তরুণদের হার্ট অ্যাটাক

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে বাড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি

ফিচার ডেস্ক

আমাদের দেশে একটি ধারণা প্রচলিত, হৃদরোগ কেবল বয়স্কদের হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, যেকোনো বয়সেই একজন মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। তরুণদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি ক্রমে বাড়ছে বলে এসব প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিভিন্ন রোগ ও শারীরিক জটিলতায় হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তেমন কিছু রোগের কথা এখানে উল্লেখ করা হলো।

উচ্চরক্তচাপ: একে বলা হয় নীরব ঘাতক। কারণ সাধারণত এর কোনো উপসর্গ থাকে না। নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপের মাধ্যমেই কেবল উচ্চরক্তচাপ নির্ণয় করা সম্ভব। উচ্চরক্তচাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সুতরাং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে।

রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি: আমাদের শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে নির্দিষ্ট পরিমাণ কোলেস্টেরল প্রয়োজন। কিন্তু সাধারণত আমরা যে ধরনের খাবার খাই, এতে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি কোলেস্টেরল আমাদের শরীরে জমা হয়। এসব অতিরিক্ত কোলেস্টেরল মানুষের শরীরের শিরা, ধমনী ও হৃৎপিণ্ডে জমা হয়ে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। উচ্চরক্তচাপের মতো এরও সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নির্ণয় করতে হয়। এ পরীক্ষাকে বলা হয় ‘লিপিড প্রোফাইল’।

ডায়াবেটিস: এর কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের হৃদরোগে মারা যাওয়ার হার বেশি। সুতরাং ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট থাকতে হবে।

স্থূলতা: অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবারের কারণে এ সমস্যা হয়। এর কারণে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সমস্যা হতে পারে। পরিণতিতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। স্থূলতার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে।

এসব দীর্ঘমেয়াদি রোগ ও শারীরিক জটিলতা ছাড়াও মানুষের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণেও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার ও লবণ খাওয়ার কারণে উচ্চরক্তচাপ বেড়ে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভাবে হৃদরোগ হয়। অতিরিক্ত মদ্যপান হৃদরোগের আরেকটি বড় কারণ। এতে রক্তে ট্রাইগ্লিসেরাইড নামক একটি উপাদানের মাত্রা বেড়ে যায়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান হৃদরোগের অন্যতম কারণ। এটি আমাদের হৃৎপিণ্ড ও রক্তনািলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। নিকোটিন রক্তচাপ বাড়ায়। ধূমপানের কারণে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গিয়ে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। পরোক্ষ ধূমপানেও বাড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি। এছাড়া যদি কারো পরিবারের কোনো সদস্যের আগে হৃদরোগ হওয়ার ইতিহাস থেকে থাকে (ফ্যামিলি হিস্ট্রি), সেক্ষেত্রে তারও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

হৃদরোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বরং হৃদরোগ এড়াতে সচেতনতা প্রয়োজন। সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে হৃদরোগ থেকে বেঁচে থাকা যায়। তথাপি যদি কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হন, তবে কালবিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন