভবান হব।

উদ্বোধনী বক্তৃতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ পাইপলাইন দুই দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা সহযোগিতাকে আরো বাড়াবে। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করল।

তিনি আরো বলেন, আমি নিশ্চিত পাইপলাইন বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। যেমন দুটি দেশের সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত সুদৃঢ় করে চলেছে।

বাংলাদেশ ভারতের রেল যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমার মনে আছে কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালের মতো দুই দেশের রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বর্তমানে দুই দেশ রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি রেল কানেক্টিভিটি তারই প্রমাণ করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানান।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবহনে নির্মিত পাইপলাইনে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেয়া প্রায় ৩৪৬ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। পাইপলাইনটির হাই-স্পিড ডিজেলের (এইচএসডি) বার্ষিক পরিবহনের ক্ষমতা ১০ লাখ টন। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলায় হাই- স্পিড ডিজেল সরবরাহ করবে।

উদ্বোধনী দিনে গতকাল প্রায় হাজার ৯৩০ টন ডিজেল পৌঁছেছে পার্বতীপুরের রিসিভড টার্মিনালে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে পার্বতীপুর রিসিভড স্টেশনকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। প্রধান ফটকে শোভা পায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ির লুমানিগড় জ্বালানি তেল শোধনাগার থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মেঘনা পেট্রোলিয়াম ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন