ক্যাম্পাস ক্যাফেটেরিয়া

যেভাবে এলো ক্যাম্পাস ক্যাফেটেরিয়া

শফিকুল ইসলাম

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্পাস ক্রিস্টি কলেজের ক্যাফেটেরিয়া ছবি: কলেজের ওয়েবসাইট

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে এক্সচেঞ্জ বুফেট নামে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ সেপ্টেম্বর চালু হয়  ইতিহাসের প্রথম  সেলফ সার্ভিস  রেস্তোরাঁ। যেটি শুধু পুরুষদের জন্য খাবার সরবরাহ করত। একটি কাউন্টার থেকে খাবার কিনে ক্রেতারা দাঁড়িয়ে খাবার খেতেন। বর্তমানে আমরা যে ক্যাফেটেরিয়া দেখি তার সূত্রপাত এ রেস্তোরাঁর ধারণা থেকেই। ১৮৯৩ সালে শিকাগোয় ওয়ার্ল্ডস কলম্বিয়ান এক্সপোজিশনের সময় উদ্যোক্তা জন ক্রুগার সুইডেনে ভ্রমণের সময় যে স্মারগ্যাসবোর্ড (সুইডিস বুফে রেস্তোরাঁ) দেখেছিলেন তার একটি আমেরিকান সংস্করণ তৈরি করেছিলেন। তিনি এটিকে ‘ক্যাফেটেরিয়া’ নামকরণ করেন। স্প্যানিশ কফি শপ থেকে নামটি নেয়া। এটি চালুর ছয় মাসে ২৭ মিলিয়নেরও বেশি ক্রেতা আকর্ষণ করেছিল যা তৎকালীন মার্কিন জনসংখ্যার অর্ধেক। ক্রুগারের এ নামকরণের জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ক্যাফেটেরিয়া শব্দটি প্রথম শুনেছিল এবং সেলফ সার্ভিস ডাইনিং সম্পর্ক‌ে ধারণা লাভ করে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উনিশ শতকের শেষের দিকে সেলফ সার্ভিস রেস্তোরাঁ চালু হতে শুরু করে। ১৮৯১ সালে মিসৌরির কানসাস সিটি ইয়ং উইমেনস ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াইডব্লিউসিএ) এমন এক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিল যা ইতিহাসবিদরা প্রথম ক্যাফেটেরিয়া বলে মনে করেন। কর্মজীবী ​​মহিলাদের জন্য স্বল্পমূল্যের খাবার সরবরাহ করতেন তারা। ১৮৯০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে জনসাধারণের জন্য ক্যাফেটেরিয়াগুলো খোলা হয়েছিল, কিন্তু ক্যাফেটেরিয়া পরিষেবাটি এ শতাব্দীর শুরুর পর তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। 

ধারণা করা হয়, ক্যাফেটেরিয়ার প্রচলন ১৯০৫ সালের মে মাসে শুরু হয়েছিল। যখন হেলেন মোশার একটি ডাউনটাউন এলএ রেস্তোরাঁ খোলেন যেখানে লোকেরা কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন ধরে তাদের খাবার বেছে নিত এবং ট্রেতে করে তাদের টেবিলে খাবার নিয়ে যেত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, ১৮৮১ সালের প্রথম দিকে ‘ফেরি ল’ (বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন) পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রান্সে ক্যাফেটেরিয়াগগুলোর বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। এ আইনে পাবলিক স্কু‌লে শিক্ষাগ্রহণ সব শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। সে অনুসারে সরকার স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার সরবরাহ করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। এভাবে স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাফেটেরিয়া বা ক্যান্টিন ধারণার জন্ম হয়। ক্যাফেটেরিয়া চালুর আগে স্বল্পকিছু শিক্ষার্থী বাড়িতে রান্না করা খাবার আনতে এবং স্কুলে সঠিকভাবে খেতে পারতেন। ফ্রান্সের ক্যাফেটেরিয়াগুলো আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠল। এর ব্যবহার স্কুলের বাইরে কর্মক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে শ্রমিকদের দাবি এবং নতুন শ্রম আইনের কারণে বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তাদের শ্রমিকদের জন্য আলাদা খাবারের জায়গারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে এ চর্চার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতীয় স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির গুরুত্ব ব্যাপকভাবে সবার নজরে আসে।

স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরদূরান্ত থেকে অনেক শিক্ষার্থী আসেন। দৈনন্দিন একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার অপরিহার্য। ক্যাফেটেরিয়ার সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীরা ক্যাফেটেরিয়ায় যে শুধু খাবার খান তা কিন্তু নয়, খাবার খাওয়ার সঠিক ব্যবহার শিখতে পারেন তারা। সহপাঠী কিংবা বন্ধুদের নিয়ে খাবার খাওয়ার সময় শরীরের বাচন ভঙ্গি, ডাইনিং টেবিল ব্যবস্থাপনাও শিখেন তারা। শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতারও বিকাশ হয় এখানে। ক্যাফেটেরিয়াগুলো শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের বাইরে তাদের সহপাঠীদের  সঙ্গে আরামদায়ক এবং মনোরম পরিবেশে সময় কাটানোরও স্থান। তারা নতুন বন্ধুদের সঙ্গে বসে যেমন আড্ডা দেন তেমনি নতুন বন্ধু ও সম্পর্ক স্থাপন করতেও ভূমিকা রাখে ক্যাফেটেরিয়া। বলা যায় যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যমও এটি। ছাত্রজীবনের স্মরণীয় এক অনুষঙ্গ ক্যাফেটেরিয়া যেখানে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠেন গান, গল্প আর আড্ডায়। ক্যাম্পাস জীবনের সবচেয়ে মধুর আলাপও জমে ক্যাফেটেরিয়ার খাবার টেবিলে। ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুদের নিয়ে এক কাপ চায়ের চুমুকে যেন ফিরে আসে জীবনের সঞ্জীবনী। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন