
খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় থেকে পঞ্চম শতকের গ্রিসের কথা ভাবলে মাথায়
কী আসে? বিশ্বের প্রভাবশালী একদল মানুষ প্রচার করছেন দর্শন, বিজ্ঞান ও ইতিহাস। যারা
পাল্টে দিচ্ছেন হাজার বছরের ভবিষ্যৎ। শুধু দর্শনই নয় শিল্পকলা-সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রেও
তারা ছিলেন এগিয়ে।
পরবর্তী পতনের কালে গ্রিস সেই ঐতিহ্য ধরে
রাখতে না পারলেও বিশ্বকে চিরকালের মতো ঋণী করে দিয়েছে। দর্শন ও শিল্পকলার নিদর্শন এখনো
প্রভাব জাগিয়ে রেখেছে। তেমন ভাস্কর্য এবারের শিরোনাম।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০ বছর ধরে ভ্যাটিকান মিউজিয়ামের সংগ্রহে রয়েছে তিনটি ভাষ্কর্য। একটা ঘোড়ার মাথা, একজন দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তি ও এক বালক। শিগগিরই সেই শিল্পকর্ম ফেরত যাচ্ছে আদিভূমি গ্রিসে।
এথেন্সের শাসক পেরিক্লিসের সময়ে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪৭ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩২ অব্দের মাঝামাঝি নির্মিত এই ভাস্কর্যগুলো। নিদর্শনগুলো দেবী এথেনার মন্দিরে ছিল। পরবর্তীতে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। বর্তমানে রয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র শহর ভ্যাটিকানে। তবে গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সেগুলো গ্রিসের হাতে তুলে দেয়ার ব্যাপারে চুক্তি করেছে ভ্যাটিকান। চুক্তি অনুযায়ী, চলতি মাসের ২৪ তারিখ আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন ভাস্কর্য ফিরে পেতে যাচ্ছে এজিয়ান সাগরের তীরবর্তী দেশটি।
ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস ২০২১ সালে
গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের প্রধান দ্বিতীয় ইয়েরোনিমোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্পর্কের
ধারাবাহিকতায় গত বছর ডিসেম্বরে ভ্যাটিকান ভাস্কর্যগুলো ফেরত দেয়ার কথা ঘোষণা করেছিল।
এথেন্সের কাছে বিশেষ উৎসবের মাধ্যমে ফেরত দেয়া হবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
চুক্তিতে দ্বিতীয় ইয়েরোনিমোসের পক্ষ থেকে
উপস্থিত ছিলেন পাপামিক্রুলিস এমানুইল। তিনি এ চুক্তিকে ঐতিহাসিক হিসেবে চিহ্নিত করেন।
প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, পোপ ফ্রান্সিসকে বাকিরাও অনুসরণ করবেন।
এই চুক্তি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ওপর বাড়তি চাপ
তৈরি হতে পারে। এই জাদুঘরে রয়েছে মন্দিরের অমূল্য ধ্বংসাবশেষ। যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে
যুক্তরাজ্য গ্রিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মন্দিরের মার্বেলগুলো বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে
সংরক্ষিত। উনিশ শতকে এগুলো নিয়ে আসা হয় ব্রিটেনে। গ্রিসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে ব্রিটিশ
মিউজিয়ামের ডেপুটি ডিরেক্টর জোনাথন উইলিয়ামস গত আগস্টে মার্বেলে অংশীদারত্ব ভাগাভাগির
ইঙ্গিত দেন। গত মাসে জর্জ অসবোর্ন বিবিসি রেডিওতে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গ্রিস ও যুক্তরাজ্যের
যৌথ মালিকানায় প্রদর্শিত হবে মার্বেলগুলো।’
এদিকে মঙ্গলবারের চুক্তির পর কার্ডিনাল ভেরগেজ
দাবি করেন, মার্ভেলের ফেরত দেয়া দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন,
‘পোপের আর্ট সংগ্রহ মানুষ, বিশ্বাস ও চার্চগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনে ভূমিকা রাখতে
পারে।’
সব মিলিয়ে ভ্যাটিকানের এই সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক
ঐতিহ্য রক্ষায় একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক মিউজিয়াম
থেকে ফেরত গেছে বিভিন্ন দেশের শিল্পকর্ম। ভবিষ্যতে এই প্রচেষ্টা উন্মুক্ত থাকলে জাতিরাষ্ট্রগুলো
নিজেদের ঐতিহ্য থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিক নির্দেশনা দিতে পারবে।