ক্যাম্পাস ক্যাফেটেরিয়া

‘এই কাফেতারিয়ায় আবার যদি ফেরা যায়’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়া ছবি : এনএসইউ

সারি সারি টেবিল-বেঞ্চি পাতা। কেউ খাচ্ছে, কেউ চুমুক দিচ্ছে ওয়ান টাইম চায়ের কাপে। ল্যাপটপ খুলে তার পা‌‌শে কাগজ, পেনসিল রেখে কাজ করছে দুজন। খেয়াল করলে দেখা যাবে দু-একটা টেবিলে ঘন হয়ে বসে আছে জুটি। আর এক কোণে দুটো টেবিল জড়ো করে বসেছে ১০-১২ জন। একজন গাইছে গিটার বাজিয়ে—আবার ফিরে এলে। আমি, অনেকটা ফিরেই গিয়েছিলাম। ২০১৪ সালে যখন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই তখন ক্যাফেটেরিয়ার এমন চেহারা ছিল না। আরেকটু এলোমেলো ছিল। আর, গান কখনো হতো না এখানে। সেজন্য ছিল আমাদের ওপেন গ্যালারি। বহুদিন পর একটা কাজে এসে দেখলাম, বদলে গেছে আমাদের চেনা পুরনো ক্যাফেটেরিয়া।

কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে ক্যান্টিন শব্দটাই বেশি পরিচিত। দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অনেক কিছুই আলাদা। এনএসইউয়ের ক্যাফেটেরিয়া। মূল কমপ্লেক্সের নিচতলায় বিস্তৃত পরিসর নিয়ে তৈরি হয়েছে তা। দ্বিতীয় তলার প্লাজা এরিয়ার নিচে হওয়ায় আলোকস্বল্পতার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পুরো নর্থ সাউথই স্থাপত্যকলার এক দারুণ নিদর্শন। ক্যাফেটেরিয়ার ওপরের দিকের ভেন্টিলেশন সিস্টেম ও উঁচু ছাদে আলোর ব্যবস্থা দারুণ। ঠিক কত ছাত্রছাত্রী এক সময়ে এখানে বসতে পারে তা বলা কষ্টকর। তবে তাতেও অপ্রতুল হওয়ায় পরবর্তী সময়ে রিক্রিয়েশন সেন্টারকে একত্র করা হয় ক্যাফেটেরিয়ার সঙ্গে। এখন মূল ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার ভেন্ডরদের স্টল, বসার জায়গা এবং বাড়তি অংশে কেবল বসার জায়গা আছে। 

নর্থ সাউথের এ ক্যাফেটেরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজম্ব। তবে খাবার প্রস্তুত ও বিপণনকারীদের নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবসা করার জন্য কেবল সেটুকুর অনুমতি দেয়া হয়। তবে নর্থ সাউথের ক্যাফেটেরিয়ার খাদ্যের উচ্চমূল্য নিয়ে নানা সময়েই অভিযোগ ছিল ছাত্রছাত্রীদের। সম্প্রতি ক্যাফেটেরিয়ার খাদ্য বিক্রেতা (ভেন্ডর) কাসুন্দিকে নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে ছোটখোটো একটি আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ ছিল অতিরিক্ত মূল্য ও খাবারের নিম্নমান। নর্থ সাউথে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের পদক্ষেপ বিরল। সেটা ঘটল ক্যাফেটেরিয়াকে কেন্দ্র করে।

নর্থ সাউথের ক্যাফেটেরিয়া নিয়ে এখানকার শিক্ষার্থীদের নানা স্মৃতি রয়েছে। খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আড্ডা দেয়ার অন্যতম জায়গা ক্যাফেটেরিয়া। আগে স্থানসংকুলান হতো না। এখনো কষ্ট হয় তবে রিক্রিয়েশন সেন্টারকে যুক্ত করার কারণে স্থানাভাব কিছুটা কমেছে। আড্ডা, গল্প, গানের স্থান হয়েছে এটি। ক্যাফেটেরিয়ার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো ক্যাফেটেরিয়ার দেয়ালে দুটো বড় আকারের টেলিভিশন রয়েছে। বিশেষত ক্রিকেট খেলার সময় ভিড় জমে যায় সেখানে। বাংলাদেশের বহু ম্যাচে নর্থ সাউথের ক্যাফেটেরিয়া থেকে শোনা গেছে উল্লাসের শব্দ। বহুদিন পর ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে দাঁড়ালে সে স্মৃতি মনে পড়ে। তখন অনুপমের গানের কথা কানের পাশে বাজতে থাকে, আর এই কাফেতারিয়ায়, আবার যদি ফেরা যায়!

মাহমুদুর রহমান, সাবেক শিক্ষার্থী, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন