৫ লাখ শিক্ষার্থীর অভিভাবককে বীমার আওতায় আনতে চাই

বীমা খাতের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই

সার্বিকভাবে বর্তমানে দেশের বীমা খাত এগিয়ে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোয়ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশাবাদী। বীমা একটি সেবামূলক ব্যবসা। এখানে সুনামের প্রয়োজন রয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে যত বেশি সেবা দিতে পারছে, সেই প্রতিষ্ঠান তত বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও খাতের সব কোম্পানি সমানভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। তবে কিছু কোম্পানি বেশ ভালো করছে। তার মধ্যে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স অন্যতম।

প্রায়ই বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকের বীমা দাবির অর্থ পরিশোধ না করার অভিযোগ শোনা যায়। কারণে কি দেশের বীমা খাতের প্রতি এখনো মানুষের আস্থার সংকট রয়ে গেছে?

যে দেশ বীমা শিল্পে যত বেশি উন্নত সেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে তত শক্তিশালী। বিদেশে একজন মানুষের অনেকগুলো বীমা থাকে। এমনকি প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গেরও বীমা করা হয়ে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। তার ওপর রয়েছে আস্থার সংকট। আস্থার সংকটের কারণ কী? দেশে বর্তমানে ৩৫টি জীবন বীমাসহ মোট ৮১টি বীমা কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে কিছু কোম্পানি সময়মতো বীমা দাবির অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। ধরুন একজন পলিসিহোল্ডার ১০ বছর বা ১২ বছর মেয়াদি বীমা স্কিমটি ঠিকভাবে পরিচালনা করল। সময়ের পর তার এককালীন বোনাসসহ সেই অর্থ ফেরত পাওয়ার কথা। তখন যদি সেই গ্রাহকের অর্থ পেতে দেরি হয় কিংবা হয়রানির স্বীকার হতে হয়, তাহলে আস্থার সংকট তো তৈরি হবেই।

রকম একজন গ্রাহকের মাধ্যমে আরো ১০০ জন গ্রাহকের কাছে বিষয়টি প্রচার হয়। এরপর ওই নতুন ১০০ জনও আর বীমা খাতের প্রতি আস্থা রাখতে পারেন না। কভিড মহামারী চলাকালে ২০২০ সালে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স লাখ ৮২ হাজার গ্রাহকের ৮০০ কোটি টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করেছে। ২০২১ সালে ৯০০ কোটি এবং ২০২২ সালে হাজার ৫১ কোটি টাকার বীমা দাবির অর্থ পরিশোধ করেছি আমরা। এর বিপরীতে আমরা ভালো পরিমাণে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি।

২০১৯ সালে আমাদের ব্যবসা ছিল হাজার কোটি টাকার। ২০২০ সালে মহামারীর মধ্যেও আমরা রেকর্ড পরিমাণ প্রিমিয়াম আয় করেছি। কারণে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের বীমা কোম্পানির মধ্যে প্রথম হয়েছি, পুরস্কারও পেয়েছি। আমরা গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বীমা দাবির অর্থ পরিশোধ করেছি। এতে গ্রাহকদের মধ্যে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রতি আস্থা সৃষ্টি হয়েছে, সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সব কোম্পানি যদি কৌশল অনুসরণ করে তাহলে দেশের বীমা খাত এগিয়ে যাবে।

বীমা দাবির অর্থ পরিশোধ করতে না পারার কারণ কী?

বীমা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি। কমপক্ষে ১০ বছর থেকে ২১ বছর মেয়াদে বীমা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ১০ বছর মেয়াদ পূর্তির আগ পর্যন্ত প্রিমিয়াম আসতে থাকে। এখন কোনো কোম্পানি যদি এটিকে তার আয় মনে করে এবং গ্রাহককে তা আর ফেরত দিতে হবে না বলে মনে করে খরচ করতে থাকে তাহলে তো সমস্যা। অনেক সময় আমরা দেখি যে প্রথম বছরে ১০০ টাকা প্রিমিয়াম আয় করতে গিয়ে কোনো কোনো কোম্পানি ১১০-১২০ টাকা পর্যন্ত খরচ করে ফেলে। কারণে মেয়াদ শেষে গ্রাহকের বীমা দাবির অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। সরকার ২০১০ সালে বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) প্রতিষ্ঠা করে। খাতটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে বিভিন্ন আইন বিধি-বিধানও তৈরি করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধিমালা অনুসারে প্রতিটি কোম্পানি এক বছরে যে প্রিমিয়াম আয় করে তার একটি অংশ সে খরচ এবং একটি অংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। এর মধ্যে বিধিমালা অনুসারে রিজার্ভ ফান্ডের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ অর্থ সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। আমরা রিজার্ভ ফান্ডের ৪০ শতাংশ অর্থ ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করেছি। ভারতের নিয়ম হলো ৭০ শতাংশ ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হয়। আমাদের এখানে দেখা যায় অনেকে রিজার্ভ ফান্ডের ১০ শতাংশ বা ২০ শতাংশ অর্থও ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করছে না। এর পরিবর্তে তারা বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করছে, যেখানে থেকে সেভাবে রিটার্ন আসছে না। এতে করে তারা সময়মতো গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এক্ষেত্রে আমি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অনুরোধ করব তারা যেন বিষয়টি আরো একটু কঠোর নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসে।

সম্ভাবনার তুলনায় দেশের বীমা খাত কতটুকু এগোতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের বীমা খাত যতটুকু এগোনোর কথা ছিল সেটি পারেনি। ২০১০ সালের আগে বীমা খাত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বীমা অধিদপ্তরের অধীনে ছিল। সে সময় খাতে তেমন একটা জবাবদিহি ছিল না। তখন এক কোম্পানি থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে বড় পদ নিয়ে অন্য কোম্পানিতে চলে যাওয়ার উদাহরণও দেখা গেছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে খাত অনেক পেছনে পড়ে ছিল। বর্তমান সরকার খাতটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। কারণে আমি সরকারকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আস্থার সংকটের কারণে বীমা খাতে মেধাবী কর্মী খুঁজে পাওয়ার কঠিন। এমনকি বেশি বেতন দিতে চাইলেও অনেক সময় ইমেজ সংকটের কারণে এখানে শিক্ষিতরা আসতে চান না। যদিও বীমা হচ্ছে সবচেয়ে সেবামূলক স্বাধীন পেশা। 

এবারের বীমা দিবসকে ঘিরে আপনাদের প্রত্যাশা কী?

২০২০ ২০২১ সালে কভিড মহামারীর প্রভাবে আমরা প্রত্যাশা অনুসারে অগ্রসর হতে পারিনি। এবারের বীমা দিবসে সেরা বীমা প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যারা বীমা শিল্পে দাবি পরিশোধে স্বচ্ছতা, আর্থিকভাবে শক্তিশালী এবং সবকিছু মিলিয়ে যারা সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে তাদের প্রধানমন্ত্রী পুরস্কৃত করবেন। এজন্য এবারের বীমা দিবস অন্যবারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাই?

বেসরকারি খাতের প্রথম জীবন বীমা কোম্পানি হিসেবে ১৯৮৫ সালে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে আমরা দেশের অন্যতম শীর্ষ জীবন বীমা কোম্পানি। আমাদের গ্রাহক সংখ্যা ৬০ লাখেরও বেশি। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের সব গ্রাম বাড়িতে আমাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। আগামী এক বছরে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর অভিভাবককে বীমার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।  টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া সবখানেই ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উপস্থিতি রয়েছে। গ্রাহকদের মধ্যে আমাদের সুনাম রয়েছে। আমাদের কর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া আছে যাতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বীমা দাবির অর্থ পরিশোধ করা হয়। সুনামটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এছাড়া বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরো নতুন নতুন পণ্য আনার পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন