গোলমেশিন হালান্ড

ক্রীড়া ডেস্ক

আর্লিং ব্রাউট হালান্ড

কিলিয়ান এমবাপ্পের পর ইউরোপের ফুটবলে ঝড় তুলে এখন আলোচনার তুঙ্গে আরেক ‘‌কিলার’ স্ট্রাইকার ম্যানচেস্টার সিটির আর্লিং ব্রাউট হালান্ড। জার্মান দল আরবি লিপজিগকে মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৮-১ গোলের অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ইংলিশ ক্লাবটি। এ ম্যাচে একাই ৫ গোল করেন নরওয়েজিয়ান ফরওয়ার্ড হালান্ড। এর মধ্য দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দ্রুততম ও কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে ৩০ গোল করার কীর্তিও গড়েন তিনি।

২২ মিনিটে হালান্ডের গোল উৎসবের শুরু। পেনাল্টি থেকে বুলেট গতির শটে গোল করেন। ২৪ মিনিটে ব্যবধান ২-০ করেন তিনি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে হ্যাটট্রিকও পূর্ণ করেন ফেলেন। এরপর ম্যাচের ৫৩ ও ৫৭ মিনিটে আরো দুবার লক্ষ্যভেদ করেন দীর্ঘদেহী এ খেলোয়াড়। সিটি অধিনায়ক ইকাই গুন্দোয়ান ৪৯ মিনিটে ও কেভিন ডি ব্রুইন ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা সময়ে লিপজিগের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন (৭-০)।

আর্লিং হালান্ডের বাবা আলফি হালান্ড নরওয়ের সাবেক ফুটবলার, খেলেছেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়েই। আর মা গ্রে মারিতা সাবেক হেপটাথেলন অ্যাথলেট। অ্যাথলেটের রক্ত শরীরে বহমান হালান্ডের। মঙ্গলবার ৫ গোল করার দিন ভিআইপি স্ট্যান্ডে বসে ছেলের কীর্তি দেখেছেন ৫০ বছর বয়সী আলফি, উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেছেন প্রতি গোলের পর। 

রীতিমতো গোলমেশিন হয়ে ওঠা হালান্ড চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২৫ ম্যাচে করে ফেলেছেন ৩৩ গোল। ২২ বছর ২৬৩ দিন বয়সে তিনি ৩০ গোল টপকে যান, যা আগের রেকর্ডধারী কিলিয়ান এমবাপ্পের (২২ বছর ৩৫২ দিন) চেয়ে ১১৬ দিন কম। 

চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১০ গোল করলেন হালান্ড, যা ম্যানসিটির ইতিহাসে গোটা মৌসুমেও আগে কেউ করতে পারেনি। ইউরোপের এলিট এ প্রতিযোগিতায় ওয়েন রুনি, কাকা কিংবা স্যামুয়েল ইতোর মতো গ্রেটের চেয়েও বেশি গোল হয়ে গেল তার। ২৫তম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৩০ গোলের বেশি করলেন হালান্ড।

রেকর্ড বুকটাও নতুন করে লিখলেন নরওয়েজিয়ান সুপারস্টার। কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এক ম্যাচে ৫ গোল করার কৃতিত্ব দেখালেন তিনি। এক ম্যাচে ৫ গোল করার কীর্তি আছে আর মাত্র দুজনের—আর্জেন্টাইন গ্রেট লিওনেল মেসি ও ব্রাজিল ফরওয়ার্ড লুইজ আদ্রিয়ানো। ২০১২ সালে জার্মান দল বেয়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে ৫ গোল করেছিলেন মেসি, আর ২০১৪ সালে বিএটিই বরিসভের বিপক্ষে ৫ গোল করার কীর্তি গড়েছিলেন তখন শাখতারে খেলা লুইজ আদ্রিয়ানো। উল্লেখ্য, গোলের তিনটি কীর্তির মধ্যে দুটিরই কোচ ছিলেন পেপ গার্দিওলা। 

২২ বছর বয়সী হালান্ড চলতি মৌসুমে সিটির জার্সিতে সব মিলিয়ে করলেন ৩৯ গোল। সিটির প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক মৌসুমে এত বেশি গোল করলেন তিনি। এ পথে টমি জনসনের ৯০ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙেছেন। ১৯২৮-২৯ মৌসুমে ৩৮ গোল করেছিলেন জনসন। চলতি মৌসুমে হালান্ডের হ্যাটট্রিক সংখ্যা পাঁচ। অথচ ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে দুটির বেশি হ্যাটট্রিক নেই কারো।

পাঁচ গোল করতে ৫৭ মিনিট সময় নেন হালান্ড, এটিও রেকর্ড। মেসি ৮৪ মিনিট ও আদ্রিয়ানো ৮২ মিনিটে ৫ গোল করেছিলেন। মেসির পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোনো নকআউট ম্যাচে প্রথমার্ধে হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্ব দেখালেন হালান্ড। ২০০৯-১০ মৌসুমে আর্সেনালের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে এ কীর্তি আছে মেসির। 

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট ম্যাচে হালান্ডের গোল এখন ১১টি। অথচ গোটা ক্যারিয়ারে নকআউটে এত গোল করতে পারেননি স্যামুয়েল ইতো (১০), ফার্নান্দো তোরেস (১০), ইব্রাহিমোভিচ (১০) ও সার্জিও আগুয়েরোর (৯) মতো নামি তারকা। 

আবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তৃতীয়বারের মতো মৌসুমে দশের বেশি গোল করে হালান্ড ছুঁয়ে ফেললেন রবার্ট লেভানডোভস্কিকে। কেবল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (৭) ও মেসি (৫) এর চেয়ে বেশিবার দশের বেশি গোল করেছেন। হোম ম্যাচেই তিনি বেশি ভয়ংকর। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১২টি হোম ম্যাচে তিনি করেছেন ২২ গোল! 

লিপজিগের বিপক্ষে মাত্র ছয় ম্যাচ খেলে ১১ গোল করলেন তিনি। গত মৌসুমে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে খেলেছেন কোচ মার্কো রোজের অধীনে। এবার সেই মার্কো রোজের দল আরবি লিপজিগকে গুণে গুণে ৭ গোল দিল সিটি, যার ৫টিই হালান্ডের। লিপজিগের বিপক্ষে প্রতি ছয় টাচে এক গোল করেছেন হালান্ড, যা কিনা গত ১০ মৌসুমের মধ্যে প্রতি গোলের পেছনে সর্বনিম্ন টাচের রেকর্ড। ইএসপিএন 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন